--- বিজ্ঞাপন ---

সাম্রাজ্যবাদের পকেটে আরব লীগ

0

বিশ্বের প্রমাণিত তেলভান্ডারের প্রায় ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রন করে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো। আমেরিকার তেলের নিয়ন্ত্রন রয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। বাকিগুলো অন্যান্য দেশের। তেলের কারনে মার্কিনীরা অন্ধ হয়ে উঠেছে। এ তেলক্ষেত্র দখল করার মানসে মুসলিম দেশগুলোর উপর চেপে বসেছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। গনতন্ত্র উদ্ধারের নামে ২০০৩ সালে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন, ২০১১ সালে লিবিয়ার গাদ্দাফিকে নির্মমভাবে হত্যা। মার্কিনীরা এসব দেশের সমাজ বদল করতে চাইছে। তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটছে। একের পর এক মুসলিম দেশ ধংস হয়ে যাচ্ছে। ইরাক, লিবিয়া, মিসর, সিরিয়া প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। তিউনেশিয়াতে হামলা হয়েছে। সৌদিআরব- কুয়েতও বাদ যায় নি বোমা হামলা হতে। অথচ কত সুন্দর ছিল এসব দেশ। এক সময়ে এসব রাষ্ট্রের কারনে বিশ্বে মাথা উচু করে মুসলিমরা। এখন মুসলমানে হাতে মারা যাচ্ছে মুসলমান। শুধু মুসলমান না ভিন্ন অনেক ধর্মের লোকের নির্মম প্রানহানির ঘটনা ঘটছে। বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। পাকিস্তানে স্কুলে ঢুকে নিস্পাপ শিশুদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিদিন মুসলিম বিশ্বে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ী হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদপত্রের শিরোনাম হচ্ছে আল কায়েদা, আইএস, বোকো হারাম। সবগুলো সন্ত্রাসবাদী সংগঠণ। আর সবগুলোর নিয়ন্ত্রক মুসলমান নামধারীরা। কিন্ত কোন মুসলমান কি এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে পারে। ইসলাম ধর্ম কি এ কথা বলে। যদি তা না হয় তাহলে তাদের চালাচ্ছে কে। ইসলাম ধর্মের নামে যে সহিংসতা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে তার রোষানল থেকে কি তারা বাদ যাবে, যারা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ইন্ধন দিচ্ছে। যোগান দিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। কি করছে আরব লীগ। ইসলামী দেশগুলোর মধ্যে সৌহার্দ্য, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কথা দিয়ে যে আরব লীগের যাত্রা শুরু হয়েছিল সে লীগ এখন সাম্রাজ্যবাদের পকেটে ঢুকে গেছে। এমনতর প্রশ্ন অহরহ ঘুরে ফিরছে। ১৯৪৫ সালের ২২ মার্চ ৬টি বৃহত মুসলিম রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত হয় আরব লীগ। মিশর, ইরাক, জর্দান, লেবানন, সৌদিআরব ও সিরিয়া। আরব লীগের প্রধান দুটি উদ্দেশ্য ছিল। মুসলিম যে সব দেশ আরব লীগের সদস্য তাদের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের ও সৌহার্দের সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং আরব লীগের সদস্য দেশগুলির প্রত্যেকের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ব্যাপারে সচেতন থাকা। ৬টি নিয়ে যাত্রা শুরুর পর এখন আরব লীগের সদস্য সংখ্যা ২২। আলজেরিয়া, বাহরাইন, কেমারোজ, দিজিবুটি, মিশর, ইরাক, জর্দান, কুয়েত, লেবানন, মিউরেতেনিয়া,লিবিয়া মরক্কো, ওমান, প্যালেস্টাইন, কাতার, সৌদিআরব, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, তিউনেশিয়া, ইউনাইটেড আরব আমিরাত, ইয়েমেন। ৪৫ এর পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত আরব লীগের ভুমিকা বরাবরই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। যে উদ্দেশ্য নিয়ে আরব লীগের যাত্রা শুরু হয়েছিল তার কোন কিছুরই প্রতিফলন নেই আরব লীগের। সাম্রাজ্যবাদের তাবেদারি ছাড়া আরব লীগের নেতারা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য কিছুই করে নি। ফলে তাসের ঘরের মতোন একের পর এক সাম্রাজ্যবাদ ধসে পড়ে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ঢুকে যায় মুসলিম রাষ্ট্র গুলোতে। সাম্রাজ্যবাদের ছত্রছায়ায় সৃষ্টি হয় আল কায়েদা, আল শাবাব, ইসলামিক স্টেট, বোকো হারামের মতো সন্ত্রাসবাদী দলের।
আরব লীগের উদ্দেশ্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর জন্য হলেও কি সিদ্ধান্ত নেবে তার নির্দেশনা আসে আমেরিকার পেন্টাগন থেকে। বিশেষ করে গত ২০১১ সালের পর থেকে আরব লীগ পাকাপোক্তভাবে সাম্রাজ্যবাদের পকেটে ঢুকে যায়। তথাকথিত গণ-বিদ্রোহের নামে একের পর এক মুসলিম রাষ্ট্রে চলে ধঙসযজ্ঞ। বলা হয়, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম চলছে। ইরাক, লিবিয়ার উপর চলে নির্মম ধংসযজ্ঞ। দুটো দেশের উপর যে ধংসলীলা চালানো হয় তাতে প্রাণ হারায় দেশের রাষ্ট্রনায়কসহ হাজার হাজার মানুষ। সাম্রাজ্যবাদের কবলে পড়ে দুটো দেশ শেষ হয়ে যায়। অথচ ইসলামের কত নির্দশন, কত স্থাপনা ছিল এ দুটো দেশ ঘিরে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র আর বোমা এক নিমিষেই খতম করে দিলে সবকিছু।
বর্তমান বিশ্বে আমেরকিা, ফ্রান্স, ব্রিটেন ‘মানবাধিকার’ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। প্রতিবছর আমেরিকা থেকে প্রকাশিত হয় মানবাধিকার রির্পোট। অথচ গত এক দশকে ইরাক,, লিবিয়া, প্যালেস্টাইন, লেবানন, মিশর, সিরিয়ার উপর দিয়ে কি চলছে তা তাদের মানবাধিকারে পড়ে না। তাদেরই সৃষ্ট বাহিনী এসব দেশে লাখ লাখ মানুষ মারছে আর লাখ লাখ মানুষ পঙ্গু হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে তা তাদের হিসেবের বাইরে। দেশগুলির প্রধান প্রধান শহরগুলো এখন মৃতনগরী। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর অভ্যন্তরীন বিষয়গুলো নিয়ে নাক গলাচ্ছে। আর তাদের দোসররা একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। আরব লীগ এখন তাদের সদস্যদের অনেককেই পছন্দ করে না। সিরিয়াকে আরব লীগ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। অথচ এ সিরিয়া আরব লীগ প্রতিষ্ঠার অন্যতম কান্ডারি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইশারায় কাজ করছে আরব লীগ। নতুন নতুন অস্ত্র সরঞ্জামে ভরপুর আইএস, আল কায়েদা, বোকো হারাম। যোগানদাতা মার্কিনীরাই। নতুন নতুন সমরাস্ত্র পাচ্ছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দোসরদের কাছ থেকেই। আরব লীগ সিরিয়াকে নিয়ে যে নাটক করেছে তাতে বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে, এ লীগ এখন আমেরিকার পকেটে। সিরিয়ায় ক্ষমতা বদলের পর ২০১২ সালে এটি জায়েজ করার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব আনা হয়। আমেরিকাসহ তার অন্যান্য মিত্র দেশগুলির তোড়জোড় চালায়। রাশিয়া ও চীন এসব কান্ডের জন্য ভেটো দেয়। কিন্ত কে শুনে কার কথা। লিবিয়া নিয়েও একই কান্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটে। মার্কিনীরা ইসরাইলে শান্তি প্রতিষ্ঠা জিইয়ে রাখার জন্য মুসলিম দেশগুলো একের পর এক ধংস করে দিচ্ছে। অথচ বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলো নীরব।
প্রশ্ন জাগে মিশরে কি গনতন্ত্র ফিরেছে। গনতন্ত্রের জোয়ারের নামে একের পর এক যে সব মুসলিম রাষ্ট্র ধংস করা হচ্ছে তার পরিবর্তে কি গনতন্ত্র আসছে। নাকি সাম্রাজ্যবাদী দোসররা ক্ষমতায় বসার জন্য লড়ছে। কিছুই হচ্ছে না। যেসব দেশে মার্কিনী ও তার দোসররা সমাজ বদলের নামে আগ্রাসন চালাচ্ছে সেসব দেশে ক্ষমতাসীন আর মাকির্নীদের দোসরদের লড়াই জিইয়ে চলেছে হত্যার পর হত্যা। মাঝখানে ফায়দা লুটছে সাম্রাজ্যবাদী দোসররা। তাদের কাছে তেলটাই বড়। তেলের নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে মার্কিনীরাই সৃষ্টি করেছে আইএস, আল কায়েদার মতোন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। মুসলমানদের দিয়েই হত্যা করা হচ্ছে মুসলমানদের। যারা নির্বিচারে এ কাজটি করে যাচ্ছে তাদের নেতারা সম্পদের পাহাড় গড়ছে। ধর্মের নামে রক্তের এ হোলিখলা কবে বন্ধ হবে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে কবে মুক্তি পাবে মুসলিম বিশ্ব। এ প্রশ্ন এখন সারা পৃথিবীর মুসলমানদের। ### ২৬.১১.১৯

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.