--- বিজ্ঞাপন ---

চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প-২ এর কাজ এগুচ্ছে দ্রুত গতিতে

0

চট্টগ্রামের  সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে বর্তমান সরকারের আমলে নেয়া ৪,৪৯১ কোটি টাকার বৃহৎ প্রকল্প ‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২য় পর্যায়’ এর কাজ দ্রুত সমাপ্তির পথে।  প্রকল্পের ৫৬ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের চরম পানি সংকট লাঘবের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামবাসীকে দেয়া তার নির্বাচনী অঙ্গীকার হিসেবে এ বৃহৎ প্রকল্পটি একনেকে  অনুমোদন দেন। প্রকল্পটির সমাপ্তির মেয়াদকাল ২০২২ সাল ধরা হলেও পুরোদমে কাজ চলায় নিদ্দিষ্ট সময়ের দু’বছর আগেই এর কাজ সমাপ্ত হয়ে যাবে আশা করছেন প্রকৌশলীরা। বাংলাদেশ সরকার, জাপানের জাইকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করেছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরে পানির চাহিদার শতকরা ৭০ ভাগ সরবরাহ করতে পারছে ওয়াসা। বর্তমান প্রকল্প ‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার -২য় পর্যায়’এর কাজ যত দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে ততই চট্টগ্রামের মানুষের চরম পানি সংকট কেটে যাবে। সেদিকে দৃষ্টি রেখে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি মনিটরিং করছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। মন্ত্রী সর্বশেষ গত ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রামে ওয়াসার অপর একটি প্রকল্প পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রকল্পের চুক্তি সম্পাদনা অনুষ্ঠানে পুনরোল্লেখ করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি (সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট গোল) টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালের আগেই অর্জন করতে ঘোষণা দিয়েছেন। এই এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের অন্যতম লক্ষ্য জনসাধারণকে নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহ শতভাগ নিশ্চিত করা। তাই বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছুতে হলে হাতে নেয়া এসব প্রকল্প কোন প্রকার সময়ক্ষেপন না করে নিদ্দিষ্ট সময়ে  দ্রুত সমাপ্ত করার নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি।

সূত্রে জানা গেছে, এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্তির পরপরই স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম চট্টগ্রামে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া চট্টগ্রামবাসীকে নির্বাচনী অঙ্গীকার সমূহ বাস্তবায়নকল্পে চট্টগ্রামের সকল প্রকল্প যথাসময়ে সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহকে তাগিদ দেন। এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে  স্থানীয় প্রতিনিধিদের সাথে এনিয়ে গোলবৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি কোনপ্রকার কালক্ষেপন না করে সকল প্রকল্পসমূহ নিদ্দিষ্ট সময়ে শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহকে কঠোর নির্দেশনা দেন।

‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২য় পর্যায়’প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মহোদয় মো. তাজুল ইসলামের নির্দেশনায় ওয়াসার সকল প্রকল্পের কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার জন্য আমরা প্রতিটি কর্মদিবসে রাতদিন কাজ করে যাচিছ। কাজের গতি বজায় রেখে ‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প  শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২’প্রকল্পের কাজ দ্রুততার সাথে চলছে। ট্রান্সমিশন পাইপ লাইনের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। অন্যান্য কাজের প্রায় ৫৬ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই শেষ করতে পেরেছি। নিদ্দিষ্ট সময়ের দু বছর আগেই ২০২০ সাল নাগাদ এ গুরুত্বপূর্ণ  প্রকল্পটিও সমাপ্ত করতে পারবো আশা করছি। এর আগের প্রকল্প ‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প  শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ’ এর প্রথম ধাপের কাজটি  নিদ্দিষ্ট সময়ের আগেই ২০১৬ সালের নভেম্বরে  আমরা সম্পন্ন করতে সক্ষম হই।

প্রকল্প কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরে বসবাসকারী অধিবাসীকে বর্তমানে দৈনিক পানির চাহিদা ৪২ কোটি লিটারের বিপরীতে ওয়াসা সরবরাহ করছে ৩৫ কোটি লিটার । ২০২১ সাল নাগাদ এ পরিমাণ ৫৪ কোটি লিটারে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। সুপেয় পানি সরবরাহ করছে ওয়াসার বর্তমান পানি সরবরাহ বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৯ সালে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার এর প্রথম পর্যায়টি শেষ হলে এটি উদ্বোধন করেন ২০১৭ সালের ১২ মার্চ। বর্তমানে ২য় ধাপের কাজ চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরায় আগের দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি শোধনাগারের পার্শ্বে আরও একটি  ১৪ কোটি  লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগার নির্মান করা হচ্ছে । এ ২য় পর্যায়ের প্রকল্পটি সমাপ্ত হলে চট্টগ্রাম মহানগরীর শতভাগ সুপেয় পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে এবং ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাবে।

‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২য় পর্যায় ’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, চলতি মাসে আমরা প্রকল্প কাজের ৫৬ শতাংশ শেষ করেছি। এ প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম মহানগরীকে ৫৯টি মিটারিং এরিয়াতে বিভক্ত করা হবে। যার ফলে চট্টগ্রাম মহানগরীতে একটি আধুনিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা  হবে।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম শহরের পানি সরবরাহের উৎস মুলত: দুটি।  এক. ভূ-গর্ভস্থ পানি দুই. ভূ-উপরিস্থ পানি। ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস হলো দুটি। হালদা নদী এবং কর্ণফুলী নদী। বর্তমানে মোহরা পানি শোধনাগার ও মদুনাঘাট পানি শোধনাগারে হালদা নদী হতে এবং শেখ হাসিনা পানি শোধনাগারে কর্ণফুলী নদী হতে পানি উত্তোলন করে ট্রিটমেন্ট করে সুপেয় এবং নিরাপদ পানি চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করা হ”েছ। বর্তমান নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার ২য় পর্যায়ের কাজ এবং ভান্ডালজুরী পানি সরবরাহ প্রকল্পে কর্ণফুলী নদী পানি উত্তোলন করে ট্রিটমেন্ট করে সুপেয় পানি চট্টগ্রাম শহরে সরবরাহ করা যাবে বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসা শতকরা ৮৮ ভাগ পানি ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে আহরণ করে সরবরাহ করে থাকে।  ভূ-গর্ভস্থ পানির বেলায় চট্টগ্রাম শহর এই ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল নয়।  ভূ-গর্ভস্থ পানিতে রয়েছে অত্যধিক আয়রণ এবং পানির স্তর দ্রুত নীচে নেমে যাচ্ছে। তাছাড়া  ভূ-গর্ভস্থ মাটির সাথে পাথর থাকায় গভীর নলকূপ খনন কষ্টসাধ্য। বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসা মাত্র শতকরা ১২ ভাগ পানি ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে আহরণ করে সরবরাহ করে থাকে। ২০২১ সালে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহ চালু হলে চট্টগ্রাম ওয়াসা আর ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করবেনা।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, পানি শোধনাগার প্রকল্পের ২য় পর্যায়ের অংশে ৬৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে । নগরীর  উত্তর, মধ্য এবং পূর্বাংশে ডিসট্রিক্ট  মিটারিং পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে গোটা শহরে পানি সরবরাহ নিশ্চিত হবে।  ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ‘কর্ণফুলী ওয়াটার সাপ্লাই ফেজ-২ শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার -২য় পর্যায়’  প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর পাস হয়।  স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন চট্টগ্রাম ওয়াসা  নগরীতে পানি সরবরাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রকল্পটির অবস্থান, পানি শোধনাগার রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়, সরবরাহ লাইন সমগ্র চট্টগ্রাম শহরে বিস্তৃত। প্রকল্প ব্যয়: সর্বমোট ৪৪৯১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা । যার মধ্যে (জিওবি) এ প্রকল্পে  বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যয় হবে ৮৪৪ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা, চট্টগ্রাম ওয়াসা ২৩ কোটি ০৭ লক্ষ টাকা এবং  দেশ জাপানের জাইকা ৩,৬২৩ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা প্রকল্প সাহায্য প্রদান করবে। প্রকল্পের মেয়াদ: এপ্রিল ২০১৩ থেকে জানুয়ারী ২০২২ইং। প্রকল্পের ডিজাইন, কনষ্ট্রাকশন, সুপারভিশন ও আনুসাঙ্গিক কাজের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে  জাপানের  “এনজেএস কনসালটেন্ট কোং লিঃ, জাপান।

## চট্টগ্রাম, ০২.১২.২০১৯ ইং।

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.