--- বিজ্ঞাপন ---

রুবাইয়াত শারমিন রুম্পাকে ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়

0

ভারতে যখন ধর্ষকদের এনকাউন্টারের খবর গণমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছিল বাংলাদেশে তখন আরেকটি মর্মান্তিক হত্যা ও ধর্ষনের খবর দেশবাসী জানলো। রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পাকে (২১) । তার লাশ পাবার পর ধারনা করা হচ্ছে তাকে ধর্ষনের পর ভবন থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে।

গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোড আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে দুই ভবনের মাঝখান থেকে রুম্পার মরদেহ  অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ক্রাইমসিন ইউনিট বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। পরিচয় জানতে ওই তরুণীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করে ক্রাইম সিন ইউনিট। পরে ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, ‘নিহতের নাম রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা। তার বাবার নাম রোকন উদ্দিন, তিনি হবিগঞ্জে পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন। নিহত রুম্পার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। বর্তমানে রাজধানীর মালিবাগের শান্তীবাগ এলাকায় থাকতেন। রুম্পার পরিবার মরদেহের ছবি দেখে শনাক্ত করা হয়।’ উদ্ধারের পর  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে লাশ প্রেরন করা হয় ময়না তদন্তের জন্য। দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, ধর্ষণের পর রুম্পাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ইনজুরিগুলো দেখে মনে হচ্ছে উঁচু কোনো জায়গা থেকে পড়ে রুম্পা মারা গেছে। তার শরীর থেকে আলামত সংগ্রহ করে ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে।
পরিবার কি বলে..

রুম্পা ২৫৫ নম্বর শান্তিবাগে সপরিবার থাকতেন। এক ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি বড় ছিলেন। তার বাবা রোকনউদ্দিন হবিগঞ্জের একটি পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ পরিদর্শক। রুম্পা দুটি টিউশনি শেষ করে গত বুধবার সন্ধ্যায় বাসায় ফেরেন। পরে তিনি কাজ আছে বলে বাসা থেকে বের হন। বাসা থেকে নিচে নেমে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন ও পরা স্যান্ডেল বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে এক জোড়া পুরোনো স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে তিনি বেরিয়ে যান। কিন্তু রাতে আর বাসায় ফেরেননি। স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি। পরে খবর পেয়ে রমনা থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে রুম্পাকে শনাক্ত করেন স্বজনরা।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রুম্পার লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর শুক্রবার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের বিজয়নগরে রুম্পাকে দাফন করা হয়।
অন্যদিকে রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় তার সহপাঠীরা সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে রাজধানীর বেইলি রোডে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। সিদ্ধেশ্বরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাসের ফটক থেকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আধা ঘণ্টার এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়। তারা ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে যান। সেখানে তারা মানববন্ধন করে রুম্পা ‘হত্যার’ সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।
এর আগে গত বুধবার রাত ১১টায় ৬৪/৪ নম্বর সিদ্ধেশ্বরীর সামনের রাস্তা থেকে অজ্ঞাত হিসেবে রুম্পার লাশ উদ্ধার পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে স্বজনরা রমনা থানায় তোলা ছবি দেখে রুম্পার লাশ শনাক্ত করেন।
পুলিশ বলছে, রুম্পাকে সিদ্ধেশ্বরীর কোনো ভবন থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, তরুণীর মেরুদণ্ড, বাঁ হাতের কনুই ও ডান পায়ের গোড়ালি ভাঙা। মাথা, নাক, মুখে জখম এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ছিল। বুকের ডান দিকে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে।
কীভাবে রুম্পা সিদ্ধেশ্বরীর ওই ভবনে গেলেন তা এখনো রহস্যে ঘেরা। এ ঘটনায় এখনো নির্দিষ্ট করে কাউকে সন্দেহ করতে না পারলেও বন্ধুদের কারো মাধ্যমেই এ হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে ধারণা পরিবারের। নিহত রুম্পার জানিয়েছেন, টিউশনি শেষ করে বাসায় এসে টাকা-পয়সা, মোবাইল সব রেখেই বের হয়েছে। পায়ে হিল ছিল সেটাও খুলে স্লিপার পরেই বের হয়েছে। একটি ফোনকল পেয়েই বেরিয়ে যান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম জানান, যে জায়গায় এ ঘটনা, তার আশপাশে বেশ কিছু ছেলে ও মেয়েদের হোস্টেল রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। ঘটনার দিন একটি ফোনকল পেয়ে রুম্পা বাসা থেকে বের হয়েছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছিলেন, সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সবদিক বিবেচনায় নিয়েই তদন্ত চলছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা যায়নি।

রুম্পা কীভাবে মারা গেছে, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে। কারও সঙ্গে দেখা করার জন্য সিদ্বেশ্বরী এলাকায় গিয়েছিলেন কিনা তা যাচাই করা হচ্ছে।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। নিশ্চিতভাবে তার মৃত্যুর কারণ এখনই বলা সম্ভব নয়। আমাদের তদন্ত চলছে। রুম্পা কারও সঙ্গে দেখা করার জন্য বা কেউ তাকে ডেকে এনেছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এস এম শামীম।

তিনি বলেন, আমরা রুম্পার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পেয়েছি। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। কেন তিনি সেদিন ওই জায়গায় এসেছিলেন তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। যেখানে রুম্পার মরদেহ পাওয়া গেছে, তার পাশে তিনটি ভবন রয়েছে। এই তিন ভবনে কারও সঙ্গে রুম্পার পরিচয় ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.