--- বিজ্ঞাপন ---

ঘোষণা দিয়েও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আনেনি চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শিল্প গ্রুপ

0

বর্তমান পেঁয়াজের সংকটের সময়ে দেশের বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ ঢাক ডোল পিটিয়ে যেভাবে পেঁয়াজ আমদানির কথা বলেছিল বাস্তবে সেই চিত্র ভিন্ন। চাহিদা অনুপাতে শিল্প গ্রুপগুলো খুবই কম পরিমাণে পেঁয়াজ এনেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে ।

প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দিয়ে অনুমতিপত্র নিলেও সেই পেঁয়াজ এখনো আসেনি। সিটি গ্রুপের পেঁয়াজও আসেনি। শুধু বিএসএম সিন্ডিকেট নামে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ৮০০ টন পেঁয়াজ আনার অনুমতিপত্র নিয়ে ৫৮০ টন এনেছে। মেঘনা গ্রুপ কামাল ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে তুরস্ক থেকে ৭৮০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এনেছে। ওয়াসিফ ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানও ৫০০ টনের মতো পেঁয়াজ এনেছে। তুরস্ক, চীন, মিশর, পাকিস্তান, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান, শ্রীলংকা থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র নিয়ে রেখেছে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান।

সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ মূলত গত ২৬ নভেম্বর থেকে কিছুটা বেড়েছে। এর আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ তেমন আসেনি। ২৬ নভেম্বর ৬৯৬ মেট্রিক টন, ২৭ নভেম্বর ছুটির দিন, ২৮ নভেম্বর ১২৩৯ মেট্রিক টন, ২৯ নভেম্বর সাপ্তাহিক বন্ধ, ৩০ নভেম্বর ৫২০ মেট্রিক টন, ১ ডিসেম্বর ৮৬৪ মেট্রিক টন, ২ ডিসেম্বর ৪৬৪ মেট্রিক টন এবং ৩ ডিসেম্বর ৭১৩ মেট্রিক টন পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়েছে।

দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা আছে প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত ও আমদানি করা পেঁয়াজ মিলিয়ে প্রতিদিন বাজারে সরবরাহ ছিল ৭ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন। কিন্তু গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে চরম ঘাটতি দেখা দেয়।

টেকনাফ স্থল বন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা মো. আবছার উদ্দিন জানান, মিয়ানমার থেকে অক্টোবর মাসে ২০ হাজার ৮৪৩ মেট্রিক টন ২৭ কেজি, নভেম্বর মাসে ২১ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন ৪৫২ কেজি, ডিসেম্বর মাসের প্রথম তিন দিনে ২ হাজার ২৯৭ টন ৪৮১ কেজি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৩ হাজার ৫৭৩ মেট্রিক টন ১৪১ কেজি।

এর আগে, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের দেশে পেঁয়াজের সংকট হয়েছিল। সে বছরের পুরো সময়ে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল ১১ হাজার ৯৬৭ মেট্রিক টন ৯৮ কেজি। এরপর ২০১৪-২০১৫ থেকে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর পর্যন্ত গত চার বছরে টেকনাফ ¯’লবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি হয়নি বলে জানিয়েছেন শুল্ক কর্মকর্তা আবছার উদ্দিন। দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তদারেরা জানান, খাতুনগঞ্জে এখন প্রতিদিন ৪৫০ থেকে ৫০০ মেট্রিক টন আমদানি করা পেঁয়াজ ঢুকছে। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কম। তুরস্ক-মিশর-পাকিস্তান ও চীনের পেঁয়াজ বেশি।

চট্টগ্রামের সামুদ্রিক বন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান বুলবুল বলেন,  গত ২৯ সেপ্টেম্বরের পর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র ইস্যু হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৫২৬ মেট্রিক টনের। কিন্তু পেঁয়াজ এসেছে ১৩৩টি ছাড়পত্রের বিনিময়ে মাত্র ১২ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন। অনুমতিপত্র অনুযায়ী যদি সব পেঁয়াজ ঢুকত, তাহলে বাজারে সরবরাহ ঠিক থাকত।

গত বুধবার ৪ ডিসেম্বর খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে মিয়ানমারের পেঁয়াজ মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, চীনের হলুদ রঙের বড় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, একই দেশের লাল রঙের পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯৫ টাকা, পাকিস্তান ও মিশরের পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

খুচরা দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, বুধবার তুরস্কের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ১০০ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৮০ টাকা ও ২০০ টাকা এবং ভারতের পেঁয়াজ ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ভোক্তা অধিকার পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি নাজের হোসাইন বলেন, পেঁয়াজের সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয়। দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে বিক্রী না করে আগের আমদানীকৃত পেঁয়াজেই নজর তাদের। এজন্য দাম তেমন একটা কমছেনা।

এদিকে চেম্বার সভাপতির নিজস্ব উদ্যোগে পেঁয়াজ বিক্রয় কেন্দ্র চালুর পর এবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে নামমাত্র মূল্যে থানাসমূহের সামনে পেঁয়াজ বিক্রীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে থানা প্রাঙ্গনে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া পেঁয়াজের দামের লাগাম টানতে পুলিশের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

পুলিশ পরিবারের সংগঠন পু্লশি নারী কল্যাণ সমিতি এসব পেঁয়াজ সংগ্রহ করে সাধারণ মানুষের কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে কোতোয়ালী, খুলশী, পাহাড়তলী, চান্দগাঁও ও ইপিজেড থানায় পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। প্রত্যেক  থানা প্রাঙ্গনে এক টন করে প্রতিদিন পাঁচ টন পেঁয়াজ বিক্রি হবে।

পুলিশের এ কার্যক্রম এক সপ্তাহ ধরে চলবে। পুলিশের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মো. মাহাবুবুল আলম। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। যারা পেঁয়াজের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে তারা কখনও ব্যবসায়ী হতে পারে না। আমি তাদের ব্যবসায়ী বলি না। পুলিশের পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ তাদের গালে চপেটাঘাত বলে মনে করি।

## শহীদ, ০৬.১২.২০১৯ ইং।

 

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.