--- বিজ্ঞাপন ---

ভয়ংকর সংঘাতের দিকে এগুচ্ছে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল, প্রস্তুত ইরানও

0

ইসরাইল ও মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ শিয়া মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইরানের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। গত ৭ ডিসেম্বর  ইসরাইলের দৈনিকসমূহে সংবাদ শিরোনামে সেদেশের কট্টর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এর ইরানকে লক্ষ্য করে শত শত টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার  হুমকির সংবাদ ফলাও করে প্রকাশিত হয়। ইসরাইলী মন্ত্রীর  ঐ হুমকিটি বেশ তাৎপর্যবহ।

ইরানের উপর হামলায় ইসরাইল সৌদি আরব, আমিরাতের সহায়তা পাবে

ঐ হুমকিতে বলা হয়েছে , ইরানের উপর ভবিষ্যৎ অভিযানে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সুন্নী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ সৌদি আরব এবং আরব আমিরাতও যোগ দেবে। সৌদি আরব সেদেশের রাষ্ট্র মালিকানার তেল স্থাপনা আরামকো’র আবকায়িক ও খুয়ারিস তেল শোধনাগারে গত ১৪ সেপ্টেম্বরের মারাত্নক ড্রোন হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে আসছে। ইরান অবশ্য হামলায় তার সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানালেও আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইরানকে এজন্য দায়ী করছে। হামলায় সৌদি তেল উৎপাদন বহুলাংশে বন্ধ হয়ে যায়। ইসরাইলের  পররাষ্ট্রমন্ত্রীর  হুমকির পর আরও হুমকি দিল ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাফতালি বেনেত। পরদিন রোববার ৮ ডিসেম্বর দেয়া তার হুমকিতে বলা হয়েছে সিরিয়ার মাটি হবে ইরানের জন্য ভিয়েতনাম।

এখানে বলা প্রয়োজন, ভিয়েতনাম যুদ্ধ শুরু হয় ’৬০ এর দশকে দীর্ঘ পনের বছর পর ১৯৭৫ সালের এপ্রিলে  ভিয়েতনামী মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে চরম পরাজয়ের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখান থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। ইসরাইলও ইরানকে সে যুদ্ধের কথা পুন:স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। ঐদিন রোববার  ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতনিয়াহু মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে একই হুমকিতে আরও নতুন মাত্রা যোগ করে বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলো যা ই বলুক না কেন ইরানকে কোনভাবেই পরমাণু অস্ত্র সক্ষমতা অর্জন করতে দেবেনা ইসরাইল। তিনি বলেন, ইসরাইলের নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টি রেখে যা যা করার সবই করতে বধ্যপরিকর ইসরাইল।

ইরানের কড়া জবাব

এদিকে,  ইরানের নিউজ সাইট ‘পার্সটুডে’র সংবাদ বুলেটিনে এর কড়া জবাব দিয়েছে ইরান। এতে বলা হয়েছে, ইহুদিবাদী ইসরাইল যদি ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের উপর কোনো রকমের আগ্রাসন চালানোর মতো ভুল করে তাহলে তেহরানের পক্ষ থেকে এমন জবাব দেয়া হবে যাতে দখলদার শক্তি তার কাজের জন্য অনুশোচনা করতে বাধ্য হয়। ইহুদিবাদী ইসরাইলের দু জন মন্ত্রী সম্প্রতি ইরানের ওপর হামলার যে হুমকি দিয়েছেন তার জবাবে তেহরান একথা বলল।

ইহুদিবাদী ইসরাইলের যুদ্ধবাজ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের উপরে শত শত টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মারার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তেহরান রেড লাইন অতিক্রম করলে আমেরিকা, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাহায্যে ইরানের ওপর টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র মারা হবে। ইতালির সংবাদপত্র ‘কুরিয়ার ডেলা সেরা’কে গত ৭ ডিসেম্বর শনিবার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই হুমকি দেন। ইসরায়েল কাৎজ বলেন, ইরানের ওপর বোমা বর্ষণের বিষয়টিও ইসরাইলের বিবেচনায় রয়েছে।

ইসরাইলের যুদ্ধবাজ এ মন্ত্রী বলেন, ইরান যদি রেড লাইন অতিক্রম করে তাহলে তারা সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং আমেরিকার ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্টকে মোকাবেলা করতে বাধ্য হবে যে ফ্রন্ট ইরানের উপরে শত শত টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করবে।

রেড লাইনের ব্যাখ্যায় ইজরায়েল কাৎজ বলেন,“আমরা ইরানকে পরমাণু অস্ত্রের মজুদ গড়ে তোলার সুযোগ দেব না। ইরান যদি তা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বশেষ উপায় হিসেবে আমরা সামরিক ব্যবস্থাকে বেছে নেব।”

ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে তাদের পরমাণু কর্মসূচি একবারেই শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বা আইএইএ’র সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি সই করা দেশ হচ্ছে ইরান কিন্তু ইসরাইল তাতে সই করেনি। এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল হচ্ছে একমাত্র শক্তি যারা পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী।সোমবার ৯ ডিসেম্বর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি বলেন, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান তার সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য ইসরাইলি হামলার জবাব দিতে একটুও দ্বিধা করবে না এবং এক মুহূর্তের জন্য আপস করবে না। বরং এ ধরনের বোকামিপূর্ণ আগ্রাসনের কঠোর ও দাঁতভাঙা জবাব দেবে ইরান।

ইরান ক্রমাগত নিজস্ব অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন জোরদার করেছে

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা  ৬ ডিসেম্বর এক রিপোর্টে জানিয়েছে, ইরান গোপণে ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছে। ৬০০ কিলোমিটার পাল্লার এ ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র ইরান বাগদাদের নিকট থেকে ইসরাইলের জেরুসালেমে নিশানা করতে গত নভেম্বর মাসে মহড়ায় পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায়। এর আগে ইরান গত মাসে নৌ বাহিনীতে নিজেদের তৈরী  সাফিনেহ শ্রেণীর গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার নামিয়েছে যা হরমুজ প্রণালীতে পশ্চিমা যুদ্ধজাহাজকে পাল্লা দিতে প্রস্তুত।

ত্রিমারান ডিজাইনে তৈরী ৩ হাজার টনের ডেস্ট্রয়ার ৪০ নট গতির এবং এতে ৯৬টি ভার্টিক্যাল লাঞ্চ সিস্টেম রয়েছে। ২টি হেলিকপ্টার বহনে সক্ষম ডেস্ট্রয়ারটি রাডার ফাঁকি দিতে পারে বলে দাবী দেশটির। এর আগে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান কয়েকটি সামরিক অস্ত্রের ব্যাপক উৎপাদন শুরু করেছে। ইরানের বিশেষজ্ঞরা সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি এসব অস্ত্রের ডিজাইন ও পরীক্ষা করেছেন। ব্যাপকভাবে এসব অস্ত্র তৈরির ফলে ইরানের স্থল ও আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অনেক বাড়বে।

ইরানের প্ররিক্ষামন্ত্রী  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হোসেইন দেহকান সম্প্রতি নতুন অস্ত্রের গণ উৎপাদনের ঘোষণা দেন। নতুন অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ফজর-৫ গাইডেড আর্টিলারি রকেট, কাঁধে রেখে ছোঁড়ার রকেট মিসাক-৩, একটি ৪০ মিলিমিটার গ্রেনেড লাঞ্চার, একটি ক্যালিবার বন্দুক এবং পিস্তল। অস্ত্রের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান জেনারেল দেহকান বলেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সামরিক বাহিনীর যুদ্ধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি জানান, গত তিন বছরে ১১৫ ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও যন্ত্রপাতি তৈরি করেছে ইরান এবং এগুলো সামরিক বাহিনী ব্যবহার করছে। আগের বছরগুলোর তুলনায় এ পরিমাণ শতকরা ৬৯ ভাগ বেশি। রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করে ইরানি সামরিক বিশেষজ্ঞরা প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী করায় জেনারেল দেহকান তাদের প্রশংসা করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান জরুরি প্রয়োজনের অস্ত্রপাতি তৈরি করে সামরিক খাতে এক ধরনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।#

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.