--- বিজ্ঞাপন ---

ভারতের আসাম উত্তাল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ

0

নাগরিকত্ব বিল নিয়ে উত্তাল এখন ভারতের বিশাল একটি অংশ। ভারতের সেভেন সিস্টার বলে খ্যাত রাজ্যগুলোতে বাংলাভাষার মানুষের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে আসামে। ভারতের কেন্দ্রের সরকার জোর করে নাগরিকত্ব বিল চাপিয়ে দেয়ার কারনে মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। এটি সামাল দিতে আইন শৃঙখলা বাহিনীতকে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। স্কুল-কলেজ ছুটি। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে তাই এখন সবাই দেখছে। এখন পযর্ন্ত আহত হয়েছে ৩০ জন।

ভারতীয় মিডিয়া আনন্দবাজার জানায়, নাগরিকত্ব বিল বিরোধী আন্দোলনে গুয়াহাটি-সহ রাজ্যের শহরে-গ্রামে চলল মিছিল, বিক্ষোভ, অবরোধ। নেসো, আসু, কেএমএসএস-সহ বিভিন্ন সংগঠনের ডাকা বন্‌ধে সমর্থন জানায় কংগ্রেস ও বামদলগুলিও। গুয়াহাটিতে একের পর এক আক্রমণ চলল মন্ত্রী-সাংসদদের বাড়িতে, কনভয়ে। রুক্মিণীগাঁওয়ে বিক্ষোভকারীদের হটাতে পুলিশকে শূন্যে গুলি চালাতে হয়। বিভিন্ন স্থানে চলল লাঠি, কাঁদানে গ্যাসও। জখম শতাধিক। ভাঙা হয়েছে গাড়ি, বাস।

প্রতিবাদকারীরা দিসপুরে বিধায়ক-আবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে অসমে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। কেএমএসএস নেতা অখিল গগৈ আগামী কালও রাজ্য অচল করার ডাক দেন। রাজ্যের বিদগ্ধ সমাজ সব সরকারি অনুষ্ঠান বয়কটের ডাক দিয়েছে।

এ দিন, শিলঘাট, টংলা, ধেমাজিতে অবরোধে আটকে পড়ে বেশ কয়েকটি ট্রেন। জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়কগুলিতে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। ১৪৪ ধারা অমান্য করে প্রতিবাদকারীরা রাস্তায় নামে। ভাঙা হয় বাস-গাড়ি। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও সিআরপির সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। দু’দিনের টানা বন্‌ধে কাজিরাঙায় বহু পর্যটক আটকে পড়েন। কটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা অনশন শুরু করেছেন। ডিব্রুগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আলফার পতাকা ওড়ানো হয়েছে। নিউ গুয়াহাটি স্টেশনে আন্দোলনে যোগ দেন রেলকর্মীদের একাংশও। অসম আন্দোলনের শহিদের পরিবার আজ সরকারি শহিদ দিবসের অনুষ্ঠান বয়কট করেছে। তার মধ্যেই গুয়াহাটির বরাগাঁওয়ে শহিদ স্মারক ক্ষেত্রের শিলান্যাস করে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ বলেন, ‘‘আমি কোনও ভুল করে থাকলে ইতিহাস ক্ষমা করবে না। আমাদের সরকার অসমের ভূমিপুত্রদের কোনও ক্ষতি করবে না।’’

বরাকে অবশ্য বন্‌ধের বিশেষ প্রভাব পড়েনি। তবে বিল-বিরোধী কয়েকটি সংগঠন বরাকের তিন জেলাতেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় পিকেটিঙে নামে। পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে চারশোরও বেশি পিকেটারকে গ্রেফতার করেছে। দু’-এক জায়গায় লাঠিচার্জও করতে হয়।

অন্য দিকে, মণিপুরে ইনার লাইন পারমিট (আইএলপি) চালুর ঘোষণায় মেঘালয়েও একই দাবিতে জোরদার হল আন্দোলন। এ দিকে, নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা করাকে ‘অর্বাচিনতা’ বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করায় বিভিন্ন সংগঠন রাজ্যপাল তথাগত রায়ের পদত্যাগ দাবি করেছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ আইএলপি-র ‘আনন্দে’ আজ সরকারি ছুটিই ঘোষণা করে দেন।

আসাম এনআরসি-র কাট অফ তারিখ কী?
আসামের অবৈধ অভিবাসী স্থির করার জন্য ২৪ মার্চ, ১৯৭১ দিনটিকে স্থির করা হয়েছে। ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তির ভিত্তিতেই এই তারিখ নির্দিষ্ট। ওই দিনটিকেই আসাম এনআরসি-র কাট অফ তারিখ নির্ধারিত করা হয়। যেসব আবেদনকারীরা ওই দিনে বা তার আগে নিজের বা পূর্বপুরুষের উপস্থিতি প্রমাণ করতে পেরেছেন, তাঁদের এনআরসি অনুসারে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ধরা হবে। দেশে প্রথম এনআরসি তৈরি হয়েছিল আসামে, ১৯৫১ সালে। এবারের এনআরসি-তে ১৯৭১ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে যোগ্য ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। ১৯৫১ সালের এনআরসি-তে যাঁদের নামছিল তাঁরা এবং তাঁদের উত্তর প্রজন্ম আপডেটেড এনআরসি-তে স্বাভাবিক ভাবেই স্থান পাবেন। একই সঙ্গে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাত্রি পর্যন্ত যাঁদের বা যাঁদের উত্তরসূরীদের নাম ভোটারলিস্টে রয়েছে তাঁরাও এনআরসি-তে স্থান পাবেন।

গত ৩১ অগাস্ট চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ১৯ লক্ষ আবেদনকারীর নাম বাদ গিয়েছে। তাঁরা এর বিরুদ্ধে রাজ্যের ফরেনার্স ট্রাইবুনালে আবেদন করার অনুমতি পাবেন।

নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল এই আলোচনায় কীভাবে ঢুকে পড়ল?
অমিত শাহ এর আগে বলেছেন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) সারা ভারতে এনআরসি লাগুর আগে পাশ করানো হবে। সংসদের এবারের শীতকালীন অধিবেশনেই ক্যাব আনার কথা।

এ বছরের গোড়ায় রাজ্যসভায় আনার আগেই বিল তামাদি হয়ে যায়। এই বিলে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্থান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা ওই দেশগুলির ৬টি সংখ্যালঘু (অমুসলিম) সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ ছাড় দেবার কথা বলা হয়েছে বিলে। ওই ছটি ধর্ম হল, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং ক্রিশ্চান।

আসাম এনআরসি-তে এর কী প্রভাব পড়বে?
উত্তরপূর্ব ভারতের প্রভাবশালী অংশ এবং রাজনৈতিক দলগুলি নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধী এবং শুরু থেকেই এ ব্যাপারে তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছেন। তাঁদের দাবি, ক্যাব ও এনআরসি পরস্পরবিরোধী। বিল যদি পাশ হয়, আসামে তার সবচেয়ে প্রভাব পড়বে এনআরসি তালিকাছুট হিন্দুদের উপরে। তাঁরা নির্দিষ্ট নিয়মের সুযোগবলে নাগরিকত্ব অর্জন করে ফেলবেন, অন্যদিকে মুসলমানরা বিদেশি হিসেবে গণ্য হবেন। এরকম পরিস্থিতিতে বর্তমান এনআরসি অর্থহীন হয়ে পড়বে।

বর্তমান এনআরসি নিয়ে বিজেপি অখুশি কেন?
হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, বর্তমান এনআরসি রাজ্য সরকারের পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয় কারণ এতে বাদ দেওয়া উচিত এমন বহু মানুযের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং পাশাপাশি যথার্থ ভারতীয় নাগরিকরা বাদ পড়েছেন। রাজ্য সরকার এবং বিজেপির রাজ্য শাখা চূড়ান্ত এনআরসি নিয়ে তাদের অসন্তোষ ব্যক্ত করেছে এবং বারবার প্রাক্তন এনআরসি কো অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার সমালোচনা করেছেন। প্রতীক হাজেলাকে সুপ্রিম কোর্ট বদলিও করে দিয়েছে।

চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশের দিন রাজ্যের বিজেপি সভাপতি রঞ্জিত দাস বলেন, সরকার এর আগে আসামে যত বিদেশি নাগরিক রয়েছে বলে ধারণা করেছিল, ১৯ লক্ষ সংখ্যাটা তার চেয়ে অনেকটাই কম। তিনি বলেন, ভূমিপুত্র এবং যথার্থ নাগরিকদের নাম বাদ পড়েছে।###১১.১২.১৯

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.