--- বিজ্ঞাপন ---

ইসরাইলের ফর্মুলায় যাচ্ছে কি ভারত, কে এই অমিত শাহ…

0

ভারতের অস্থিরতার মূলে একজন অমিত শাহ। বলা হয়ে থাকে অমিত শাহ ইসরাইলের অন্যতম বন্ধু। ইসরাইলের সাথে বিজেপি সরকারের সাথে সম্পর্ক একটাই ভালো যে যা বলাবাহুল্য। মোদি সরকারের আমলে ভারত ইসরাইল থেকে অস্ত্র কেনার সাথে সাথে নানা প্রশিক্ষনও গ্রহণ করছে। ভারত কি ইসরাইলকে মডেল হিসেবে নিয়েছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে খোদ ভারতে। কারন ভারতে ধর্মনিরপক্ষেতার বিষয়টি দীর্ঘ দিন ধরে চর্চা হয়ে আসছে। হঠাৎ করে অমিত শাহ-মোদী ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিচালিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তাই ভারতে ফুসে উঠেছে সাধারন মানুষ। বর্তমানে আন্দোলন যে পয়ায়ে গেছে তাতে ভারত শুধু রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আন্দোলন দমাতে শক্তি প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ভারতের সুশিল সমাজ আশঙ্কা করছে এ আন্দলনের জেরে ভারতের খন্ডিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে। আরএসএস এর নাথুরাম গডসে হত্যা করেছিল মহাত্ম গান্ধীকে। গান্ধী সকল ধর্মের মানুষের জন্য এক ভারতের আন্দোলনে নেমেছিলেন। এ কারনে নাথুরাম গডসে তাকে হত্যা করেন। এখন আরএসএসএর অমিত শাহ শুরু করেছেন আরেক খেলা।

কে এই অমিত শাহ

উইকিপিডিয়া মতে, অমিত শাহ ১৯৬৪ সালের ২২ অক্টোবর মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মেছিলেন এক গুজরাটি হিন্দু বেনিয়া পরিবারে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সাথে বাল্যকাল থেকেই যুক্ত ছিলেন অমিত শাহ। পরে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সাথে বালক অবস্থা থেকেই যুক্ত ছিলেন।  আহমেদাবাদে কলেজে পড়াকালীন সময়ে এর “স্বয়ংসেবক” (স্বেচ্ছাসেবক) হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মাধ্যমে ১৯৮২ সালে নরেন্দ্র মোদির সাথে পরিচয় ঘটে তার। তখন মোদি আরএসএসের “প্রচারক” ছিলেন ও এর নগর শাখার যুব কর্মসূচির দায়িত্বে ছিলেন।

২০১৪ সাল থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।  সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে গান্ধীনগরের লোকসভা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৭ সাল পর্যন্ত গুজরাটের রাজ্যসভা সদস্য ছিলেন। অমিত শাহকে বিজেপির প্রধান কৌশলী ও নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।কলেজে থাকাকালীন সময়ে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এর ছাত্রশাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৮ বছর বয়সে ছাত্র সংগঠনটিতে নিজের একটা স্থান করে নেন। নিরলসভাবে কাজ করার পর ১৯৮৭ সালে তাকে বিজেপিতে পাঠানো হয়। ১৯৯৭ সালের উপনির্বাচনে  সারখেজ থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন যার কিছু অংশ আহমেদাবাদে পড়েছিল। ১৯৯৮, ২০০২ ও ২০০৭ সালের নির্বাচনেও সেখান থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে আসনটি বিলুপ্ত হলে এর অদূরে অবস্থিত নারানপুরা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন ও ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সেখানকার বিধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিনি মোদির মন্ত্রীসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অমিত শাহ ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতের সবচেয়ে বড় ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ উত্তর প্রদেশের দায়িত্বে ছিলেন। নির্বাচনে বিজেপি ও এর জোটসঙ্গীরা অভাবনীয় ফলাফল করে ও প্রদেশের ৮০ টি আসনের ৭৩ টি জয়লাভ করে, যেটি ছিল তাদের সেরা ফলাফল। এর দরুন অমিত শাহ রাজনৈতিকভাবে গুরুত্ব লাভ করেন ও ২০১৪ সালের জুন মাসে দলটির জাতীয় কমিটির সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন।  ২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে সাংগঠনিক ও প্রচারাভিযান কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন। তার মেয়াদকালের প্রথম দুই বছরের মধ্যে ২০১৪ সালে বিজেপি মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর ও ঝাড়খণ্ড, ২০১৬ সালে আসামে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয় কিন্তু ২০১৫ সালে হেরে যায় দিল্লি ও পূর্বাঞ্চলীয় বড় রাজ্য বিহারে। ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও দলের আধুনিক ঘাঁটি গুজরাটে বিজেপির জয়ের কারিগর হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে। সে বছরে বিজেপি তুলনামূলকভাবে ছোট রাজ্য মনিপুরের বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রথমবারের মত মনিপুরের মসনদে বসতে সক্ষম হলেও অকালী-বিজেপি জোট তুলনামূলকভাবে বড় রাজ্য পাঞ্জাবের নিয়ন্ত্রণ হারায়। ২০১৮ সালে দলটি ছত্তিসগড়, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে পরাজিত হয়। এর পরের বছর সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ৩০৩ টি আসনে বিজয়ী হয়, যা অমিত শাহকে দলটির সবচেয়ে সফল সভাপতির খেতাব এনে দেয়।

ব্যাকফুটে অমিত শাহ

ভারতীয় মিডিয়া বলছে, দেশজুড়ে এনআরসি বিরোধী তীব্র বিক্ষোভের জেরে এখন রাজনৈতিকভাবে ব্যাকফুটে বিজেপি সভাপতি তথা মোদি সরকারের second-in-command অমিত শাহ। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। দিল্লির রামলীলা ময়দানের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন এনআরসি সরকারের বিবেচনায় নেই। তখন প্রশ্ন উঠেছিল তাহলে সংসদের যে ঘোষণা করেছিলেন সরকার দেশজুড়ে এনআরসি করবে তার কি হবে। বিভ্রান্তি কাটাতে এবার মুখ খুলেছেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেই। সংবাদ সংস্থা এএনআই কে সাক্ষাৎকার দিয়ে অমিত শাহ বলেছেন মোদীজি ঠিকই বলেছেন। এখনো পর্যন্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক এবার সংসদে এনআরসি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি তাই দেশজুড়ে এনআরসি নিয়ে বিতর্ক অর্থহীন। কারণ এই মুহূর্তে এনআরসি নিয়ে সরকার কোনো আলোচনা করছে না।

অমিত শাহের এ কথাতে বিতর্ক থামছে না বিরোধীরা বলছেন অমিত শাহের কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে এখন সরকার এনআরসি নিয়ে আলোচনা করছে না ঠিক, তাই বলে ভবিষ্যতে যে করবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়। বিশেষ করে কিছুদিন আগে তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে যেখানে বলেছেন দেশজুড়ে এনআরসি হবেই। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন যে, এন আর সি, সি এ এ এবং এনআরপি কে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। এগুলিকে আলাদাভাবে দেখা ঠিক হবে না। সরকার আগামী দিনে দেশজুড়ে এনআরসি করতে পারে। আর সরকার যে একের পর এক ধরনের বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসছে তার পিছনে আরেকটা উদ্দেশ্য আছে তা হলো মন্দা অর্থনীতিতে জিনিসের দাম এর দিকে লোকের নজর যাবে না। অন্য সমস্যার দিকে দৃষ্টি পড়বে না । অমিত শাহ অবশ্য দাবি করেছেন এনআরসি ও এনআরপি দুটো এক রকম  না আলাদা। দুটোর উপযোগিতা ভিন্ন । এনআরপি হচ্ছে যাতে সঠিক লোকের কাছে সুবিধা পৌঁছে দিতে পারে। কিন্তু কংগ্রেস সাংসদ এনআরসির ভেতর এনআরপি ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। এনআরপি  আদতে হয়ে যাচ্ছে এনআরসির প্রথম ধাপ। প্রাথমিক তথ্য সেখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে যে, মোদি দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ থামাতে অবস্থান নিয়ে এনআরপি’র কথা বলছেন।  পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সিপিএম কংগ্রেস বিজেপি বিরোধী দলগুলোর নেতারা মনে করছেন আসলে বিজেপি সরকার এনআরসি নিয়ে পিছু হটেছে। যদি একবার এনআরপি তৈরি হয়ে যায় এনআরসি করাটাও কোন মুশকিল এর কাজ হবে না। এদিকে বিজেপি সভাপতি অমিত সাহা দাবি করেছেন, নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য, নেওয়ার জন্য নয়। এনআরপি ও বুঝতে পারবে। কিন্তু বিরোধীরা কিছুতে মানছেন না। ভবিষ্যতে বিজেপি আবার তাদের আগের পরিকল্পনা কার্যকর করতে উদ্যোগী হবে। শেষ পর্যন্ত এনআরসির দিকে এগোতে পারে মোদি সরকার । তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  এনআরসি বি রোধী আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন যে আন্দোলন এখনও চলছে।##২৮.১২.১৯

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.