--- বিজ্ঞাপন ---

যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ইরানী কমান্ডার জেনারেল সোলেমানি নিহতের ঘটনা, মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের মুখোমুখি

0

ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী সেনা অধিনায়ক কাসেম সোলেইমানিকে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহতের ঘটনার পরিণতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে গভীর উদ্বেগ শুরু হয়েছে। এদিকে তেহরান কঠোরতম প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামিনি বলেছেন, “অপরাধীদের জন্য ভয়াবহ প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।” অপরদিকে  ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদেল আল মাহদি আমেরিকার এ হামলাকে বাগদাদের স্বার্বভৌমত্বের লংঘন বলে এর কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব এন্টোনিও গুটারেস সকল পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা সহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এ খবর দিয়েছে।
ইরানের ফার্স বার্তা সংস্থা তেহরান থেকে প্রেরিত খবরে শুক্রবার (৩ জানুয়ারী )জানিয়েছে, ইরানের সেনা কমান্ডার মেজর জেনারেল সাইয়েদ আবদুলরহিম মুসাভি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন, ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারী গার্ড কোর (আইআরজিসি) কুদস ফোর্স কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাশেম সোলেইমানির উপর সন্ত্রাসী কায়দায় হামলাকারীরা পার পাবেনা। তাদেরকে এর পরিণাম ভোগ করতেই হবে। ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাতামি বাগদাদে এই সংঘটিত এই ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ডে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়া হবে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনি
ইরানের সেনাবাহিনীর (ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ডস বা আইআরজিসি) মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রমজান শরিফ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ইরান এবং আমেরিকা তোমরা কড়া জবাবের জন্য অপেক্ষা করো।” দেশের বাইরে ইরান যে তার সামরিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে চলেছে তার পেছনে মূল ব্যক্তিটি ছিলেন কাসেম সোলেয়মানি। লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেনের মত দেশগুলোতে তেহরান-পন্থী যে শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো এখন পরাক্রমশালী হয়ে উঠেছে, তিনিই ছিলেন এর রূপকার । ফলে বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের এক নম্বর টার্গেট ছিলেন ইরানি এই জেনারেল।

ইরানের নেতৃত্ব ঘটনায় শোকাহত

বিগত কয়েকমাস ধরেই আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছিল । পরিস্থিতি আরও ঘোরাল করে গত রবিবার বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালায় ইরানপন্থী মিলিশিয়া। তারপর শুক্রবার ভোরে আচমকা বাগদাদ এয়ারপোর্ট বিমান হামলা চালায় আমেরিকা। তিনটি রকেট ছোঁড়া হয়। এর ফলে ইরান এলিট গার্ড ফোর্সের প্রধান কমান্ডার কাশেম সোলেমানি, ডেপুটি কমান্ডার আবু মেহদি আল-মুহানদিস ও বিমানবন্দরের প্রোটোকল অফিসার মহম্মদ রেদা-সহ আটজনের মৃত্যু হয়।

পাল্টা জবাব দিতে ইরানের জরুরী বৈঠক

ইরাকের আধাসামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র জানান, ইরান থেকে কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির ইরাকে আসার কথা ছিল। সেই কারণে বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন শীর্ষস্থানীয় প্রোটোকল অফিসার মহম্মদ রেদা। তিনি যখন ইরান এলিট গার্ড ফোর্সের প্রধান সুলেমানি ও মুহানদিসকে নিয়ে বিমানবন্দরে থেকে বের হচ্ছিলেন তখন কার্গো হলের কাছে তিনটি রকেট এসে পড়ে। এর ফলে ঘটনাস্থলে থাকা সবার মৃত্যু হয়েছে। কয়েকটি দেহ এমনভাবে পুড়ে গিয়েছে যে শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ হামলার অনুমতি দেন

সংবাদদাতারা বলছেন, ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ বুশ এবং তারপর বারাক ওবামা পর্যন্ত তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেও পরিণতির কথা ভেবে পরে পেছপা হয়েছিলেন। এ কারণে সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং আগামি নির্বাচনে ডেমোক্রাটদের সম্ভাব্য প্রার্থী জো. বাইডেন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘একটা বারুদের বাক্সে ডিনামাইট ছুঁড়ে দিয়েছেন।’ তিনি বলেছেন, “আমরা হয়তো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন বড় ধরনের যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে গেলাম।”

পূর্বসূরিরা যে ঝুঁকি নিতে চাননি, ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন কেন তা নিলেন?
পেন্টাগনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে তা হলো, কাসেম সোলেইমানি ইরাকে মার্কিন কূটনীতিক এবং সৈন্যদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিল, সুতরাং আগে থেকেই তাকে হত্যা করে সেসব পরিকল্পনা নস্যাৎ করা হলো। তবে এমন সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই হত্যাকাণ্ড ঘটালেন যখন কিছুদিন আগেই তার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট অনুমোদন করেছে মার্কিন কংগ্রেস, এবং এক বছরের কম সময়ের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ফলে বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি দেখতে শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের সাংবাদিক জুলিয়ান বার্গার লিখেছেন, নভেম্বরে নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সোলেইমানিকে হত্যার এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি মনে করছেন, ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার যে ঘটনা বারাক ওবামার দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের প্রচারণায় প্রধান একটি বিষয় হয়ে উঠেছিল, মি. ট্রাম্প হয়তো সেরকমই কিছু করতে চেয়েছেন। বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন বলছেন, অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করে আমেরিকানরা এখন কেন এই ‘ট্রিগার’ টিপলো, তার কারণ হয়তো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেছেন এই হত্যাকাণ্ডের যে ঝুঁকির মাত্রা তার চেয়ে সুবিধার পাল্লা ভারি। “তিনি (প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প) হয়তো মনে করেছেন অব্যাহত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় ইরান দুর্বল-একঘরে হয়ে পড়েছে। দেশের ভেতরে যে প্রচণ্ড অসন্তোষ শুরু হয়েছে তাতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া হলেও, ইরান বড় কোনো হুমকি তৈরি করতে পারবে না।”

আরও সৈন্য পাঠাচ্ছে আমেরিকা

এদিকে এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সোলেইমানি হত্যার পর ঐ অঞ্চলে আরও ৩,৫০০ সৈন্য কুয়েতের ঘাঁটিতে পাঠাচ্ছে। এ নিয়ে এতদঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যসংখ্যা প্রায় ৭০ হাজারে দাঁড়াবে। ইরাকে গত সপ্তাহের ৭৫০ সৈন্যসহ মোট সংখ্যা সেখানে ৫,২০০তে গিয়ে দাঁড়াল।

ড্রোন হামলায় সোলেইমানির গাড়ীটি ছাই হয়ে যায়

পাকিস্তান, তুরস্ক ও ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে। পাশ্ববর্তী দেশ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ ঘটনায় দেশটির গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান উভয়কে পরিস্থিতি যাতে আরও বিস্তৃতি না ঘটে সেজন্য সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন।তুরস্কসহ অন্যান্য দেশও একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ ইসরাইল এর প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতনিয়াহু এ ঘটনায় গ্রীস থেকে সফর সংক্ষিপ্ত করে  দেশে ফিরে বলেন, হামলাটি সঠিক হয়েছে। সোলেমানি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় হুমকি ছিল।

ইরানের সেনাবাহিনীর (ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ডস বা আইআরজিসি) মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রমজান শরিফ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ইরান এবং আমেরিকা তোমরা কড়া জবাবের জন্য অপেক্ষা করো।” দেশের বাইরে ইরান যে তার সামরিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে চলেছে তার পেছনে মূল ব্যক্তিটি ছিলেন কাসেম সোলেয়মানি। লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেনের মত দেশগুলোতে তেহরান-পন্থী যে শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো এখন পরাক্রমশালী হয়ে উঠেছে, তিনিই ছিলেন এর রূপকার । ফলে বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের এক নম্বর টার্গেট ছিলেন ইরানি এই জেনারেল।
ইসলামিক স্টেটের পুনরুত্থান ঘটছে ইরাকে?
সংবাদদাতারা বলছেন, ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ বুশ এবং তারপর বারাক ওবামা পর্যন্ত তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেও পরিণতির কথা ভেবে পরে পেছপা হয়েছিলেন। এ কারণে সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং আগামি নির্বাচনে ডেমোক্রাটদের সম্ভাব্য প্রার্থী জো. বাইডেন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘একটা বারুদের বাক্সে ডিনামাইট ছুঁড়ে দিয়েছেন।’ তিনি বলেছেন, “আমরা হয়তো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন বড় ধরনের যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে গেলাম।”

ইরাকের  প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদি

পূর্বসূরিরা যে ঝুঁকি নিতে চাননি, ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন কেন তা নিলেন?
পেন্টাগনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে তা হলো, কাসেম সোলেইমানি ইরাকে মার্কিন কূটনীতিক এবং সৈন্যদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিল, সুতরাং আগে থেকেই তাকে হত্যা করে সেসব পরিকল্পনা নস্যাৎ করা হলো। তবে এমন সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই হত্যাকাণ্ড ঘটালেন যখন কিছুদিন আগেই তার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট অনুমোদন করেছে মার্কিন কংগ্রেস, এবং এক বছরের কম সময়ের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ফলে বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি দেখতে শুরু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের সাংবাদিক জুলিয়ান বার্গার লিখেছেন, নভেম্বরে নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সোলেইমানিকে হত্যার এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি মনে করছেন, ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার যে ঘটনা বারাক ওবামার দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের প্রচারণায় প্রধান একটি বিষয় হয়ে উঠেছিল, মি. ট্রাম্প হয়তো সেরকমই কিছু করতে চেয়েছেন। বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন বলছেন, অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করে আমেরিকানরা এখন কেন এই ‘ট্রিগার’ টিপলো, তার কারণ হয়তো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেছেন এই হত্যাকাণ্ডের যে ঝুঁকির মাত্রা তার চেয়ে সুবিধার পাল্লা ভারি। “তিনি (প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প) হয়তো মনে করেছেন অব্যাহত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় ইরান দুর্বল-একঘরে হয়ে পড়েছে। দেশের ভেতরে যে প্রচণ্ড অসন্তোষ শুরু হয়েছে তাতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া হলেও, ইরান বড় কোনো হুমকি তৈরি করতে পারবে না।”

কি করতে পারে ইরান
‘দুর্বল ইরান’ তেমন কিছু করতে পারবে না বলে মি. ট্রাম্প হয়তো যে ভরসা করছেন, বাস্তবে তা হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিবিসির জেরেমি বোয়েন। “কূটকৌশল বা পরিকল্পনাকারী হিসেবে মিস্টার সোলেইমানি ছিলেন খুবই ক্ষুরধার। সুতরাং তাকে কখনো হত্যা করা হলে, কি করতে হবে তেমন পরিকল্পনাও হয়তো তিনিই করে গেছেন। ইরান যে তার হত্যার একটা জবাব দেবে, তা নিশ্চিত। সোলেইমানি এতদিন ধরে দেশের বাইরে ইরানের যে প্রভাব প্রতিপত্তি তৈরি করেছেন, তা টিকিয়ে রাখার সর্বোত চেষ্টা ইরান করবে।” ইরান এবং আমেরিকার মধ্যে একটা যুদ্ধ লেগে যেতে পারে, এই শঙ্কা সন্দেহ গত বছর খানেক ধরে চলছিল, কিন্তু সেই সাথে যুদ্ধ এড়ানোর একটা চেষ্টাও তলে তলে চলছিল। ফ্রান্স এই দুই শত্রুর মধ্যে একটা মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বিবিসির প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা লিস ডুসেট মনে করছেন, মি সোলেইমানি এবং ইরাকি একটি শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীর (পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স) প্রধান আবু মাহদি আল মোহানদিসকে হত্যার পর যুদ্ধ এড়ানোর সেই চেষ্টা ধসে পড়বে সন্দেহ নেই।

কিন্তু কিভাবে ইরান প্রতিশোধ নেবে – পরিষ্কার করে অনুমান করা শক্ত। তেহরানে ইরানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কাউন্সিলের জরুরী বৈঠক হচ্ছে। সেখান থেকেই হয়তো একটা ছক তৈরি হবে। লিস ডুসেট মনে করেন, ‘বদলা নেওয়ার নানা রাস্তা এবং উপায় ইরানের রয়েছে।’
মি ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক একজন সদস্য কার্সটেন ফনটেনরোজকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখছে, ইরানের এই বদলা হয়তো দীর্ঘমেয়াদী এবং নানামুখী হবে। তিনি বলছেন ইরাকে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা হয়ত তাৎক্ষনিক-ভাবে কিছু হামলা চালাবে, কিন্তু ইরান হয়তো “উপযুক্ত সময় এবং স্থানের জন্য অপেক্ষা করবে।”
তিনি বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এমনকি পশ্চিম আফ্রিকা বা দক্ষিণ আমেরিকাতেও মার্কিন স্বার্থ এবং নাগরিকরা হামলার মুখে পড়তে পারে, এবং এই ঘটনা বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে। “ইরান এমন একটি বার্তা দিতে চাইবে যে আমেরিকানরা কোথাও নিরাপদ নয়।

ভয়েস অব আমেরিকা
ভয়েস অব আমেরিকা এক বুলেটিনে জানিয়েছে, বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের এলিট কুদস ফোর্সের জেনারেল কাসেম সোলেমানি নিহত হয়েছেন।যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার সকালে ঐ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নির্দেশ দেন। ঐ আক্রমণের কিছুক্ষণ পরেই পেন্টাগন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে প্রেসিডেন্ট“ ইরানের ভবিষ্যৎ হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ” করার লক্ষ্যেই ঐ আক্রমণ চালানোর নির্দেশ দেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে আমেরিকান এবং কোয়ালিশন বাহিনীর শত শত সেনার মৃত্যু এবং হাজার হাজার সেনার আহত হওয়ার জন্যজেনারেল কাসেম সোলেমানি এবং তার কুদস বাহিনী দায়ী। পেন্টাগন ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ সম্পর্কে আর বিশেষ কিছু বলেনি। পাল্টা প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছেন ইরানের বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর সাবেক কমান্ডার মোহসেন রেজাই।
মার্কিন ড্রোন হানায় মৃত্যু হল ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ড কোরের কাদ্স ফোর্সের কম্যান্ডার জেনারেল কাসেম সোলেমানির। প্রাণ হারালেন ইরাকি জঙ্গি সংগঠনের উপ-প্রধান আবু মহদি আল-মুহান্দিস ওরফে জামাল জাফর ইব্রাহিমি।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক টি এস্পার এই খবর দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘ইরান ও তার আশপাশের দেশগুলিতে থাকা মার্কিন কূটনীতিকদের রক্ষা করতেই এই পদক্ষেপ।’

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের হুঁশিয়ারি

অপরদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এই মার্কিন ড্রোন হানাকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ’বলে নিন্দা করেছেন। ‘আগামী দিনে আমেরিকাকে এর মূল্য দিতে হবে’বলে তাঁর টুইটে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
পেন্টাগনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, একটি ড্রোন থেকে চালানো হয়েছে এই হামলা। ওই ঘটনায় সোলেমানি, আল-মুহান্দিস সহ কম করে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই চালানো হয়েছিল এই ড্রোন হানা।
পেন্টাগন জানিয়েছে,  শুক্রবার ভোর রাতে ওই ড্রোন হামলা চালানো হয় বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ওই সময় বিমানবন্দরের কাছে দু’টি গাড়ির কনভয়ের একটিতে ছিলেন সোলেমানি ও আল-মুহান্দিস। অন্য গাড়িটিতে ছিলেন তাঁদের সঙ্গীরা। পরে ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া সংগঠনগুলি ওই ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই

ভিডিওতে দেখা গেছে, বিমান থেকে ফেলা বোমায় গাড়িটি পুড়ে গিয়েছে। সেই জায়গাটায় ছাইয়ের পাহাড় সমান স্তুপ। সেই ছাইয়ের নীচেই দেখা গিয়েছে সোলেমানির রক্তাক্ত দেহ। তাঁর হাত। আঙুলে রয়েছে সেই লাল আংটি, যা এর আগেও সোলেমানির বিভিন্ন ছবিতে দেখা গিয়েছে। পেন্টাগনের ঘোষণার আগেই অবশ্য ইরাকের সেনাবাহিনী ও ইরাকি টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে মার্কিন বিমান হানায় সোলেমানির মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
তারপরই আমেরিকার বিরুদ্ধে টুইটে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে খামেনেই লিখেছেন, “তাঁর অক্লান্ত চেষ্টার পুরস্কার স্বরূপ শহিদ হয়েছেন সোলেমানি। তাঁর দেখানো পথেই জেহাদ চলবে এবং এই ধর্মযুদ্ধে আমাদেরই জয় হবে। যারা সোলেমানির রক্তে হাত রাঙিয়েছে তাদের জন্য চরম প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।” ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জ়ারিফও সাফ বলেছেন, ‘এই হামলার পর পরিস্থিতির অবনতি হলে তর দায় নিতে হবে আমেরিকাকে।’ এদিকে, ইরানের দাবি উড়িয়ে আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট মাইক পম্পেউ  টুইট করেন। সেখানে দেখা যায় সোলেমানির মৃত্যুতে আনন্দে মেতেছেন ইরাকিরা।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেউ’র টুইট:
Secretary Pompeo
✔@SecPompeo
Iraqis — Iraqis — dancing in the street for freedom; thankful that General Soleimani is no more.

মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক টি এস্পার  বলেছেন, ‘‘ইরান ও তার আশপাশের দেশগুলিতে থাকা মার্কিন কূটনীতিকদের রক্ষা করতেই এই পদক্ষেপ।’

কিভাবে ইরান প্রতিশোধ নেবে

কিন্তু কিভাবে ইরান প্রতিশোধ নেবে – পরিষ্কার করে অনুমান করা শক্ত। তেহরানে ইরানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কাউন্সিলের জরুরী বৈঠক হচ্ছে। সেখান থেকেই হয়তো একটা ছক তৈরি হবে। লিস ডুসেট মনে করেন, ‘বদলা নেওয়ার নানা রাস্তা এবং উপায় ইরানের রয়েছে।’
মি ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক একজন সদস্য কার্সটেন ফনটেনরোজকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখছে, ইরানের এই বদলা হয়তো দীর্ঘমেয়াদী এবং নানামুখী হবে। তিনি বলছেন ইরাকে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা হয়ত তাৎক্ষনিক-ভাবে কিছু হামলা চালাবে, কিন্তু ইরান হয়তো “উপযুক্ত সময় এবং স্থানের জন্য অপেক্ষা করবে।”

নতুন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ঈসমাইল কুনী

সোলেইমানির স্থলে নতুন কমান্ডার নিয়োগ দেয়া হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ঈসমাইল ক্কুনীকে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামিনি তাকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে ইরানের বার্তা সংস্থা ফার্স জানায়।

তিনি বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এমনকি পশ্চিম আফ্রিকা বা দক্ষিণ আমেরিকাতেও মার্কিন স্বার্থ এবং নাগরিকরা হামলার মুখে পড়তে পারে, এবং এই ঘটনা বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে। “ইরান এমন একটি বার্তা দিতে চাইবে যে আমেরিকানরা কোথাও নিরাপদ নয়।

## ০৩.০১.২০২০ ইং।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.