--- বিজ্ঞাপন ---

সিডনিতে গত দুদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে

0

সিডনিতে গত দুদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। আজও হচ্ছে। তবে একেবারে নিঃশব্দে। এখানে সবকিছু শব্দ হীন।গাড়ি ঘোড়া চলে নিঃশব্দে, মানুষ কথা বলে নিঃশব্দে। বৃষ্টি ও অনেক টা তাই! বাংলাদেশের মত ঝমঝম শব্দ করে আকাশ বাতাস তোলপাড় করে বৃষ্টি হয়না। টিপটিপ করে নিঃশব্দে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়।তাই বর্ষার আমেজটা তেমন পাওয়া যায়না। তদুপরি আমাদের শহর বন্দর গ্রামের মত একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি কোথাও জমেনা।তাই বৃষ্টি জনিত কোন জনদুর্ভোগ ও এখানে নেই।
সকালে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম আকাশটা মেঘলা। সূর্যের আলো নেই। চারিদিক কেমন গুমোট হয়ে আছে।রাস্তাটা কেমন ভেজা ভেজা। ঘরের চারদিকের ঘাস গুলো ফুলের গাছ গুলো ভেজা ভেজা। কেমন যেন স্যাঁতস্যাঁতে ভাব। তাই বৃষ্টি এখানে হৃদয়ে কোন সুরের ঝঙ্কার তোলেন না মনে। গুনগুন করে হৃদয় গান গেয়ে উঠে না।জানিনা এখানকার স্হানীয় মানুষের মনে বৃষ্টি কি ধরনের অনুভূতি জাগায়। এখানকার কবি শিল্পী লেখক গায়ক দের মননে কোন দোলা দেয় কিনা বৃষ্টি ? রবীন্দ্রনাথের মত মত কোন কবি এখানে বৃষ্টি নিয়ে এত কবিতা গান লিখেছেন কিনা।বাংলার এক রবীন্দ্রনাথ বর্ষা ও বৃষ্টি নিয়ে যত গান কবিতা লিখেছেন পৃথিবীর আর কোন কবিসাহিত্যিক অমন করে বর্ষা বন্দনা করেছে কিনা আমার জানা নেই।
আসলে আমরা ষড়ঋতুর দেশের মানুষ। এখানে ষড়ঋতু নেই। এখানে বড়জোর চারটি ঋতু খুঁজে পাওয়া যায়।তাও পার্থক্য বুঝতে কষ্ট হয়। কিন্তু বাংলা দেশে স্পষ্ট করে ছয়টি ঋতু অনুভব করা যায়।বলা যায় ঋতুবৈচিত্রের দেশ বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে আবেগ বেশি। মানুষ বেশি অনুভূতি প্রবন।তাই কবিসাহিত্যিকের সংখ্যা ও বেশি।
বর্ষায় গুনগুন করে গান করেনা এমন বাঙালী নারী পুরুষ কি আছে? তাইত ও দেখি একটু বৃষ্টি হলেই কিছুটা লাজুক প্রকৃতির আমার সহধর্মিণী ও মাঝেমাঝে গুনগুন করে। আমিত বৃষ্টি হলেই রবীন্দ্র সংগীতের কোলে আশ্রয় নিই।তিনিও তাই।এখন তিনি ইউটিউবে ঢুকে রবীন্দ্র সংগীত শুনছেন আর সকালের নাস্তা তৈরি করছেন। ঘরে কেউ নেই আমরা দুজন ছাড়া। আমি মাত্র ঘুম থেকে উঠেই বৃষ্টি ভাবনা নিয়ে ডুবে আছি।
বৃষ্টি হলেই আমার স্কুল জীবনে পড়া প্রমথ চৌধুরীর বৃষ্টি নিয়ে প্রবন্ধের কথা মনে পরে। মনেপরে যায় পঙ্কজ মল্লিকের গাওয়া রবীন্দ্র সংগীত – এমন দিনে তারে বলা যায়….এটা আমার অতি প্রিয় গান।তাও আবার পঙ্কজ মল্লিকের নাকি কণ্ঠ ছাড়া অন্য কারো কণ্ঠে ভাল লাগেনা, তেমন মন ভরে না। রবীন্দ্র সংগীতের প্রতি আমার প্রেম শুরু এই গান শুনেই সেই কবে কোন কৈশোরে! আসলে বর্ষা কে পৃথিবীর আর কোন কবি রবীন্দ্রনাথের মত এত গভীর ভাবে উপলব্ধি করেছে কিনা জানা নেই। রবীন্দ্রনাথের বর্ষা উপভোগের আয়োজন ছিল রাজসিক । পদ্মা মেঘনা যমুনায় বজরা ভাসিয়ে দিনের পর দিন তিন বর্ষার রূপ দেখেছেন আর কবিতা লিখেছেন। তাই বর্ষার রূপ তাঁর হৃদয়ের এত গভীরে প্রবেশ করেছে। এমন করে হৃদয়ের গভীরে বর্ষা আর কারো মনে ঠাঁই নিয়েছে কি?
ছোট বেলায় বর্ষার রূপ দেখেছি আমি কর্ণফুলীর তীরে। দেখেছি পদ্মা মেঘনার সংগমস্হল চাঁদপুরে।সে এক অপরূপ দৃশ্য। এখনো স্মৃতিতে ডুব দিয়ে অবলোকন করা যায়।মনে পরে ঘোর বর্ষায় সাম্পানে করে কর্ফুলী নদী পাড়ি দিয়ে শহরে যাওয়া আসার স্মৃতি।রাঙ্গামাঠির পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর গাছপালা।স্হানীয় জেলেদের ছোট ছোট মাছ ধরার ডিঙি নৌকা।মেঘনায় মাছ ধরা ছোট ছোট ডিংঙ্গি নৌকা গুলো এখনো চোখের সামনে ভেসে উঠে মাঝে মাঝে। একুল ওকুল সবই অদৃশ্য একাকার। শুধু ঢেউ আর ঢেউ আর অঝোর ধারায় বৃষ্টি। আর ঢেউ এর তালে তালে দোল খাওয়া খড়খুটুর মত ভাসমান নৌকা গুলো।মনে হত কত দুঃসাহসিক অভিযান মাছধরা এই জেলেদের!
বৃষ্টি হলেই আমার হৃদয়ে সুর তোলে রেজওয়ানা চৌধুরীর গান – নীল নব ঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে…… চোখের সামনে ভেসে উঠে নদী নালা খালবিল পরিপূর্ণ থৈথৈ জলে।কলকল কূল ধ্বনি তুলে গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির জলধারা । মনে পরে শৈশবে পড়া কবিতার পঙক্তি – বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর
আউসের ক্ষেত জলে ভর ভর
কালি মাখা মেঘে ওপারে আঁধার
ঘনিয়েছে দেখ চাহিরে,
ওগো আজ তোরা যাসনে গো তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে….।

আসলে এদেশে বৃষ্টি হলে ঘরের বাইরে যাওয়া ও কঠিন। আমাদের দেশের মত ঘর থেকে বের হয়ে এই রিক্সা এই সিএনজি বলে লাফিয়ে উঠার কোন সুযোগ নেই। হয় ট্যাক্সিক্যাব নয় বাস।প্রথম টা ব্যয় বহুল দ্বিতীয় টা শ্রমসাধ্য। সুতরাং গাড়ি যার নেই সে অনেকটা গৃহবন্দী বিশেষ করে আমার মত আয়েশী অলস অতিথি মানুষের জন্য।

বৃষ্টি আসলে মনটা উতলা করে দিয়েছে। দেশের জন্য মনটা কেমন আনচান করে উঠে। মনে পরে বৃষ্টির দিনে ইলিশ খিচুড়ির কথা,শীতের দিনের ভাপা পিঠার কথা।মনে পরে কচুর লতি পুঁইশাক লাল মরিচ আর সরিষার তেলের আলুভর্তা, শীতের নতুন শাক সবজির কথা!অনেক কিছু না পাওয়ার দেশে মনে হয় সেই অনেক পাওয়া অনেক তৃপ্তি! দেশমাতৃকার অপার স্নিগ্ধ রূপ, অন্তহীন ভালবাসা ভাল লাগা ষড়ঋুতুর লীলা ভুমি প্রিয় বাংলাদেশ! দ্বিজেন্দ্র লালের মত তাই আমার ও বলতে ইচ্ছে করে –
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাক তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমরা জন্মভূমি…..

সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।
১৭/১/২০২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.