--- বিজ্ঞাপন ---

পাকিস্তানে পঙ্গপালের রেষ কাটতে না কাটতেই এবার কুকুরের আক্রমণ শুরু

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম: পাকিস্তানে পঙ্গপালের আক্রমণে সপ্তাহখানেক আগে জরুরী অবস্থা ঘোষণার রেষ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে এবার কুকুরের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে উঠছে নাগরিকরা। পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকার খবর মতে করাচীর মত আন্তর্জাতিক বন্দর নগরীতে শুধুমাত্র একদিনেই ৭২ জনকে কামড়িয়েছে কুকুর। পত্রিকাটি জানায়, কুকুরের আক্রমণের শিকার বেশীর ভাগই শিশু। নগরীর হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের অভাব দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে এতসংখ্যক কুকুর আক্রমণের ঘটনা আগে ঘটেনি। করাচীর ইন্দাস হসপিটালের ম্যানেজার মোহাম্মদ ইকবাল গওহর জানান, শুধুমাত্র শনিবারে ( ৮ ফেব্রুয়ারী ) সেখানে ৩০ জনকে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত অবস্থায় ভর্তি করা হয়। এছাড়াও প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন কুকুরের আক্রমণের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছে ঐ হাসপাতালে। এমনও দেখা গেছে আগের ফলো আপসহ  আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দৈনিক  ১০০ জন ছাড়িয়ে গেছে।

করাচীর অপর একটি হাসপাতাল ডা. রুথ পিফাউ সিভিল হসপিটালে শনিবারে একদিনে রেকর্ড ১৬ আক্রান্তকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।  এপর্যন্ত হাসপাতালটিতে কুকুরের আক্রমণে সাম্প্রতিককালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ রেকর্ড করা হয়। ঐ হাসপাতালের একজন সিনিয়র ডাক্তার জানান, গত কয়েক সপ্তাহে গড়ে দৈনিক ২০ জন কুকুর কামড়ে আক্রান্ত  নতুন রোগী ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছে। করাচীর জেপিএমসি ( জিন্নাহ পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল সেন্টার) এর নির্বাহী পরিচালক ডা. শিমিন জামালি এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলেন, সেখানে শুধুমাত্র শনিবার উল্লিখিত দিনেই ১৫ কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সর্বমোট ১০৬ জনকে ঐ পোস্ট গ্রাজুয়েট হাসপাতালে কুকুরের হামলার শিকার হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। ইন্দাস হসপিটালের সিইও ডা. আবদুল বারি বলেন, গত বছর তাদের হাসপাতালে ৭,০০০ কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করা হয়। করাচী ছাড়াও বেলুচিস্তানসহ অন্যান্য প্রদেশ থেকেও কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকে।

পঙ্গপালের আক্রমণে দিশেহারা  হয়ে জরুরী অবস্থা ঘোষণা

বছর না পেরোতে আবারও পঙ্গপালের আক্রমণের শিকার হয়েছে পাকিস্তান। পঙ্গপালের হানায় জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পাকিস্তানবাসীর। এ নিয়ে রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পঙ্গপালের এই প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এবং শস্যের ক্ষতি রুখতে জরুরি অবস্থাও জারি করতে হয়েছে ইমরান খানকে। পাকিস্তানের পত্রপত্রিকা জানায়, দেশটির পূর্বাঞ্চলের সিন্ধু প্রদেশে প্রথমে এ পঙ্গপালের হামলা শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অংশে। এতে জন-জীবন বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকার ইতোমধ্যে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে।

পাকিস্তানের ইংরেজী দৈনিক দ্য ডনের খবরে বলা হয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরে সিন্ধু প্রদেশের ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি করছে পঙ্গপাল। বর্তমানে সিন্ধু প্রদেশের অধিকাংশ জমির ফসল নষ্ট করে তারা ছড়িয়ে পড়ছে পাঞ্জাবের বিভিন্ন অংশে। এতে দেশটির পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়েছে। আর পঙ্গপালের আক্রমণ ঠেকাতে চারটি প্রদেশের মন্ত্রী ও সরকারের নীতি-নির্ধারকদের নিয়ে গত শুক্রবার ৩১ জানুয়ারী জরুরী বৈঠকে বসেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

বৈঠকে পঙ্গপালের আক্রমণ থেকে বাঁচতে জাতীয় জরুরী অবস্থা জারির  কথা ঘোষণা করেন তিনি। ওই বৈঠকে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অনুমোদিত হয়। যেখানে বর্তমানের এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে ৭.৩ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপির প্রয়োজন বলে জানান ইমরান খান। এর আগে, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানে পঙ্গপালের আক্রমণ দেখা দেয়। সেই সময় সিন্ধু, দক্ষিণ পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখাওয়াতে প্রায়  ৯০ লাখ হেক্টর জমিতে ছড়িয়ে পড়েছিল এসব পতঙ্গদের এই উপদ্রব। যার ফলে তখন কোটি কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়।

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.