--- বিজ্ঞাপন ---

রেজাউলেই আস্থা প্রধানমন্ত্রীর, চট্টগ্রামের মন্ত্রী-এমপি সবাই ছিলেন তার পক্ষে

0

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শেষপর্যন্ত আওয়ামী লীগের নতুন মুখ মনোনয়ন পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দলের ত্যাগি নেতা রেজাউল করিমের উপরই আস্থা রেখেছেন। যদিও তার নামটি ছিল আলোচনার বাইরে। দলের মনোনয়ন পুনরায় পাওয়ার জন্য অনেক দৌড়-ঝাপ করেও সফল হননি বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। আগামী বুধবারের মধ্যে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হতে পারে। এখানেও অনেক নতুন মূখ আসবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। মেয়র নাছির ঘনিষ্ঠ অনেকে বাদ পড়তে পারেন বলে সুত্র জানায়।
এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা, রাজনীতিতে মূল্যায়ন না হওয়ার কারনে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া নগর আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম চৌধুরী অবশেষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের দলের টিকেট পেলেন। তিনি আশা না করলেও তাকে নিরাশ করেন নি নেত্রী। এ প্রথম চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হতে প্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে ছিল নানা নাটকীয়তা। সবাই আশা করেছিল যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে থেকে নেত্রী হয়ত শেষপর্যন্ত এমন কাউকে নেবেন যাদের নাম হরহামেশা আলোচনায় থাকেন। কিন্ত তিনি সবদিক যাচাই বাছাই করে দলের জন্য ত্যাগী নেতা রেজাউল করিমকে বেছে নেয়ায় অন্যদের মাঝে বিস্ময়ের অন্ত ছিল না। কারন রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য তদবির করার কেউ ছিল না। তিনি একা একা হাটছিলেন, পরামর্শ করছিলেন। যে ১৯ জন নেতা মনোনয়ন চাইছেন তাদের কাছে অর্থবিত্তে রেজাউল করিম ছিলেন অনেক পেছনে। আর এ পেছনের মানুষটিকে যখন নেত্রী দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা করলেন তখন উপস্থিত অনেকের মাঝে হতামার ছায়া নেমে আসে। কারন সবাই এত তদবিরে ব্যস্ত ছিলেন যে, বুঝলে মনে হচ্ছে বুঝি নেত্রী তার নামটিই ঘোষণা দিচ্ছেন।
শনিবারের রাতে গণভবনে অনেকের রুদ্ধশ্বাস সময় কাটে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা এবং পরবর্তি নাম ঘোষনার দুরত্ব যেন অনেক দীর্ঘ। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে ১৫ জন স্বশরীরে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে যাননি নুরুল ইসলাম বিএসসি, সাবেক মেয়র মনজুর আলম মনজু। সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন পতœী হাসিনা মহিউদ্দিন ফরম জমা দেননি। প্রধানমন্ত্রীর সামনে সাক্ষাতদের ১৫ জন। তারা নিজেদের পরিচয় দেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের সাথে আলাপ আলোচনার পর সিনিয়র নেতাদের সাথে বসেন। চুড়ান্ত করেন রেজাউল করিম চৌধুরীকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে মেয়র পদে ১৯ জন দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি তার পক্ষে মনোনয়ন আনার জন্য একাধিক লবিং নিয়োগ করেছেন। অনেক মাধ্যমে তিনি নেত্রীকে বুঝানোর জন্য চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্ত শেষপর্যন্ত সফল হননি। মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পাবার জন্য আগে থেকে সক্রিয় ছিলেন সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম। তিনিও একইভাবে নেত্রীর আর্শীবাদ পাওয়ার জন্য চেষ্টা তদবির ও লবিং চালান। শেষপর্যন্ত তিনি ব্যর্থ হন। সাবেক মেয়র মনজুর আলমের নাম আসলেও তিনি বিএনপি’র হয়ে নির্বাচন করায় তাকেও হতাশ হতে হয়্ একপর্যায়ে তার নামটিও আরোচনায় আসে। পরে তিনি যখন বুঝতে পারেন তাকে সিগন্যাল দেয়া হচ্ছে না তাই তিনি আর প্রধানমন্ত্রীর সামনে যাননি।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, মেয়র পদের জন্য সবচেয়ে বেশি অনুরোধ গেছে আ জ ম নাছির ও আবদুস ছালামের জন্য। কিন্ত এ দু’জনের কাজে সন্তষ্ট ছিলেন না নেত্রী। তাদের দু’জনের একজনকে মেয়র এবং অন্যজনকে করেন সিডিএ’র চেয়ারম্যান। মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যান হবার পর তাদের সমস্ত আমলনামা নেত্রী অবহিত হন। দল ও কাজের চেয়ে তারা নিজেদের উন্নয়নে ব্যস্ত ছিলেন বলে সিনিয়র নেতাদের কাছে মন্তব্য করেন বলে জানা গেছে। তাই দলের জন্য ত্যাগি, সৎ নেতাকে বেছে নিতে বলেন। এ অবস্থায় সাবেক মেয়র মনজুর আলমে নাম আসে। কিন্ত বিগত নির্বাচনে তিনি বিএনপি’র হয়ে নির্বাচনে গেছেন বলে দলের মনোনয়ন তাকে দেয়া হয় নি। পরে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের নাম আসে। শেষপর্যন্ত দলীয় মনোনয়নটি খোরশেদ আলম সুজন ও রেজাউল করিমের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। দলের বিভিন্ন সিনিয়র নেতাদের সাথে আলাপ করে নেত্রী রেজাউল করিম চৌধুরীকেই এ দলের মেয়র পদে মনোনয়নের উপযুক্ত বলে চিহ্নিত করেন। শেষপর্যন্ত তার নামটি ঘোষণা করেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল করিম চৌধুরীকে এক পরীক্ষিত নেতা বলে রবিবার মন্তব্য করেন দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, রেজাউল করিম চৌধুরী কোনদিন কোন সুযোগ পাননি। কিন্ত সারাজীবন দলের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছেন। সেই পুরস্কার হিসেবে তাকে চট্টগ্রামের মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।’
গণভবনে থাকা সিনিয়র নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, রেজাউল করিমকে নেত্রী বেছে নেয়ার অন্যতম কারন হলো দলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে তার ত্যাগ। এরআগেও তিনি সংসদ সদস্য ও মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্ত নানাকারনে তার এ আবেদনে সাড়া মেলেনি। তিনি দীর্ঘসময় ধরে দলের জন্য কাজ করেছেন। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে দলীয় রাজনীতিতে নীরবে থেকে মিছিল সমাবেশে অংশ নিয়েছেন। কোন প্রকার গ্রæপিং জড়াননি। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদে মনোনয়ন চাইলেও তার এ আবেদন সিনিয়র নেতাদের কাছে মূল্যায়িত হননি। এবার মেয়র পদে নানা টানাপোড়েনের ভেতর তাঁর নামটি উঠে আসে। নেত্রী তাঁর সমস্ত বায়োডাটা এবং আগের রাজনৈতিক রেকর্ড দেখে তাঁকে দলের মনোনয়নের জন্য চুড়ান্ত করেন।
রেজাউল করিম চৌধুরী ১৯৫৩ সালে চট্টগ্রামের প্রাচীন জমিদার পরিবার বহদ্দার বাড়ীতে জম্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে সরকারী মুসলিম হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্ররাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান নগর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্দে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ থেকে ৭৬ পর্যন্ত চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। একই সাথে এ সময় তিনি উত্তর জেলা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক ও পরে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রেজাউল করিম ১৯৭৮ -৭৯ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮০ সালে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য, ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আওযামী লীগের সদস্য, ২০০৬ থেকে ২০১৪ সার পর্যন্ত নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনি নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে নেত্রী সম্মানিত করেছেন। এ জন্য তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। মেয়র নির্বাচিত হলে সৎ ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করবো। নেত্রী আমাকে যে সম্মান দিয়েছেন তাঁর মর্যাদা রাখবো। আমার লক্ষ্য থাকবে চট্টগ্রামের উন্নয়ন। মেয়র নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামের উন্নয়নই হবে আমার অন্যতম কাজ।’
এদিকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চুড়ান্ত হবার পর কাউন্সিলর পদে দলের মনোনয়ন পাবার জন্য কাউন্সিলরদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে। ৪১ ওয়ার্ডে প্রায় চার শতাধিক কাউন্সিলর দলের মনোনয়ন চেয়েছেন। মেয়র নাছিরের বাদ পড়ায় অনেকে এখন শংকিত। মেয়রের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর রয়েছেন তাঁরা এখন নিজেদের মনোনয়ন নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। আগামী ১৯ তারিখের মধ্যে এগুলো চুড়ান্ত হবার কথা রয়েছে। কাউন্সিলর পদে দলের মনোনয়নের আশায় এখন অনেকে লবিং এ ব্যস্ত। তবে ক্রমান্বয়ে নামগুলো চুড়ান্ত করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।### ১৬.২.২০২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.