মানবপাচারের শিকার ২৬ বাংলাদেশিকে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে হত্যার ঘটনায় সারাদেশে ২২টি মামলা করা হয়েছে। রোববার পর্যন্ত এসব মামলা করা হয়। এ ঘটনায় নতুন চারজনসহ মোট ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নতুন যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা স্থানীয় দালাল, দেশীয় পাচারকারী ও লিবিয়া ক্যাম্পের মালিক। রোববার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সোমবার এক ক্ষুদে বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ। ডিএমপি জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা স্থানীয় দালাল, দেশীয় পাচারকারী ও লিবিয়া ক্যাম্পের মালিক। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। উল্লেখ্য, গত ২৮ মে লিবিয়ার ত্রিপলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর মিজদাহতে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে সেদেশের একদল মানব পাচারকারী ও তাদের স্বজনরা।
ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজনের বরাতে সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উন্নত জীবিকার সন্ধানে ইউরোপ যাওয়ার জন্য লিবিয়ায় দুর্গম পথ পাড়ি দিচ্ছিলেন ৩৮ বাংলাদেশি। বেনগাজি থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে মানবপাচারকারীরা তাদের ত্রিপোলি নিয়ে যাচ্ছিল। মিজদাহতে ওই দলটি লিবিয়ার মিলিশিয়া বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়। তখন পাচারকারীরা আরও টাকা দাবি করে। এ নিয়ে বচসার মধ্যে আফ্রিকার মূল পাচারকারীকে মেরে ফেলা হলে তার পরিবার এবং বাকি পাচারকারীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ৩০ জনকে হত্যা করে, তার মধ্যে ওই ২৬ বাংলাদেশি রয়েছেন।
এ ঘটনার পর এক জরুরি ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, যেভাবে আমাদের দেশের মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এই ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশ পুলিশের সব ইউনিট প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। পুলিশের মাঠপর্যায়ের সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, আমাদের দেশের মানুষকে এভাবে অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করতে হবে, সেই অবস্থানে এখন বাংলাদেশ নেই।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ আত্মমর্যাদায় বলীয়ান এক অন্য বাংলাদেশ। অর্থ উপার্জন ও জীবিকার জন্য দুর্গম ও অবৈধ পথে বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমানোর কোনো কারণই নেই। যারা আমাদের দেশের নাগরিকদের প্রতারণার মাধ্যমে বিদেশে নিয়েছে, যাদের কারণে এই নির্মম মৃত্যু ঘটেছে তাদের একজনকেও ছাড় দেয়া হবে না। তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করে এই চক্রের প্রত্যেক সদস্যকে আইনি প্রক্রিয়ায় কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। যেন ভবিষ্যতে কোনো বাংলাদেশিকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে, তার জীবন নিয়ে খেলার দুঃসাহস কোনো মানুষ দেখাতে না পারে। দেশে ও বিদেশে যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন এদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করা হবে। স্বজনদের কান্নার দাগ শুকানোর আগেই, এই অপরাধী চক্রকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কঠোর নির্দেশ দেন আইজিপি।
এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, আইজিপির কঠোর নির্দেশে, তাৎক্ষণিকভাবে র্যাব, ডিএমপি, সিআইডি, পিবিআইসহ বাংলাদেশ পুলিশের মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সব ইউনিট একযোগে অভিযানে নামে। এরই মধ্যে ৭ জুন পর্যন্ত মোট ২২টি মামলা দায়ের হয়েছে। আসামিদের চিহ্নিত করে আইজিপির নির্দেশে গ্রেপ্তারে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। ইতোমধ্যে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। সংশ্লিষ্ট অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ প্রত্যেক মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের এই অভিযান চলমান থাকবে।