--- বিজ্ঞাপন ---

ভারত চীন উত্তেজনা বাড়ছেই!!!

0

চীন ও ভারতের সংঘাত ঘিরে এর কারণগুলো নিয়ে শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া। গত ৫ মে নতুন করে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা ১৫ জুন ২০ ভারতীয় সেনার প্রাণহানির মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে। গালওয়ান উপত্যকা নিয়ে কেন এ লড়াই? কী কারণে চীন তাদের ক্ষমতা দেখাচ্ছে আর ভারত প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছে?

ভারতের স্ক্রলডটইনের এক প্রতিবেদনে এর কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে সীমান্ত দ্বন্দ্বের পেছনে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মাখামাখির বিষয়টিকে কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। দুটি দেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের বিষয়টি চীন ভালোভাবে দেখছে না। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত রয়েছে—এমন দেশের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি তদন্তে চীন বিরক্ত ছিল। সর্বোপরি ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল এবং কাশ্মীর আর লাদাখ অঞ্চলকে আলাদা করে ইউনিয়ন টেরিটরি ঘোষণাও চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদি সরকার বর্তমানে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকেছে, তাতে চীন স্বস্তিতে নেই। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েলের এবং পশ্চিমা বিশ্বের দিকে ভারত যেভাবে ঝুঁকে পড়ছে, তাতে চীন ভারতকে চীনবিরোধী জোটের অগ্রসৈনিক ভাবছে। ভারত এরই মধ্য জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনের সঙ্গে সম্মিলিত নৌমহড়ায় অংশ নেয়, যা অনুষ্ঠিত হয়েছে বিরোধপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এই মহড়ার পর চীন ভারতের ব্যাপারে আরও সতর্ক। তদুপরি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কয়েক বছর ধরে ভারতীয় উত্তরাঞ্চলের বিমানঘাঁটিতে যৌথ মহড়াও করেছে। সর্বশেষ ভারত কয়েক সপ্তাহ আগে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মিউচুয়াল লজিস্টিক সাপোর্ট অ্যাগ্রিমেন্ট করেছে। এর আওতায় দুই দেশ তাদের নৌঘাঁটি বিভিন্ন সামরিক কারণে ব্যবহার করতে পারবে। অস্ট্রেলিয়াও চীনবিরোধী ক্যাম্পে রয়েছে। কোভিড-১৯ ছড়ানোর দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুর মিলিয়ে চীনের বিরুদ্ধেও দাঁড়িয়েছে।

লাদাখে ভারত ও চীনা সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত ও ১০ সেনা আটকের পর বেশ মুশকিলেই পড়ে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি লাদাখে সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের পর সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) লঙ্ঘনের যেকোনো চেষ্টার ক্ষেত্রে ভারত দৃঢ়তার সঙ্গে তা প্রতিহত করবে, এই বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী মোদি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। মূলত, তিনি যে বিষয়টির ওপর জোর দিয়েছেন, সেটি হলো নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘনের ঘটনাসম্পর্কিত চ্যালেঞ্জের ক্ষেত্রে অতীতে যতটা অবহেলা দেখা গেছে, তার তুলনায় ভারতীয় বাহিনীগুলো সন্দেহাতীতভাবে আরও কঠোরভাবে এমন কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এটি স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে ১৫ জুন গালওয়ানে যে সংঘর্ষ হয়েছিল, তা ঘটার মূল কারণ চীন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা-সংলগ্ন এলাকায় ভারতীয় স্থাপনা উৎখাত করতে চেয়েছিল এবং ওই কর্মকাণ্ড থামাতে চায়নি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘যারা আমাদের ভূমিতে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করেছিল, তাদের আমাদের দেশের সাহসী সন্তানেরা উচিত শিক্ষা দিয়েছেন।’ তিনি জোর দিয়ে আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে আমাদের সীমান্তসমূহ রক্ষা করার জন্য আমাদের সশস্ত্র বাহিনীগুলো কোনো চেষ্টাই বাদ রাখবে না।’

তবে নিজেদের ঘাড়ে কোনো দোষ নেয়নি চীন। এক বিবৃতিতে সব দোষ ভারতের ঘাড়ে চাপিয়ে নয়াদিল্লির চীনা দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় সেনারা ৬ জুনের চুক্তি লঙ্ঘন করেছিল এবং সহিংসভাবে চীনা সেনাদের ওপর আক্রমণ করেছিল। ভারতীয় পক্ষ ৬ জুন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা গালওয়ান নদীর মোহনা পেরিয়ে টহল দেওয়ার ও সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে পারবে না এবং উভয় পক্ষ বৈঠকের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেবে। তবে দুঃখজনকভাবে ১৫ জুন সন্ধ্যায় কমান্ডার স্তরের বৈঠকে চুক্তির লঙ্ঘন করে ভারতের সম্মুখ সামরিক বাহিনী। যখন গালওয়ান উপত্যকার পরিস্থিতি স্বাচ্ছন্দ্যজনক ছিল, তখন তারাই ইচ্ছাকৃত উসকানির জন্য আবার এলএসি পার হয়ে গেল এবং আলোচনার জন্য সেখানে যাওয়া চীনা কর্মকর্তা ও সৈন্যদের ওপর সহিংস আক্রমণ চালিয়েছিল। এভাবে মারাত্মক শারীরিক সংঘর্ষ ও হতাহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

স্ক্রলডটইন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ভারতের সেনা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও চীনাদের ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। চীন এ ক্ষেত্রে বরাবরের মতোই নীরব থেকেছে। দেশটির সরকারি গণমাধ্যমে এ–সংক্রান্ত তথ্য নেই। বিষয়টিকে গুরুত্বহীন করে তুলতে চাইছে তারা। স্থানীয় জনরোষ ঠেকাতে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পথ খোলা রাখছে। সাংহাইয়ে একজন চীনা সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করে হতাহত হওয়ার যে সংখ্যার কথা বলেছেন কিংবা মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য উদ্ধৃতকারী মার্কিন সাংবাদিক পল শিংকম্যান যে ৩৫ জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছেন, তা নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ। ভারত ও চীনের সংঘর্ষ নিয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো তথ্য নেই।

উত্তেজনা বাড়তে থাকায় ভারতের বিমানবাহিনী ঘোষণা করেছে, তারা যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি। বিমানবাহিনীর প্রধান আর কে এস ভাদুড়ি বলেছেন, লাদাখ সীমান্তে বিমানবাহিনী মোতায়েন করা আছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তারা তৈরি। চীনের দিকে মুখ করে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার মোতায়েন করেছে তারা।

ভারত-চীন সীমান্তে এমন হতাহত হওয়ার ঘটনা গত ৫০ বছরে ঘটেনি। চীনের পক্ষ থেকে এ ঘটনার জন্য ভারতীয় সেনাদের বিশৃঙ্খলা ও অসামরিক আচরণকে দায়ী করে ভবিষ্যতে এলাকায় উত্তেজনা কমানোর প্রচেষ্টার কথা বলেছে। একই সঙ্গে চীন দাবি করেছে, যে অঞ্চলে এ ঘটনা ঘটেছে, সেই গালওয়ান উপত্যকা চীনের নিয়ন্ত্রিত আকসাই চীনের অন্তর্ভুক্ত। চীনের এই দাবি ভারতের তো মানার কোনো কারণ নেই। কিন্তু চীন ওই অঞ্চলে সেনার সংখ্যা বাড়িয়েছে এবং প্রচলিত সমরাস্ত্রও জড়ো করেছে বলে ভারতীয় সূত্রগুলো বলছে।

ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং লাদাখের পরিস্থিতি নিয়ে সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং তিনজন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, লাদাখ পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছে। এর মধ্যেই মুখ খুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘এটা কঠিন পরিস্থিতি। আমরা দুই দেশের সঙ্গে কথা বলছি। ওরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। আমরা দেখছি কী হয়, আমরা ওদের সাহায্য করব।’

দৃশ্যত, চীন বৃহত্তর আঙ্গিকে ভারতকে ভূরাজনৈতিকভাবে ঘিরে ফেলার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। নেপাল ভারতের বলয় থেকে বের হয়ে চীনের বলয়ে ঢুকে পড়েছে। এটা ভারতের জন্য এ সময় নতুন মাথাব্যথার কারণ। এর মধ্যেই ভারতের গণমাধ্যমের খবর হয়েছে, নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষ জড়াচ্ছে পাকিস্তানও

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.