--- বিজ্ঞাপন ---

চার্লস শোভরাজ দ্যা কিলার…১

0

কাজী ফেরদৌস###

কারও কি মনে আছে তার কথা? সত্তর আর আশির দশক জুড়ে ইউরোপ ও দক্ষিন এশিয়ার অনেক দেশে ত্রাশ সৃষ্টি কারী এই ভয়ংকর অপরাধীর নাম? আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে তার সম্পর্কে বিষদ জানতে পেরেছিলাম রিডার্স ডাইজেস্ট ম্যাগাজিনে তাকে নিয়ে করা কভার স্টোরি থেকে। এতদিন ভুলেই গিয়েছিলাম তার নাম। হঠাৎ এই করোনা কালে সেদিন মনে পরেগেল তার কথা। গুগলে সার্চ দিতেই বেড়িয়ে আসল তার তথ্য। ভেবেছিলাম সে হয়ত এতদিন বেঁচে নেই। এখন দেখি দিব্যি বেঁচে আছে নেপালের কারাগারে। ভোগ করছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।বয়স এখন ৭৬ বছর। পরিপাটি সুদর্শন স্মার্ট রোমান্টিক এই দুর্দান্ত অপরাধী এখনো এক নেপালী তরুনীর সাথে জেলে বসেও চুটিয়ে প্রেম চালিয়ে যাচ্ছে।

চার্লস শোভরাজ এক দুর্দর্শ সিরিয়াল কিলার, জোচ্চর ও প্রতারকের নাম। জন্ম তার দক্ষিন ভিয়েতনামের সায়গন শহরে ১৯৪৪ সালে। যেটা একসময় French Indo – China নামে পরিচিত ছিল। তার মা ভিয়েতনামী বাবা ভারতীয়। তবে বাবার সাথে ডিভোর্স হওয়ার পর তার মা পরে এক ফরাসি সেনা অফিসার কে বিয়ে করে। ফলে মায়ের সাথে পঞ্চাশের দশকে শোভরাজ প্যারিস চলে আসে এবং ফরাসী নাগরিক হিসেবে সেখানেই বড় হতে থাকে অনেকটা অবহেলিত শিশু হিসেবে । তবে খুব অল্প বয়সেই সে ছোটখাটো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৩ সালে চুরির জন্য প্যারিসে প্রথম সে জেল খাটে। জেল অফিসারদের পটিয়ে সে বই পত্র যোগার করে এবং লেখা পড়া করে বিশেষ করে ক্রিমিনালর উপরে। সেখানে তার পরিচয় হয় এক ফরাসি ধনাঢ্য যুবকের সাথে যিনি জেল স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতেন। তার সহয়তায় সে প্যারলে মুক্তি পায়। তার সুদর্শন ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পরে এক রক্ষনশীল পরিবারের ইরানী পার্সিক সুন্দরী মেয়ে চানটাল ।তার হাত ধরে প্যারিসের উপর তলার মানুষের সাথে সখ্য গড়ে তোলে একই সাথে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের মানুষের সাথে ও সে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলে এবং বিভিন্ন জালিয়াতি ও জোচ্চুরি কাজ করে অর্থ রোজগার করতে থাকে। তাকে সব জেনে শুনে ও সহায়তা করে পারসিক সুন্দরী চানটাল।

সোভরাজ চানটালকে বিয়ের প্রস্তাব ও দেয়। কিন্ত বিয়ের আগের দিন গাড়ি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার হয় শোভরাজ। আট মাস জেল খাটে চুরির জন্য । জেল থেকে বের হয়ে সে চান্টাল কে বিয়ে করে এবং অন্তঃসত্ত্বা চানটালকে নিয়ে অপরাপর মামলার গ্রেফতার এড়াতে ১৯৭০সালে পূর্ব ইউরোপে পালিয়ে যায়। সেখানে সে বেশ কিছু দিন অবস্থান করে। তার আকর্ষনীয় রোমান্টিক চেহারা ও ব্যক্তিত্বের ফাঁদে ফেলে বিভিন্ন পর্যটকদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তাদের পাসপোর্ট জাল করে পূর্ব উরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে অবশেষে ভারতের বম্বে শহরে এসে ডেরা পাতে। ভারতে এসে তার স্ত্রী চানটাল এক কন্যা সন্তানের জন্মদেয়। এখানে এসে দিল্লির অশোক হোটেলের এক জুয়েলারি দোকানে ডাকাতি পরিকল্পনা করতে গিয়ে ধরা পরে যায়। পরে অসুস্থতার ভান করে হসপিটালে ভর্তি হয়ে চানটালের সহায়তায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।১৯৭৩ সালে দিল্লি পুলিশ তাকে পুনরায় আটক করতে সক্ষম হয়। এবার সে তার প্যারিসে অবস্থান কারী পিতার কাছ থেকে টাকা ধার করে জামিন নিতে সক্ষম হয়। জামিন নিয়েই সে কাবুল পালিয়ে যায়। কাবুলের হিপ্পি ট্রেইলে সে হিপ্পি টুরিস্টদের বিভিন্ন ভাবে প্রতারিত করে ও মাদক প্রয়োগ করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে সর্বসান্ত করতে থাকে। হিপ্পি এবং মাদক আসক্তদের প্রতি তার একধরনের সহজাত ঘৃণা ছিল বলে জানা যায়। এখানে এক পর্যায়ে কাবুল পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

চলবে……………০৪.০৭.২০২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.