--- বিজ্ঞাপন ---

পাকিস্তান বাংলাদেশ সম্পর্কের বরফ কি গলছে?

0

কাজী ফেরদৌস :

পাকিস্তান বাংলাদেশের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে সাম্প্রতিক সময়ে। এমন মন্তব্যই উপস্থাপন করেছে আরব নিউজ। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমরান খান অতি সম্প্রতি টেলিফোনে কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এবং তাঁকে পাকিস্তান সফর এর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে ও সংবাদে জানা যায়।সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুল মোমেন এর সাথে পাকিস্তানের হাই কমিশনারের বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর সাথে এই ফোনালাপ হয়।

প্রসঙ্গত সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সাথে তার নিকট প্রতিবেশীদের সম্পর্ক যখন নিম্ন মুখি বিশেষ করে নেপাল চীন পাকিস্তানের সাথে, তেমন একটি সময়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নের তাগিদ কৌশলগত ভু-রাজনৈতিক কারণে তাৎপর্য পূর্ণ বটে।যদিও পাকিস্তান কার্যত এখন এক দুর প্রতিবেশী এবং দুই দেশের মধ্যে প্রত্যক্ষ কোন রাজনৈতিক অর্থনৈতিক স্বার্থের বিরোধ ও নেই তবুও দুদেশের সম্পর্ক কখনো গত পাঁচ দশক সময়ে তেমন কোন তাৎপর্য পূর্ণ অগ্রগতি হয়নি। কারণ একাত্তরের রক্তাক্ত সংঘাতের স্মৃতি।তদুপরি দুহাজার ষোল সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কয়েক জন পাকিস্তান পন্হী রাজনৈতিক নেতার ফাঁসি কার্যকর করলে দুই দেশের সম্পর্ক একেবারে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যায়।

কারণ পাকিস্তান এই বিচারকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ কাজ বলে মনে করে এবং এই বিচার এর বিরোধিতা করে আসছিল। এর মধ্যে সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পরথেকে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের নুতন দিগন্ত উন্মোচনের চেষ্টা করতে থাকেন সাবেক এই বিশ্বক্রিকেট তারকা। তাঁর এই অব্যাহত প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় দুদেশের সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে বলে মনে হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক এই সম্পর্কের উন্নতি বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক সুফল ও আনতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বর্তমানে পাকিস্তান বাংলাদেশ বানিজ্যিক সম্পর্ক বাংলাদেশের অনুকূলে নয়।বাংলাদেশে পাকিস্তানের রপ্তানি যেখানে পাঁচ শত মিলিয়নের বেশি সেখানে বাংলাদেশ রপ্তানি করে মাত্র ছত্রিশ মিলিয়ন এর মত। এই দুরত্ব কমিয়ে এনে দুদেশের বানিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে উভয় দেশ সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এছাড়া দুই দেশ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ও সহযোগিতা বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ আছে কারণ দুদেশর মানুষের ধর্মীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটা নিবিড় বন্ধন রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ের ভু-রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটা পটপরিবর্তনশীল মূহুর্তে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দুই নেতার সম্পর্ক উন্নয়নের এই তাগিদ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। যদিও সন্দেহ জাগতে পারে বাংলাদেশ ভারতের প্রভাব বলয় অতিক্রম করে এই সম্পর্ক কতটুকু এগিয়ে নিতে পারবে। তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু সামপ্রতিক পদক্ষেপ এই ক্ষেত্রে বেশ প্রগতিশীল বলে মনে হয়। তিনি ভারতের প্রভাব বলয়ের ভিতরে থেকে ও ভারতের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীনের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে অনেক সাহসী পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়েছেন।তিনি পদ্মাসেতু কর্ণফুলী টানেল সহ অনেক মেগাপ্রজেক্টে চীনের সহযোগিতা নিয়ে চীনকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য এক উন্নয়ন সহযোগীতে পরিনত করেছেন এমনকি চীন থেকে সাবমেরিন ক্রয় সহ কিছু কৌশল গত অস্ত্র ক্রয় সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ও চীন বাংলাদেশ সম্পর্ক কে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

আবার রাশিয়ার সাথে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চুক্তি করে শেখ হাসিনা সরকার হয়ত বাংলাদেশ কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটা নিরপেক্ষ অবস্থানে উন্নিত করার ও ভাবমূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করছেন। যদিও তাঁর সমালোচকরা তাঁর বিরুদ্ধে ভারতকে বিনা শুল্কে বা নাম মাত্র শুল্কে ট্রান্জিট সহ অতিরিক্ত বানিজ্যিক ও রাজনৈতিক সুবিধা প্রদান করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিকটতম বৃহৎ প্রতিবেশী দেশটির সহযোগিতা ও সমর্থন লাভের অভিযোগ করে আসছেন প্রায় দুই দশক সময় ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার ভু রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্হিতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারের এই কুটনৈতিক পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ও দেশের অভ্যন্তরে বেশ কৌতুহল সৃষ্টি করেছে। অনেকে শেখ হাসিনা সরকারের এই কুটনৈতিক উদ্যোগ কে বেশ সাহসী ও ভারসাম্য মূলক বলে প্রসংশা ও করছেন। তবে এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশ এই কূটনীতিক উদ্যোগ সাফল্যের সাথে কতটুকু এগিয়ে নিতে পারেন!

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.