--- বিজ্ঞাপন ---

আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাবস্থা ঘোষণা করেছে আজারবাইজান

জরুরী অবস্থা জারী করেছে আর্মেনিয়ার প্রেসিডেন্ট

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম:

আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে বিরোধপূর্ণ নগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আবারও ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিককালে থেমে থেমে সীমান্ত সংঘর্ষের ছোটখাটো ঘটনা ঘটছিল। তবে ২৭ সেপ্টেম্বর রোববার সকাল থেকে চলতে থাকা একে অপরের অবস্থানের উপর বিরতিহীন জোরদার  আক্রমণ শুরু করেছে। আজারবাইজান বলছে আর্মেনীয় সৈন্যরা তাদের সেনা অবস্থান ও বেসামরিক বিভিন্ন স্থানের উপর রোববারের উস্কানিমূলক হামলার জবাবে তারা পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েব আর্মেনিয়া কর্তৃক দীর্ঘদিন দখলে রাখা নগর্নো-কারাবাখ দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত  ঐ অঞ্চলে যুদ্ধাবস্থা ঘোষণা করেছে। সেদেশের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আজারটেক এই প্রতিবেদন তৈরীকালে এখবর দেয়।

আজারবাইজানের সংবাদ সংস্থা ট্রেন্ড রাজধানী  বাকু থেকে সেদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্ণেল জেনারেল জাকির হাসানবের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে,  ইতিমধ্যেই আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা বূহ্য ভেঙ্গে পড়েছে এবং তারা পিছু হটছে। সাতটি গ্রামসহ মুরুদবাগ নামের পাহাড়ী  সামরিক দিক থেকে কৌশলগত চড়া আজারবাইজানের দখলে এসেছে।  থেকে উভয় পক্ষ একে অপরের অবস্থানে সর্বাত্মক হামলা চালাচ্ছে। আর্মেনিয়া আজারবাইজানের ট্যাংক ও হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার দাবী করেছে। এর আগে অনুরুপ অভিযোগ এনে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী  নিকল পাসনিয়ানও  সেদেশে জরুরী অবস্থা জারী করেছে এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে রিজার্ভ তলব করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমসমূহ সংঘর্ষস্থল থেকে ক্ষয়ক্ষতির সর্বশেষ আপডেট পাঠাচ্ছে। বিশ্বের  বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা যুদ্ধ বন্ধের ডাক দিয়েছে পাশাপাশি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব‌্যাহত রেখেছে । রাশিয়া, ইইউ, ন্যাটো ,ওএসসিইসহ বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয় দেশকে শান্ত থাকতে বলছে এবং যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিরোধের সূত্রপাত

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ই্উনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার প্রাক্কালে আজারবাইজান ৯১’র  আগস্টে এবং আর্মেনিয়া সেপ্টেম্বরে স্বাধীন দেশ হিসেবে  আত্নপ্রকাশ করে। সেসময় নগর্নো-কারাবাখ নামক ৪,৪০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল এবং সেখানে বসবাসরত প্রায় ১লক্ষ ৪৭ হাজার খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ  মুসলিম সংখ‌্যাগরিষ্ঠ আজারবাইজানের ভাগে পড়ে যায়। তখন থেকে তারা স্বায়ত্বশাসনের দাবী জানাতে থাকে। এ সুযোগে আর্মেনিয়া আচমকা এক ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে আজারবাইজানের একটি করিডোর অঞ্চল দখলে নিয়ে নগর্নো-কারাবাখে প্রবেশ করে । এবং ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত  দীর্ঘ ৪ বছরের  যুদ্ধে ঐ এলাকাসহ আজারবাইজানের ২০ শতাংশ অঞ্চল দখল করে নেয়। পরবর্তীতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পর উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজী হয়। ঐ  যুদ্ধে ৩০ হাজার প্রাণহানি ও ১০ লক্ষ মানুষ গৃহহীণ হয়। নিরাপত্তা পরিষদের চার দফা প্রস্তাব অনুযায়ী আজারবাইজানের দখলকৃত নগর্নো-কারাবাখ অঞ্চল  সে দেশকে ফিরিয়ে দেয়ার কথা বলা হলেও নানা টালবাহানায় আর্মেনিয়া অদ্যাবধি দখলিকৃত ঐ এলাকাগুলো থেকে সরে আসেনি। যুদ্ধবিরতির প্রাক্কালে গঠিত অপর আন্তর্জাতিক সংস্থা ওএসসিই ( অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি এন্ড কোঅপারেশন অব ইউরোপ ) মিনস্ক গ্রুপ  ( রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স এই গ্রুপে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করে আসছে)  সংগঠনটি দুদেশের বিরোধ মিমাংসার দায়িত্ব নেয়। কিন্তু এতদিনেও তারাও কোন ফলপ্রসূ কিছু করতে ব্যর্থ হয়। ফলে দুদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনা লেগেই আছে।

আয়তন ও জনসংখ্যা

আজারবাইজান-জনসংখ্যা ২০২০ সালের জাতিসংঘের ওয়াল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী ১ কোটি ১ লক্ষ ৩৯ হাজার । জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ শিয়া মুসলিম বাকীরা সুন্নী। দেশটির আয়তন ৮৬ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জ্বালানি তেল রফতানীকারী আজারবাইজানের রাজধানী বাকু। সেনাবাহিনী-৬৭ হাজার, রিজার্ভ ৩ লক্ষ। ট্যাংক-৬৬৫টি। সাঁজোয়া যান ১৬৩৭টি। আর্টিলারি সব মিলিয়ে ৭৪০। জঙ্গী বিমান-মিগ-২৯, সুখোই-২৪ সহ বিমানের মোট সংখ‌্যা ১২৭। এছাড়া তুরস্ক থেকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র, ইসরাইল সহ বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রয় করা বিপুল অত‌্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীতে। নৌ বাহিনীতে রয়েছে ৩১ টি বিভিন্ন শ্রেণীর যুদ্ধ জাহাজ। তুরস্কের সৈন‌্য ও এফ-১৬ জঙ্গী বিমানও দেশটিতে মোতায়েন রয়েছে। তুরস্ক যুদ্ধে আজারবাইজানের একজন কট্টর সমর্থক।

আর্মেনিয়া- অপরদিকে আর্মেনিয়ার জনসংখ্যা ২০২০ সালের একই পরিসংখ্যানে ২৯ লক্ষ ৬৩ হাজার। প্রায় সকলেই খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী। আয়তন ২৮ হাজার ৪৭০ বর্গকিলোমিটার। রাজধানী ইয়েরেবান। সেনাবাহিনী-৪৫ হাজার, রিজার্ভ- ২লক্ষ । ট্যাংক-৫২৯টি। জঙ্গী বিমান-৪২টি। এছাড়া ১০০০ বিভিন্ন সাঁজোয়া যান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত দেশটি। গ্রীস সহ ন্যাটো জোটের বিভিন্ন দেশ রাশিয়া দেশটিকে আধুনিক সমরাস্ত্র সরবরাহ করছে।###২৭.৯.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.