--- বিজ্ঞাপন ---

গণতন্ত্রের মরণদশা কি শুরু হলো, মার্কিন নির্বাচন কি সুষ্ঠু হবে

0

কাজী ফেরদৌস##

সামনে ঘনিয়ে আসছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এরই মধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে সংশয় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনে। সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হবেতো এই নির্বাচন? এই প্রশ্ন এখন সবার মনে। কারন একটাই।বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর যত অপকৌশল! ক্ষমতায় থেকে যাবার জন্য এত নোংরা খেলা অতীতে কোন আমেরিকান প্রসিডেন্ট খেলেছেন কিনা তার নজির খুঁজে পাওয়া দুস্কর । প্রথমে তিনি পোষ্টাল ব্যালট বন্ধ করার অপচেষ্টা করেছেন। কারণ তাঁর ধারণা ব্যাপক হারে পোস্টাল ভোট পড়লে তিনি হেরে যাবেন। আমেরিকার মানুষের সাধারণত ভোট কেন্দ্রে যেতে অনিহা আছে। সুতরাং ভোট প্রদানের হার খুব কম হয়ে থাকে । তদুপরি এখন আছে করোনা ভীতি। সুতরাং ভোটার উপস্থিতি আরো কম হবার সম্ভাবনা। তাই মানুষের আগ্রহ পোস্টাল ব্যালটের প্রতি।

বিশ্লেষকরা মনে করেন পোস্টাল ব্যালটের ব্যাপক ব্যবহার ভোট প্রদানের হার বাড়বে। এতেই ট্রাম্প মহাশয়ের আপত্তি। যত বেশি ভোট পড়বে তত তাঁর ভরাডুবির সম্ভাবনা। অতএব পোস্টাল ব্যালট ঠেকাতে ছলচাতুরী অনেক করলেন। এখন আবার পুরো দেশ ব্যাপি নানা রকম বর্ণবাদী হাঙ্গামা শুরু হয়েছে তাঁর উস্কানীমূলক কর্মকাণ্ডে।তিনি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন আমেরিকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও শেতাঙ্গদের নিরাপত্তা রক্ষায় তাঁর জুড়ি নেই। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় যাবার জন্য তিনি বর্নবাদ উস্কে দিচ্ছেন।
আমেরিকানরা মুখে যত মানবাধিকার ও বর্ণ সমতার কথা বলে ততটা আন্তরিক ভাবে ওসব মানবিক মূল্যবোধ লালন করে না।তারা চায়না কালো ও পীত বর্নের মানুষ গুলো শেতাঙ্গ প্রধান মফস্বল শহর গুলোতে ভীর করুক। ওসব এলাকা গুলো হলো তাদের নিভৃত আবাসস্থল। সেখানে তারা আইন শৃঙ্খলার কোন অবনতি চায়না। ট্রাম্প শেতাঙ্গ জনগোষ্টীর এই স্পর্শকাতর জায়গাটায় আঘাত করে শেতাঙ্গ বর্নবাদ উস্কে দিয়ে গতবারের মত এবার ও বাজিমাত করতে চায়।প্রয়োজনে ভোটের উপর অনৈতিক ভাবে নানান ধরনের প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছেন। এতদিন আমেরিকার নির্বাচনী প্রক্রিয়ার যে স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা ছিল প্রথমবার ২০০০ সালে জর্জবুশ জুনিয়র এর নির্বাচন থেকে আমেরিকার নির্বাচন কলঙ্কিত হতে শুরু করে ।সেই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছিল এবং কিছু ভোট পুনঃ গননার দাবি উঠেছিল। অথচ আমেরিকার ফেডারেল কোর্ট আমেরিকার গনতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষার কথা বলে ডেমোক্র্যাটদের আবেদন খারিজ করে দিয়ে বুশ কে নির্বাচিত ঘোষণা করে। তখন মানুষের মাঝে এই ধারণা জন্মেছিল যে Bush was elcted President not by popular election but by judicial decision.সেই দিন থেকে আমেরিকার নির্বাচন প্রশ্ন বিদ্ধ হতে শুরু করে যার আর একধাপ অবনতি হয় দ ‘হাজার ষোলো সালের নির্বাচনে ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার সময়।সেই নির্বাচনকে একটা কারসাজির নির্বাচন এবং রাশিয়ার মত একটা পরাশক্তির সেই নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে প্রভাব খাটানোর প্রকাশ্য অভিযোগ উঠেছিল। বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠী ও এখন তাদের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন প্রক্রিয়াকে জায়েজ করার জন্য আমেরিকার নির্বাচনে কারচুপির কথা বলে!বর্তমান নির্বাচনও বিদেশি হস্তক্ষেপ নিয়ে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা সংস্থা গুলোর কপালে এখন চিন্তার ভাজ পড়েছে। রাশিয়া চায় গেলবারের মত এবার ও ট্রাম্প জিতে আসুক।তার সাথে আছে ভারত, ইজরায়েল ও আরবের শেখের গোষ্ঠী। অপরপক্ষে চীন,ইরান তুরস্ক সহ অনেকে চাচ্ছে জোবাইডেন নির্বাচিত হউক আর ট্রাম্প বিতাড়িত হোক। ভাবখানা এই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কে হবে সেটা নির্ধারণ করবে বাইরের কিছু দেশ আমেরিকার জনগণ নয়! হায়রে গনতন্ত্র!

গত এক যুগ ধরে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে গনতন্ত্রের সূতিকাগার খ্যাত বৃটেনের সরকার ব্যবস্থা ও। একটার পর একটা নির্বাচন হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা আর না থাকা নিয়ে। অথচ সুরাহা হচ্ছেনা।এখন ত্যক্ত বিরক্ত বৃটিশ জনগণ চিন্তা করতে শুরু করছে পার্লামেন্টারি গনতন্ত্র বৃটেনে টিকে থাকতে পারবে কিনা?বস্তত পক্ষে সমগ্র ইউরোপের গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্হায় একধরনের সংকটের আভাস স্পষ্ট হচ্ছে। তার মূল কারণ কিন্তু অর্থনৈতিক দুর্গতি। করোনা পেনডেমিক সেই দুর্গতি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বস্তুত পক্ষে পশ্চিমা পুঁজিবাদী অর্থনীতি এখন এক সংকটকাল অতিক্রম করছে যেই অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল ঔপনিবেশিক শোষণ -কখনো প্রত্যক্ষ কখনোবা পরোক্ষ। ঔপনিবেশিক শোষণের পথ যত সংকুচিত হচ্ছে পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক সংকট ও ততই ঘনিভুত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক আই এম এফ এর নিত্য নুতন ফন্দিফিকির ও তা আর সামাল দিতে পারছে না। অর্থনৈতিক দুরবস্হার সাথে সাথে ভেঙে পরছে তাদের তথাকথিত গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্হার ভিতর কাঠামো। কারণ এই কাঠামোটার ভিত্তি ও কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসন শোষন। ফলে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার সাথে সাথে ভেঙে পরছে পুঁজিবাদী গনতন্ত্রের কাঠামো । এর সাথে সাথে বিস্তার লাভ করছে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্হার প্রবনতা। বিকাশ লাভ করছে বর্ণবাদ, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সহিংসতা।
আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী যেটাকে বলা হত বিশ্বের বৃহত্তম গনতন্ত্র সেটার কি অবস্থা এখন? ডোনাল্ড ট্রাম্প যে শেতাঙ্গর শ্রেষ্ঠত্ব ও বর্ণবাদী জিগির তুলে আমেরিকার বহুত্ববাদী চেতনা কে হত্যা করে বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে নির্বাচিত হয়ে এসেছিলেন একই পন্থা অবলম্বন করে নির্বাচনী বৈতরণি পার হলেন নরেন্দ্রবাবু। তিনি হিন্দুত্ববাদের জয়োগান গেয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদী চেতনা উস্কে দিয়ে বহুত্ববাদী ভারতের ধারণাকে কবর দিয়ে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার সংকল্পবদ্ধতায় এগিয়ে যাচ্ছেন। একই সাথে নিকট প্রতিবেশীদের অভ্যন্তরীন শাসন ব্যবস্হার উপর প্রভাব বিস্তার করার অপচেষ্টার সাথে ও জড়িয়ে পরেছেন।পৃথিবীর সর্বকালে শাসককূল জনগনের দৃষ্টি আসল সমস্যা থেকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য কখনো জাতীয়তাবাদের জিগির, কখনো ধর্মীয় উন্মাদনা কখনো ভাষা ও সংস্কৃতির জিগির তোলে আবার কখনো সৃষ্টি করে যুদ্ধোন্মাদনা। এখনো আবার শুরু হয়েছে সেই পুরাতন খেলা।

আসলে পৃথিবীর সর্বযুগে রাষ্ট্র শাসন ব্যবস্হা গড়ে উঠেছিল তার অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর। যেমন রাজতন্ত্র ও সামন্তবাদের ভিত্তি ছিল কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি তেমনি করে আধুনিক গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্হা গড়ে উঠেছিল শিল্পবিপ্লব পরবর্তী পুঁজিবাদী অর্থনীতির ভিত্তির উপর।কিন্তু অল্প কিছুদিনের মাথায় তার অসারতা প্রমানিত হতে শুরু করলে তার এন্টিথিসিস হিসেবে আবির্ভাব ঘঠে সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্হা।কিন্তু ৭০ বছরের মাথায় নব্বুইয়ের দশকে ভেঙে পড়ে সমাজতন্ত্র নামক ইউটোপিয়া।প্রমাণিত হয়ে যায় এর অন্তঃসার শুন্যতা।তবে এখনো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে টিকে আছে পুঁজিবাদ ও গনতন্ত্র।কারণ পুঁজিবাদী অর্থনীতির শক্তি নবায়নের সক্ষমতা আছে বলে মনে করাহয়।তবে আমার ধারণা পুঁজিবাদী অর্থনীতির শক্তি নবায়নের প্রধান ভিত্তি হচ্ছে অবাধ ঔপনিবেশিক লুন্ঠন। সেটা সংকুচিত হবার সাথে সাথে তাদের মরন দশা ও ঘনিয়ে আসছে।
তবে বিশ্বের দেশে দেশে যে ভাবে কর্তৃত্ববাদী শাসক গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে এবং বিশ্বের অর্থনৈতিক সংকট যত ঘনীভূত হচ্ছে মনে হচ্ছে গনতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতি ও ভেঙে পরবে।ভেঙ্গে পড়বে বিশ্বের শক্তির বর্তমান ভারসাম্য। হয়ত এই ধ্বংসের ছাইভষ্ম থেকে জন্ম নেবে নুতন কোন শাসন পদ্ধতি, নুতন কোন অর্থ ব্যবস্থা।
চারদিকে এখন রণদামামা বাজছে । সাজ সাজ রব শুনা যাচ্ছে চারদিকে। রন দামামা বাজাচ্ছে রাশিয়ার পুতিন, আমেরিকার ট্রাম্প, চীনের প্রেসিডন্ট জি জিন পিং,ভারতের মোদি ইজরায়েলের নেতানিয়াহু, উত্তর কোরিয়ার কিম জং। সবাই নিজ নিজ অস্ত্রে শান দিচ্ছে। যে কোন মূহুর্তে শুরু হতে পারে ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞ। এই ধ্বংসের মধ্যে থেকেই হয়তোবা সৃষ্টি হবে নুতন কোন ওয়ার্ল্ড অর্ডার। সেটা দেখার সৌভাগ্য হয়ত আমার আপনার মত অনেকের না ও হতে পারে।###২৯.৯.২০

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.