--- বিজ্ঞাপন ---

বাংলাদেশে পেয়াঁজ সিন্ডিকেট সক্রিয়, তাই দাম কমছে না

কলকাতায় ৪০, বাংলাদেশে ৯০

0

বিশেষ প্রতিনিধি##
নিত্য পণ্যের বাজারে সরবরাহ বাড়লেও কমছে না পেঁয়াজের দাম। আগের বেড়ে যাওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের পেঁয়াজ। খুচরা বাজারে পেয়াঁজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০ টাকা। একই পেয়াঁজের কলকাতায় বাজার মূল্য ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ভারত থেকে আমদানি এখনও বন্ধ থাকার কারনে পেয়াঁজের মূল্য স্বাভাবিক হচ্ছে না বলে ব্যবসায়ীদের দাবি। তবে বিষয়টি কতটুকু সত্য এ নিয়ে সংশয় আছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বাজারে কয়েকদিন পেয়াঁজের সঙ্কট যাচ্ছে। পাকিস্তানী পেয়াঁজ ও মিয়ানমারের পেয়াঁজ দু’একদিনের মধ্যে বাজারে ঢুকবে বলে জানা গেছে।
পেয়াঁজ নিয়ে অস্থিরতা পরিকল্পিত কিনা এ নিয়ে সন্দেহ দানা বাধছে। কারন একইভাবে গত বছর এ সময়ে পেয়াঁজের দাম নাগালের বাইরে ছিল। যথারীতি ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত হঠাৎ করে বাংলাদেশে পেয়াঁজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল। এর আগেও কিছু সময়ের জন্য এ অবস্থা বিরাজ করে। বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারনা বিষয়টি একটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের পরিকল্পিত। ভারতে পেয়াঁেজর সঙ্কট নেই। পেয়াজেঁর দামও নাগালের মধ্যে। গত এক সপ্তাহের কলকাতার বাজারে পেয়াজেঁর দাম ৫ থেকে ১০ টাকা উঠানামা করলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে একই সময়ে একইভাবে কেন পেয়াঁজ রফতানি ভারত বন্ধ করে দেয়। কাদের সুবিধার জন্য এ কাজটি করা হয় তা তদন্ত করার প্রয়োজন বলে সাধারন মানুষ মনে করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম যখন অস্বাভাবিকভাবে বাড়লো তখন ব্যবসায়ীদের অজুহাত ছিল সরবরাহ কম। এরপর বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে সরকার। ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর মিয়ানমারে রপ্তানিমূল্য ছিল কেজিতে ৩৬-৩৮ টাকা। সেই দরে কেনা পেঁয়াজ দেশে আসার পর পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭২ টাকা দরে। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে ঢুকেছে। তারপরও কমছে না পেঁয়াজের দাম। আগের মতো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মসলাজাতীয় এ পণ্যটি। দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাই মোকামে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৬৫-৭০ টাকা, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৭০-৭২ টাকা, পাকিস্তানের পেঁয়াজ ৬২-৬৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৭৪-৭৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আড়তদার ও ব্যবসায়ী সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ছিল কেজিপ্রতি ৩৬-৩৮ টাকা। তবে ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর বিকল্প দেশগুলোও পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুলবুল জানান, পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে আসা ২২৮ মে. টন পেঁয়াজের ছাড়পত্র দিয়েছি। পেঁয়াজ আমদানির জন্য ৩৪৫টি অনুমতিপত্র (আইপি) ইস্যু করেছি আমরা। এর বিপরীতে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯১২ মে. টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এসব আইপি নিয়েছেন আমদানিকারকেরা। আমদানি করা পেঁয়াজ ইতিমধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করেছে। এই দিকে চাক্তাই আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান খালেদ জানান, সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও বাজারে পেঁয়াজের সংকট রয়েছে। আমদানি ও ক্রেতা কম থাকায় এক সপ্তাহ ধরে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে সামান্য পরিমাণে পেঁয়াজ এসেছে, তা দিয়ে দেশের একদিনের চাহিদাও মেটানো যাবে না। তিনি আরো জানান, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বন্দর থেকে খালাসের আগেই ৬৫ টাকায় বেচাকেনা হয়। পাইকারি বাজারে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। চাহিদার তুলনায় সংকট থাকায় দাম কমছে না। তবে সরবরাহ বাড়ায় দেশি পেঁয়াজের দাম ৭৮-৮০ টাকা থেকে দুই টাকা কমেছে। আমদানি বাড়লে আরও কিছুটা কমবে।
সূত্র মতে, দেশে পেয়াজেঁর চাহিদা ৩০ থেকে ৩২ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদনের পরিমানও গড়ে ২২ থেকে ২৩ লাখ মেট্রিক টন। ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন পেয়াজঁ আমদানি করে থাকে। দেশে বরবারই পেয়াঁজ মজুদ থাকে। যেহেতু পণ্যটি পচনশীল তাই অনেকে বেশি দামের আশায় পেয়াজঁ ধরে রাখে। ফলে বিপুল পরিমান পেয়াঁজ নষ্ট হয়। বাংলাদেশের পেয়াঁজের ঘাটতির বাজারটি ভারতের দখলে। পাকিস্তান ও মিয়ানমার থেকে পেয়াঁজ আসলেও ভারতের মতোন আসে না। সঙ্কটকালে কেউ আমদানি করলে এ দু’দেশ থেকে পেয়াঁজ আসে। ভারতের পেয়াঁজের সরবরাহ সবসময় স্বাভাবিক থাকে বলে পেয়াঁজ ব্যবসায়ীরা অন্য কোন দেশের দিকে নজর দেন না। আর পেয়াঁজ ভারত থেকে আনতে যত বেশি সুবিধা অন্য দেশ থেকে আনার ক্ষেত্রে সে রকম সুবিধা নেই। পচনশীল বলে ব্যবসায়ীরা ঝুকিঁ নেন না। আর এ সুযোগটি সাময়িক সময়ের জন্য গ্রহণ করে পেয়াঁজ সিন্ডিকেট। গত বছর এ সময়ে একই পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর এবং এ বছর ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারে সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর পাইকারি বাজারে ৩৫-৩৬ টাকায় বিক্রি করা পেঁয়াজ দুই দিনের ব্যবধানে ৭০ টাকা ছুঁয়ে যায়। খুচরা বাজারে ৮০-৯০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এ দামটি এখনও অব্যাহত আছে।
এদিকে জানা গেছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বরের আগে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানির জন্য করা এলসির পেঁয়াজের চালানগুলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঢুকার সম্ভাবনা আছে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। হিলি দিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানির অনুমতি চেয়ে আদালতে ভারতের রফতানিকারকরা একটি রিট আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। এ রীটের প্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বরের আগে খোলা এলসির সংখ্যা ও পরিমাণ জানাতে ভারতীয় রফতানিকারকদের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। দেশটির রফতানিকারকরা গত ২৫ সেপ্টেম্বর মুম্বাইয়ের আদালতে রিট আবেদন করেন। আগামী ৭ অক্টোবর এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।### ৩.১০.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.