--- বিজ্ঞাপন ---

আজারবাইজানের পক্ষে ইসরাইল! যুদ্ধ ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। শনিবার আজারবাইজান আর্মেনিয়ার দুটি শহর দখলে নেয়ার পর রবিবার আর্মেনিয়া মিসাইল হামলা চালিয়েছে আজারবাইজানের গানজা শহরে। এটি আজারবাইজানের একটি বসতি এলাকা বলে জানা গেছে। তবে আর্মেনিয়া বিষয়টি অস্বিকার করেছে। বলেছে, তারা বসতি এলাকায় কোন হামলা চালায় নি। আজারবাইজান বলেছে, তাদের এ হামলায় ১ জন নিরপরাধ লোক মারা গেছে আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। আজারবাইজান এ ধরনের হামলার জবাব ভয়াবহ হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারন করেছে।

যুদ্ধ শুরুর ৬ষ্ঠ দিনে আর্মেনিয়ার দখলে থাকা নগর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর আজারবাইজানের সৈন্যরা মুক্ত করেছে। বিভিন্ন পশ্চিমা সংবাদ সংস্থাসহ রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস ৪ অক্টোবর  যুদ্ধের এ সর্বশেষ সংবাদ দেয়।  গত ২ অক্টোবর মাদাগিজ শহর দখলের পর ৪ অক্টোবর রোববার আজারবাইজানের সৈন্যরা জেবরাইল শহরটি দখলমুক্ত করেছে বলে জানিয়েছে। রুশ বার্তা সংস্থা তাস আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এর টুইট বার্তার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। ওই টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট আলিয়েভ জেবরাইল শহর ও আশেপাশের বেশ কয়েকটি এলাকা আজারবাইজানের সৈন্যরা দখলমুক্ত করেছে বলে জানান। শহরটি ১৯৯৩ সালের ইতিপূর্বেকার যুদ্ধে আজারবাইজানের এই শহরটি আর্মেনিয়া দখল করে নেয়।  রুশ বার্তা সংস্থা তাস আরও জানায়, আজারবাইজানের সৈন্যরা গত শনিবার মাদাগিজ শহর ও পাশ্ববর্তী  কয়েকটি এলাকাও  দখলে নেয়। আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শহর দুটির দখল ও সেখানে আজারি পতাকা উত্তোলনের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করেছে। এছাড়া আর্মেনীয় সৈন্যদের ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও অন্যান্য সামরিক লক্ষ্যস্থল ধ্বংসের ছবি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আজারি বাহিনীর হামলা প্রতিহত করা হয়েছে বলা হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বও দুদেশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

আজারি শহর গাঞ্জার বেসামরিক স্থানসমূহে আর্মেনীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

এদিকে আজারবাইজানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গাঞ্জার বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আর্মেনীয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আজারবাইজান।  বেসামরিক স্থান স্কুল ও ঘরবাড়ীতে ঐ হামলায় ১ জন নিহত ও শিশুসহ বেশকয়েকজন আহত ও  বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইহলাম আলিয়েভ এর জবাবে বলেছেন, আর্মেনিয়ার যে যে শহর থেকে আজারবাইজানের বেসামরিক এলাকায় হামলা হচ্ছে ঐ শহরগুলো নিশ্চিহ্ন  করে দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। অপরদিকে আর্মেনিয়া অভিযোগ করেছে আজারবাইজান নগর্নো-কারাবাখের রাজধানী  স্টিফানাকার্ট এ ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের লেবাননের বার্তা সংস্থা এএমএন জানায়, রাজধানী  স্টিফানাকার্ট এর উপর প্রচন্ড গোলাবর্ষন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে আজারবাইজান। বার্তা সংস্থাটি কয়েকটি পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে নিশ্চিত করেছে যে, আজারবাইজানের সৈন্যরা নগর্নো-কারাবাখের অভ্যন্তরের অত্যন্ত কৌশলগত পাহাড়ী  চূড়া দখলে নিয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএমএন আরও জানায়, বাকু এপর্যন্ত যুদ্ধে আর্মেনীয় বাহিনীর ২৩০টি ট্যাংক, ২৫০টি গোলন্দাজ কামান, ৩৮টি বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, ১০ টি কমান্ড পোস্ট, ১৩০টি সাঁজোয়া যান, ৭টি অস্ত্রাগার, ১টি এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বংস করার দাবী করেছে।

নাগার্নো-কারাবাখ নিয়ে দুই দেশের লড়াই এবং উত্তেজনা আর তীব্র হয়েছে

বার্তা সংস্থা বিবিসি জানায়, আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গানজায় আর্মেনিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এই হামলার পর নাগার্নো-কারাবাখ নিয়ে দুই দেশের লড়াই এবং উত্তেজনা আর তীব্র হয়েছে।এর আগে আজারবাইজানের বাহিনী নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চলের রাজধানী স্টেপানাকার্টে একটানা গোলাবর্ষণ করে। নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চলটি আনুষ্ঠানিকভাবে আজারবাইজানের হলেও সেটি জাতিগত আর্মেনিয়ানদের নিয়ন্ত্রণে। বিতর্কিত এই অঞ্চলটি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে গত বিশ বছরে এটি সবচেয়ে গুরুতর সংঘাত।

স্বঘোষিত এই কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে, তাদের আঞ্চলিক রাজধানী স্টেপানাকার্টে আজারবাইজানের সেনাবাহিনী গোলাবর্ষণ করার পরে তারা আজারবাইজানের গানজার সামরিক বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে।তবে সেখানে কোন সেনা সদস্য হতাহত হয়নি বলে দাবি করেছে আজারবাইজান।গানজা হচ্ছে আজারবাইজানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, প্রায় তিন লাখ ৩০ হাজার মানুষ থাকে এই শহরে।আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় এই শহরটি লক্ষ্য করে আর্মেনিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন, যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যাচ্ছে। নাগার্নো-কারাবাখের বিচ্ছিন্নতাবাদী বাহিনী দাবি করছে, তারাও গানজা শহরে হামলা চালিয়ে সেখানকার বিমান ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছে।

কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আজারবাইজান আর্মেনিয়ার দ্বন্দ্ব

এদিকে আজারবাইজানের বাহিনীওনাগার্নো-কারাবাখের রাজধানী স্টেপানাকার্টে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রাখে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। শহরে কেবল সাইরেন আর গোলা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে থেমে থেমে।স্টেপানাকার্ট বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অসংখ্য মানুষ বাসে করে শহর ছেড়ে যাচ্ছেন।

দুই দেশেই পরস্পরের বিরুদ্ধে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলার অভিযোগ তুলছে

এ পর্যন্ত উভয়পক্ষে প্রায় ২৪০ জন নিহত হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত ৩০ জন বেসামরিক মানুষ। মাত্র এক সপ্তাহ আগে এই লড়াই শুরু হওয়ার পর এখন তা আরও বিস্তৃত হচ্ছে।আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এই সংঘাতে উভয় পক্ষেরই সামরিক এবং বেসামরিক অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে। যদিও হতাহতের এসব তথ্যের ব্যাপারে নিরপেক্ষ সূত্রে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে যে, তাদের সেনাবাহিনী রবিবার ওই অঞ্চলের সাতটি গ্রাম নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। অন্যদিকে নাগার্নো-কারাবাখের দাবি, তাদের সৈন্য তাদের অবস্থানের দিক থেকে বেশ ভালোরকম অগ্রগতি করেছে।সেখানে যুদ্ধ বিরতির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে আহ্বান জানাচ্ছে, কোন দেশই এখনো তাতে সাড়া দেয়নি।

ইসরাইলের সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র তুর্কী ড্রোন যুদ্ধকে আজারবাইজানের অনুকূলে নিয়ে যাবে

আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যেকার গত কয়েকদিনের যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানা মডেলের অত্যাধুনিক সব অস্ত্রশস্ত্র। তবে আজারবাইজানের সংগ্রহে থাকা ইসরাইলের হার্পি ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী  সিস্টেমটি এ যুদ্ধে বিশেষ ভুমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঐ সিস্টেমটি একেবারেই নতুন। ইসরাইল ও পশ্চিমা সমর বিশারদরা দাবী  করছেন, এই হার্পি ড্রোন সিস্টেম রাশিয়ার বহুল আলোচিত অন্যতম সেরা এস-৪০০ ও এস-৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম। অবশ্য গত কয়েকদিনের যুদ্ধে আজারবাইজান যে সকল লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুল হামলা চালিয়েছে  এ থেকে ঐ সকল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের ধরণ সহজেই আঁচ করা যায়। গত ২ অক্টোবর নগর্নো-কারবাখের সাথে আর্মেনিয়ার যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপুর্ন সেতুটি নির্ভুল নিশানায় আঘাতে ধ্বংস করা হয় । আজারবাইজানের সৈন্যরা সেতুটি উড়িয়ে দিতে ইসরাইলের তৈরী  ৪০০কিলোমিটার দূরপাল্লার অত্যাধুনিক ব্যালস্টিক ‘লোরা’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সর্বাধুনিক এসব সরঞ্জাম, তুরস্কের বিধ্বংসী  ‘ড্রোন’  ব্যবহারের ফলে যুদ্ধের ফলাফল আজারবাইজানের দিকে বদলিয়ে দেবে।

পাকিস্তানের সৈন্য বিতর্ক

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আজারবাইজানের  পক্ষে এ যুদ্ধে তুর্কী  সৈন্যদের মত সেদেশে  পাঠিয়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ বের হয়েছে। ভারতের ইউরেশিয়া টাইমস ও কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম ৩০ সেপ্টেম্বর আর্মেনিয়ার একটি বার্তা সংস্থা ‘ফ্রি নিউজ’ এর উদ্ধৃতি দিয়ে এসংবাদ পরিবেশন করে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে এ ধরনের খবর ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে মুখপাত্র জাহিদ হাফিজ চৌদুরী ২ অক্টোবর সেদেশের ‘ডন’ পত্রিকায় বিবৃতি দেন। তিনি ওই বিবৃতিতে বলেন, ভারতের ‘টাইমস নাউ ইন্ডিয়া’ ও আরও কয়েকটি প্রচার মাধ্যমে পাকিস্তানের সৈন্য সংক্রান্ত  যে সংবাদ বেরিয়েছে তা সত্য নয়। তবে তিনি বলেছেন, পাকিস্তান সরকার আর্মেনিয়া কর্তৃক আজারবাইজানের বেসামরিক স্থাপনায় গোলাবর্ষনকে দু:খজনক অভিহিত করে অবিলম্বে এ হামলা বন্ধের জন্য আর্মেনিয়ার প্রতি আহ¦ান জানান।

দুদেশের সামরিক শক্তি আয়তন

আজারবাইজান-জনসংখ্যা ২০২০ সালের জাতিসংঘের ওয়াল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী ১ কোটি ১ লক্ষ ৩৯ হাজার । জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ শিয়া মুসলিম বাকীরা সুন্নী। দেশটির আয়তন ৮৬ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জ্বালানি তেল রফতানীকারী আজারবাইজানের রাজধানী বাকু। সেনাবাহিনী-৬৭ হাজার, রিজার্ভ ৩ লক্ষ। ট্যাংক-৬৬৫টি। সাঁজোয়া যান ১৬৩৭টি। আর্টিলারি সব মিলিয়ে ৭৪০। জঙ্গী বিমান-মিগ-২৯, সুখোই-২৪ সহ বিমানের মোট সংখ্যা ১২৭। এছাড়া তুরস্ক থেকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র, ইসরাইল সহ বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রয় করা বিপুল অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীতে। নৌ বাহিনীতে রয়েছে ৩১ টি বিভিন্ন শ্রেণীর যুদ্ধ জাহাজ। তুরস্কের সৈন্য ও এফ-১৬ জঙ্গী বিমানও দেশটিতে মোতায়েন রয়েছে। তুরস্ক যুদ্ধে আজারবাইজানের একজন কট্টর সমর্থক।

আর্মেনিয়া- অপরদিকে আর্মেনিয়ার জনসংখ্যা ২০২০ সালের একই পরিসংখ্যানে ২৯ লক্ষ ৬৩ হাজার। প্রায় সকলেই খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী। আয়তন ২৮ হাজার ৪৭০ বর্গকিলোমিটার। রাজধানী ইয়েরেবান। সেনাবাহিনী-৪৫ হাজার, রিজার্ভ- ২লক্ষ । ট্যাংক-৫২৯টি। জঙ্গী বিমান-৪২টি। এছাড়া ১০০০ বিভিন্ন সাঁজোয়া যান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত দেশটি। গ্রীস সহ ন্যাটো জোটের বিভিন্ন দেশ রাশিয়া দেশটিকে আধুনিক সমরাস্ত্র সরবরাহ করছে।### ৫.১০.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.