--- বিজ্ঞাপন ---

পরমানু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছে আর্মেনিয়া

সামরিক শক্তিতে বিশ্বে আজারবাইজানে অবস্থান ৬৪, আর্মেনিয়া ১১১

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ##

আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া যুদ্ধে পরমানু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছে আর্মেনিয়া। অপরদিকে আজারবাইজান ব্যবহার করছে ড্রোন। থেমে থেমে চলছে দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ। এরই মধ্যে কানাডা আজারবাইজানের সাথে করা অস্ত্র চুক্তি স্থগিত করেছে। তুরস্ক আজারবাইজানকে যুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য ড্রোন সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইরান তাদের সীমান্তে সংর্ঘষের ব্যাপারে হুশিযারী উচ্চারন করেছে। তবে সবকিছুর উপরে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে বিশ্বে নানা প্রশ্নের জম্ম দিচ্ছে। রাশিয়া কেন ইচ্ছে করে যুদ্ধ থামাচ্ছে না এ নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারনা একমাত্র রাশিয়া বন্ধ করতে পারে এ যুদ্ধ।

বিবিসি বলছে, সাতাশে সেপ্টেম্বর, রোববার সকালে হঠাৎ করে যুদ্ধ আরম্ভ হয়ে যাওয়ার পর আজারবাইজানের পক্ষে সমর্থন জানাতে তুরস্ক একটুখানিও বিলম্ব করেনি। আঙ্কারা সাথে সাথেই ঘোষণা করে যে এই লড়াই-এ তারা আজারবাইজানকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করবে। নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিরোধ চলছে। এই অঞ্চল কার- এই প্রশ্নে এই দুটো দেশের মধ্যে কূটনৈতিক অচলাবস্থা ছাড়াও সেখানে মাঝে মধ্যে উত্তেজনা তৈরির পাশাপাশি সামরিক সংঘর্ষও হয়েছে। তুরস্কের বক্তব্য হচ্ছে: এতো বছরের কূটনৈতিক চেষ্টা ও রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার পরেও এই সঙ্কটের কোন সমাধান হয়নি। তাই তারা মনে করে যে নাগোর্নো-কারাবাখ থেকে আর্মেনীয় বাহিনীকে হটিয়ে আজারবাইজান যদি ওই অঞ্চল দখল করে নেয় সেটাই হবে দীর্ঘদিন ধরে চলা সঙ্কটের একমাত্র সমাধান এবং এর পরেই সেখানে স্থিতি ও শান্তি ফিরে আসবে।

এদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, আজারবাইজানের পক্ষে লড়তে পাকিস্তান সেনা পাঠাচ্ছে। পত্রিকাটি লিখেছে, বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের দখলদারি নিয়ে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার সীমান্ত সংঘর্ষ ক্রমশ মোড় নিচ্ছে পুরোদস্তুর যুদ্ধের দিকে। প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগেরও হুমকি দিয়েছে আর্মেনিয়া। মুসলিম রাষ্ট্র আজারবাইজানের হয়ে লড়তে ককেশাস পর্বতে পাক সেনাও হাজির হয়েছে বলে খবর মিলেছে। এই আবহে নাগোরনো-কারাবাখ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘‘এমন ঘটনা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকর। ভারত মনে করে, দ্বন্দ্বের মাধ্যমে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। তাই সংযম বজায় রাখতে হবে। সংঘর্ষ থেকে বিরত হয়ে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।’’

রবিবার রাতে আজারবাইজান সেনা নাগোরনো-কারাবাখ সংলগ্ন আর্মেনিয়া-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের দখল নিতে অভিযান চালায়। তাদের প্রতিরোধ করে সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ আর্মেনীয় বাসিন্দাদের মিলিশিয়া বাহিনী ‘আর্টসাক ডিফেন্স আর্মি’। এরপর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আর্মেনিয়া ফৌজও। গত ছ’দিনের লড়াইয়ে দু’পক্ষের বেশ কিছু ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ধ্বংস হয়েছে। দু’পক্ষের কয়েকশো সেনার পাশাপাশি বহু অসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন। আর্মেনিয়া হুমকি দিয়েছে, প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্রবাহী দূরপাল্লার রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই প্রজাতন্ত্রের লড়াইয়ে ইতিমধ্যেই জড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বেশ কিছু দেশ।মুসলিম রাষ্ট্র আজারবাইজানকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে তুরস্ক। অন্যদিকে, খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ আর্মেনিয়ার প্রতি ঝুঁকে রয়েছে আমেরিকা, ফ্রান্স-সহ পশ্চিমী দুনিয়া এবং রাশিয়া। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্দোয়ান এদিন আর্মেনিয়া-আজারবাইজান দ্বন্দ্বে সামরিক হস্তক্ষেপ না করার বার্তা দিয়েছেন ন্যাটো ও রাশিয়াকে। তুরস্কের পার্লামেন্টে এক বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘‘অবিলম্বে সংঘর্ষবিরতি কার্যকর করে নাগোরনো-কারাবাখ-সহ অধিকৃত এলাকাগুলি থেকে আর্মেনীয় সেনাকে সরতে হবে।’’ আর্মেনিয়া সেনার অভিযোগ, আজারবাইজানের পক্ষে তুরস্ক তাদের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। আজারবাইজান সিরিয়া থেকেও ভাড়াটে সেনা এনেছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে, আর্মেনিয়ার সমর্থনে রুশ সেনার আগমনের খবর মিলেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ অবিলম্বে সংঘর্ষ বিরতির বার্তা দিয়েছেন দু’দেশকে। এদিন পুতিন রুশ সেনা আধিকারিক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নাগোরনো-কারাবাখ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসও চলতি সপ্তাহে সংঘর্ষবিরতির আবেদন জানিয়েছেন আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের কাছে।গত পাঁচ বছরে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করেছে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান। কিন্তু সাময়িক শান্তি ফিরলেও নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। এদিকে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এক টুইটার বার্তায় তিনি জানান, আমাদের সেনারা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে কারাবাখের তিনটি জেলার বেশকিছু গ্রাম শত্রুমুক্ত করেছে। গ্রামগুলো হলো- টের্টার জেলার তালিশ, জাব্রাইল জেলার মেহদিলি, চক্সিরলি, আশাগি ম্যারালিয়ান, শেবি, গাইজাগ এবং ফিজুলি জেলার আশাগি আবদুর রহমানিয়ালি। এর আগে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন, কারাবাখের মুক্ত করা মাদাগিজ শহরে আজারবাইজানের পতাকা উত্তোলন করেছে আমাদের সেনারা। মাদাগিজ এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত উভয়পক্ষের ২ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও কয়েক শ মানুষ। হতাহতদের অধিকাংশই আর্মেনীয় সেনা। বিপুলসংখ্যক সেনা, সমরাস্ত্র ও ভূখণ্ড হারিয়ে যুদ্ধ বিরতিতে রাজি হয়েছে আর্মেনিয়া। এর জবাবে আজারবাইজান জানিয়েছে, আর্মেনীয়রা নাগরানো-কারাবাখ অঞ্চল না ছাড়া পর্যন্ত তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবেআন্তর্জাতিক সামরিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০২০ সালের রিপোর্ট বলছে, সামরিক শক্তির দিক থেকে বিশ্বের ১৩৮টি দেশের মধ্যে আজারবাইজানের অবস্থান ৬৪। আর্মেনিয়া ১১১-এ। আজারবাইজানের সশস্ত্র বাহিনীর মোট সদস্য ১ লাখ ২৬ হাজার। সংরক্ষিত বাহিনীতে রয়েছে ৩ লক্ষ যোদ্ধা। অন্যদিকে, আর্মেনিয়ার সৈন্য সংখ্যা ৪৫ হাজার। সংরক্ষিত সেনা ২ লক্ষ। তবে সহযোগী ‘আর্টসাক ডিফেন্স আর্মি’-তে রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার যোদ্ধা।###৬.১০.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.