--- বিজ্ঞাপন ---

রোবট বাণিজ্যে বিশ্ব দখল করতে চায় জাপান

0

কাজী আবুল মনসুর##

রোবট বাণিজ্যে সারা বিশ্বে এগিয়ে থাকতে চায় জাপান। ঘরের কাজ থেকে শুরু করে পোস্ট অফিসের কাজও করছে এখনও রোবট। বিশেষ করে জাপানের বুড়ো মানুষের যত্নে রোবটের ব্যবটার দিন দিন বাড়ছে। সাধ্যর ভেতরে যে যার মতো রোবট কিনে কাজে লাগাচ্ছে জাপানিরা। বিদেশে বাড়ছে রোবটের রফতানিও। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রোবট বাণিজ্যে জাপান সারা বিশ্বকে হাতের মুটোয় নেবে।

জাপান পোষ্ট কোং সম্প্রতি একটি স্ব-ড্রাইভিং মেইল ​​বিতরণ রোবোট উন্মোচন করেছে। যেহেতু করোন ভাইরাস মহামারীতে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ কমে আসছে। তাই জাপানে রোবটকে কাজে লাগানো হচ্ছে। বিল্ট-ইন ক্যামেরা এবং সেন্সর ব্যবহার করে রোবটটিকে সচল করা হয়েছে। এটি এখন টেস্ট রানের পর্যায়ে আছে। পরীক্ষামূলকভাবে পোস্ট কাজে নিযুক্ত রোবটটি একটি হসপাতালের স্টোর হতে জিনিষ নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় একটি পোস্ট অফিসে। রোবটটটি ৩০ কেজি ওজনের প্যাকেজ বহন করতে পারে।

রোবট নিয়ে সব ধরনের মানুষের এখন ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। রোবট নিয়ে হচ্ছে যতো সাইন্স-ফিকশন আর গল্প । বিশ্বের তরুন সমাজ ঝুকছে রোবট তৈরি চলচিত্রসহ সবকিচুতে। এমন কি রোবট নিয়ে কোন গল্প হলে তো কথাই নেই। রোবট নিয়ে কোনো ছবি হলে, সেটা শেষ না করে ওঠাই যাবে না। রোবট তৈরির প্রযুক্তি বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে এসে পৌছেছে যে, রোবট দিয়ে ঘর পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে বাড়ির সব ধরনের কাজ করানো হচ্ছে।
পৃথিবীর জনসংখ্যা এগিয়ে যাচ্ছে সাড়ে সাত’শ কোটির দিকে। এ নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। বিকাশমুখী অনেক দেশেই জনসংখ্যা বাড়ছে। আর জাপানে ঘটছে পুরোপুরি এর উল্টোটা। সেখানে বাচ্চা নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে আজকের প্রজন্ম। ১৯৫০সালে জাপানের একটি পরিবারে দুই থেকে তিনটি করে বাচ্চা দেখা গেছে। কিন্তু এখন একটি বাচ্চাই যথেষ্ট মনে করা হচ্ছে। এবং কোন কোন ক্ষেত্রে জাপানিরা বাচ্চার ঝামেলাতেই যেতে চাইছেন না।মনে অনেকের প্রশ্ন জেগেছে যে, যদি নতুন প্রজন্মের সংখ্যা এত কম হয় তাহলে যারা বৃদ্ধ, তাদের যত্ন কে নেবে? এইসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দেখাশোনাই বা কে করবে? কীভাবে রক্ষা করা হবে তাদের প্রয়োজনগুলো? এসব প্রশ্নের মুখে এগিয়ে এসেছে বেশ কিছু গাড়ি তৈরির কারখানা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এবং ইলেকট্রনিক্সের কোম্পানি। তারা তৈরি করছে রোবট। যেমন প্যানাসনিক কোম্পানি এমন একটি বিছানা তৈরি করেছে যা হুইল চেয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা সম্ভব। এমন একটি রোবটও তারা তৈরি করেছে যে রোবটটি বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার চুলে শ্যাম্পু করতে এবং চুল ধুয়ে দিতে সাহায্য করবে। কোম্পানির পরিচালক ইয়ুকিও হোন্ডা বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য হল সমাজের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সাহায্য করা। শারীরিকভাবে যারা আর আগের মত পরিশ্রম করতে পারেন না, তাদের প্রতিদিনের জীবনকে আরো সহজ করে তোলা।’’

টয়োটা মোটর কোম্পানি তৈরি করছে এমন একটি রোবট যা সঙ্গী হবে নিঃসঙ্গ মানুষের। তারা ঘর পরিষ্কার করবে, প্রয়োজনীয় ওষুধটি কাছে এনে দেবে, হাঁটা-চলার সময় একটি হাত ধরে রাখবে। এ ধরনের সেবা দেবে রোবট। তুমি নিশ্চয়ই জেনে থাকবে, জাপানের মানুষরা দীর্ঘায়ু লাভ করে থাকে। পুরুষরা সাধারণত ৮০বছর পর্যন্ত বাঁচে এবং মহিলারা ৮৬। একশো বছর বয়সের মানুষ জাপানে কম নয়। জাপানের বর্তমান জনসংখ্যা বারো কোটির কিছু বেশি। এর মধ্যে ২৩ শতাংশের বয়স ৬৫’র ওপরে। আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০৫৫ সালের মধ্যে জাপানের জনসংখ্যা নেমে আসবে নয় কোটির নিচে।জাপানের সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে, দেশটির বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের এখন সাহায্য করছে রোবট। বর্তমানে বেশ কিছু সংস্থা বিশেষ ধরনের রোবট তৈরি করছে যারা ঘর পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে চুলে শ্যাম্পু পর্যন্ত করে দিতে সক্ষম।

সংক্ষেপে একটা ঘটনা জাপানে বেশ আলোচনা হয়েছে, জাপানে ৭৯ বছর বয়সী বৃদ্ধা একিনো। বাস করেন রাজধানী টোকিও থেকে বেশ দুরের একটি গ্রামে। বাড়িতে তার স্বামী নেই, নেই কোন সন্তানও। স্বামী-আত্মীয় স্বজন সবাই মারা গেছেন। তাই বলে এই বৃদ্ধার গোটা জীবন কিন্তু একাকী কাটেনি। সেই বৃদ্ধার একমাত্র সঙ্গী হল প্রিমো পুয়েল। এই প্রিমো আসলে কোনও মানুষ নয়। এক ধরনের রোবট, যার সাথে একিনো কথা বলেন, খেলা করেন।
এমনি আর একটি ঘটনা। হিরোজকি কাইকোর রোবটের নাম নভো। তার একমাত্র সাথী এই রোবট। তিনি বলেন, আমি নভোকে আমার পড়ার টেবিলের পাশে রাখি। তাকে আমি আধঘন্টা পরপর শব্দ করতে বলি সে আমাকে সময় জানায়। মাঝে মাঝে সে আমাকে বিভিন্নভাবে হেঁটে চলে দেখায়। এতে করে আমার নিঃসঙ্গতার মাঝে আনন্দ খুঁজে পাই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০৫০ সালে জাপানে একিনো ও হিরোজকির মতো ৬৫ উর্ধ্ববয়স্কের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ হবে। অতিরিক্ত বাচ্ছা না নিয়ে মানুষ যে রোবট চায়, রোবটকে দিয়ে কাজ করাতে চায়, সেটারও প্রমাণ হয়ে গেলো ২০০৮ সালে। ২০০২ সালে বাজারে ছাড়া হয়েছিলো রুম্বা নামের এক ভ্যাকুয়াম ক্লিনার রোবট। মাত্র ৬ বছরেই এই ক্লিনার রোবট বিক্রি হয়েছে আড়াই মিলিয়নেরও বেশি। এত কাজ যখন করতে পারে একটি রোবট তাই এটি তো সবাই ব্যবহার করবে। ঘরে একটা রোবট থাকলে সারা বাড়ি ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে রাখা সময়ের ব্যাপার। ঘরের পাশাপাশি এখন বাণিজ্যিকভাবে রোবটের ব্যবহার শুরু হয়েছে জাপানে। ### ১৩.১০.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.