--- বিজ্ঞাপন ---

জাতিসংঘে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ ভোটে জয়, অসন্তুষ্ট ভারত

১৯৩ দেশের মধ্যে ১৬৯ পাকিস্তানের পক্ষে,

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে (ইউএনএইচআরসি) সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হল পাকিস্তান। সর্বমোট ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর মঙ্গলবার সাধারণ সভায় গোপণ ব্যালটের মাধ্যমে ১৬৯টি দেশই পাকিস্তানকে ভোট দিয়ে জয়ী করে। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য দিক হলো এই এশিয়া-প্যাসেফিক গ্রুপে অন্যতম শক্তিশালী দেশ সৌদি আরবকে সদস্যরা এবার নির্বাচিত করেনি। এশিয়া -প্রশান্ত মহসাগরীয় অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত ৪ টি আসনে সৌদি আরব নাম দিলেও, চীন, পাকিস্তান, নেপাল এবং উজবেকিস্তানের কাছে হেরে যায়। আশা করা হয় এই মানবাধিকার পরিষদে নির্বাচিত সদস্য রাষ্ট্রগুলি স্বদেশে এবং বিদেশে মানবাধিকার উন্নয়ন এবং সুরক্ষার জন্য সর্বোচ্চ মান তুলে ধরবে। এই নিয়ে পঞ্চম বার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হল পাকিস্তান। শেষ বার ২০১৮-র ১ জানুয়ারি থেকে সদস্য হিসেবে ওই পরিষদে যোগ দেয় তারা।

পাকিস্তানকে অধিক ভোটে নির্বাচিত করায় ভারত অসন্তুষ্ট

ভারতের প্রচার মাধ্যমে সমালোচনায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার পরিষদে পুনর্নির্বাচিত হিন্দু-শিখ নিপীড়নে অভিযুক্ত পাকিস্তান। পাকিস্তানের এই বিজয়ে দেশটি মোটেও সন্তুষ্ট নয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক এই সর্বোচ্চ বডিতে পাকিস্তান পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় ভারতের প্রচারমাধ্যমগুলো প্রতিবাদমুখর হয়েছে। ভারতের পত্র-পত্রিকায় পাকিস্তানকে এই গ্রুপে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করায় কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। ভারতের সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকায় বলা হয়, পাকিস্তানে হিন্দু, শিখ ও খ্রিস্টান তরুণীদের অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা ও ধর্মান্তকরণের মতো ঘটনা প্রায় রোজই ঘটছে। বেলুচিস্তানে পাক সেনার হত্যালীলা বিশ্বের কাছে অজানা নয়। সে দেশে সাংবাদিকদের অপহরণ ও হত্যাও জলভাত।তবুও মানবাধিকার পরিষদে ফের ইসলামাবাদের নির্বাচন মানবাধিকার পরিষদের  উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ভারতের প্রচার মাধ্যমে আরও প্রশ্ন রাখা হয়, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে  পুনর্নির্বাচিত পাকিস্তান। হিন্দু, শিখ ও বেলুচদের গণহত্যায় জড়িত দেশটি এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে মানবাধিকার রক্ষায় সওয়াল করবে! অপরদিকে পাকিস্তানের  ইমরান খান সরকারের পক্ষ থেকে এই সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্তিকে দেশটির ইমেজ বিশ্বে বৃদ্ধি পেয়েছে দাবী করছেন। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এক টুইট বার্তায় বলেছেন তার দেশকে জাতিসংঘের এই মর্যাদাপূর্ণ পদে সর্বাধিক ভোট দেওয়ায় তিনি আনন্দিত। তিনি আরও বলেছেন, পাকিস্তান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাবের বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার হবেন। প্রচার মাধ্যমগুলোতে চীনেরও সমালোচনা করা হয় । চীন এবার পাকিস্তান থেকে ৩০ ভোট কম পায়।  ২০১৬ সালে ১৮০ ভোট পেয়েছিল চীন। এ বার তা অনেকটাই কমে গিয়েছে। এর জন্য সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের প্রতি তাদের আচরণকেই দায়ী করছেন কূটনীতিবিদরা। এদিকে, জাতিসংঘের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেও বলেন, বেজিং ও মস্কোর মতো ‘অথরিটারিয়ান’ দেশকে মানবাধিকার পরিষদে জায়গা দেওয়া উচিত হয়নি।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল সাধারণ পরিষদের সদস্য দেশগুলির গোপণ ভোটাভুটির মাধ্যমে তিন বছরের জন্য নির্বাচিত করে থাকে। ৪৭ সদস্যের এই কমিশনের এশিয়া-প্যাসেফিক গ্রুপের ৪টি পদের জন্য ৫টি দেশের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়। এবারের সবচাইতে অঘটন ঘটেছে সৌদি আরবের মত শক্তিশালী দেশ এই গ্রুপে হেরে যায়। সৌদির বিরুদ্ধে সেদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগিকে ২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের অভ‌্যন্তরে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে। ঐ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে। হি্মউম‌্যান রাইট ওয়াচসহ বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে সৌদি আরবকে এই কাউন্সিলের সদস‌্য পদ থেকে প্রত‌্যাহার করে নেয়ার দাবী জানানো হয়। এবারের ভোটাভুটিতে পাকিস্তান ১৬৯ ভোট, উজবেকিস্তান ১৬৮ ভোট, নেপাল ১৫০ ও চীন ১৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়। সৌদি আরব ৯০ ভোট পায়। আর ৭ ভোট অর্থাৎ ৯৭ ভোট পেলে নির্বাচিত হত দেশটি। ২০০৬ সালে ৪৭ সদস্যের জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠা হয়। তার পর থেকে তিন বছরের জন্য সদস্য নির্বাচন হয়। মঙ্গলবার জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলিকে নিয়ে নির্বাচন হয়। তাতেই ফের পুনর্নির্বাচিত হয়েছে চীন ও পাকিস্তান। সাধারণ পরিষদে গোপন ব্যালটে যারা এবার এই পর্ষদের সদস্য পদ পেল সেই দেশগুলি হচ্ছে- বলিভিয়া, ব্রিটেন, চীন, কিউবা, ফ্রান্স. গ্যাবন, আইভরি কোস্ট, মালাওয়ী, মেক্সিকো, নেপাল, পাকিস্তান, রাশিয়া, সেনেগাল, ইউক্রেন এবং উজবেকিস্তান।### ১৪.১০.২০

 

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.