--- বিজ্ঞাপন ---

আজারবাইজানের উপর আর্মেনিয়ার ক্ষেপনাস্ত্র হামলা, ১৩ নারী শিশু নিহত

দু’দেশের তুমুল লড়াই, ফুজুলি শহরে আজেরি বাহিনীর প্রবেশ

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে আজারবাইজানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গাঞ্জায় ২য় বার আবাসিক এলাকায় শনিবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৩ জন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়েছে। আজারবাইজান বলছে, সীমান্তে দুদেশের মধ্যেকার সংঘর্ষস্থল থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাত ১টায় ঘুমন্ত মানুষের উপর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো আর্মেনিয়া। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আজারটেক জানায়, কাপুরোষোচিত এ হামলায় নিহতদের মধ্যে ৩ শিশু, ৪ নারীও রয়েছে। আহত হয়েছে ৪৮ জন। এদেও মধ্যে ২০ জন মহিলা ও ৫ শিশু রয়েছে। ট্রেন্ড বার্তা সংস্থা সেদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, আজারবাইজানের সৈন্যরা গুরুত্বপূর্ণ ফুজুলি শহর ও আশেপাশের সাতটি এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেছেন, ফুজুলি পুনরুদ্ধারের পর দখলকৃত নগর্নো-কারাবাখ পুনরুদ্ধারে এগিয়ে গেল তার দেশ। এসময় গাঞ্জার সেবাহান আবাসিক এলাকায় রাত ১টায় ঘুমন্ত মানুষের উপর হামলা চালালো আর্মেনিয়া। গাঞ্জা শহরটি বিশ্বের একটি পরিচিত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও জাতিসংঘের হ্যারিটেজ এর অংশ। আজারবাইজানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মেহেরবান আলিয়েভা ঘুমন্ত নারী-শিশুর উপর ২য় বারের মত এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে কাপুরোষচিত কাজ বলে আর্মেনিয়ার  ফ্যাসিস্ট ও আগ্রাসী মনোভাবের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। আর্মেনিয়া একই সময়ে  আজারবাইজানের মিঙ্গাসেভির শহরে একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও হামলা চালিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা জানায়। আজারবাইজানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন আর্মেনিয়াকে এজন্য চরম মূল্য দিতে হবে। সীমান্তবর্তী দেশ ইরানের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজারবাইজানের সৈন্যরা যুদ্ধে দখলকৃত এলাকা পুন:দখলে নিচ্ছে এবং নগর্নো-কারাবাখের দিকে সকল ফ্রন্টে অগ্রসরমান এতেই আর্মেনিয়া দিকবিদিক হারিয়ে আবাসিক এলাকাকে লক্ষ্যবস্তু করছে। উল্লেখ্য, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আর্মেনিয়া গভীর রাতে একই ভাবে ১১ই অক্টোবর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল। ঐ হামলায় ১৫জন নিহত ও ৩৪ জন আহত হয়।   ইরানের ঐ বিশেষজ্ঞ বলছেন, এটাই প্রমাণ করে যুদ্ধে আর্মেনিয়া হারতে চলেছে। আজারবাইজানের গাঞ্জা শহরের অধিবাসীরাও বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, যুদ্ধে এলাকা হারানোর প্রতিশোধ নিচ্ছে আর্মেনিয়া। তবে আর্মেনিয়া এ হামলার খবর এড়িয়ে গেছে বরং তারা বলছে আজারবাইজার নগর্নো-কারাবাখের রাজধানী স্টিফানাকার্ট-এ গোলাবর্ষন করেছে। পর্যবেক্ষকমহল মনে করছেন, বেসামরিক এলাকায় হামলা চালিয়ে আর্মেনিয়া যুদ্ধকে নগর্নো-কারাবাখের বাইরে ছড়াতে চাইছে যাতে রাশিয়াসহ অন্যান্য শক্তি তার সাহায্যে সরাসরি সেখানে সৈন্য রসদ পাঠাতে পারে। উল্লেখ্য, রাশিয়ার আর্মেনিয়া নিরাপত্তা জোটভুক্ত দেশ। তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী  হুলুসি আকার বলেছেন, ঘুমন্ত নারী-শিশুর উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকারীদের ইতিহাস কখনও ক্ষমা করবেনা।

ভয়েস অব আমেরিকা জানায়, আজারবাইজানে কর্তৃপক্ষ বলছে গাঞ্জা শহরে শনিবার খুব ভোরে ক্ষেপনাস্ত্র আক্রমণে অন্তত ১২ জন লোক নিহত এবং আরও ৪০ জন আহত হয়েছে। আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক দাবি করছে যে গাঞ্জা এবং মিঙ্গাশেভির শহর দুটিতে আর্মেনিয়ার দুটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। আর্মেনিয়ার কর্তৃপক্ষ এই দুটি শহরে আক্রমণ চালানোর সত্যতা স্বীকার কিংবা অস্বীকার কোনটাই করেনি। আজারবাইজানের সরকারী সুত্রগুলোর মতে শনিবারের এই ক্ষেপনাস্ত্র হামলার ফলে, সে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গাঞ্জায় অন্তত কুড়িটি আবাসিক ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে।আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যকার চলমান লড়াই শুরু হয় ২৭ শে সেপ্টেম্বর এবং এর ফলে শত শত লোক প্রাণ হারিয়েছে। ১৯৯৪ সালের অস্ত্রবিরতির পর নাগোরনো কারাবাখ অঞ্চলে এটি ছিল সব চেয়ে বড় ধরণের সংঘাত।

প্রধানত: আর্মেনীয় জাতিগোষ্ঠি অধ্যুষিত অঞ্চলটি ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সময়ে আজারবাইজান থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এর ফলে ১৯৯৪ সালে অস্ত্র বিরতি হবার আগে পর্যন্ত তিরিশ হাজার মানুষ মারা যায় এবং সেই স্বাধীনতাও আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত নয়।

এদিকে বার্তা সংস্থা সমূহ আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, পাল্টা হামলা চালিয়ে আর্মেনিয়ার এস-৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ঐ ধ্বংসের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। হামলায় আর্মেনিয়ার ২টি সুখোই-২৫ জঙ্গী বিমান ভূপাতিত করেছে আজারবাইজান। এছাড়া, ১টি টোর-এম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, ৭টি টি-৭২ ট্যাংক, ১১টি এমএলআরএস ধবংস করা হয়। আর্মেনিয়ার ৫ম মাউন্টেন রেজিমেন্টের ৩০০ সৈন্য অস্ত্রশস্ত্র  ফেলে  পেছনে পালিয়েছে।

আয়তন ও জনসংখ্যা

আজারবাইজান-জনসংখ্যা ২০২০ সালের জাতিসংঘের ওয়াল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী ১ কোটি ১ লক্ষ ৩৯ হাজার । জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ শিয়া মুসলিম বাকীরা সুন্নী। দেশটির আয়তন ৮৬ হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার। বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জ্বালানি তেল রফতানীকারী আজারবাইজানের রাজধানী বাকু। সেনাবাহিনী-৬৭ হাজার, রিজার্ভ ৩ লক্ষ। ট্যাংক-৬৬৫টি। সাঁজোয়া যান ১৬৩৭টি। আর্টিলারি সব মিলিয়ে ৭৪০। জঙ্গী বিমান-মিগ-২৯, সুখোই-২৪ সহ বিমানের মোট সংখ্যা৬ ১২৭। এছাড়া তুরস্ক থেকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র, ইসরাইল সহ বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রয় করা বিপুল অত্যামধুনিক সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীতে। নৌ বাহিনীতে রয়েছে ৩১ টি বিভিন্ন শ্রেণীর যুদ্ধ জাহাজ। তুরস্কের সৈন্যম ও এফ-১৬ জঙ্গী বিমানও দেশটিতে মোতায়েন রয়েছে। তুরস্ক যুদ্ধে আজারবাইজানের একজন কট্টর সমর্থক।

আর্মেনিয়া- অপরদিকে আর্মেনিয়ার জনসংখ্যা ২০২০ সালের একই পরিসংখ্যানে ২৯ লক্ষ ৬৩ হাজার। প্রায় সকলেই খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী। আয়তন ২৮ হাজার ৪৭০ বর্গকিলোমিটার। রাজধানী ইয়েরেবান। সেনাবাহিনী-৪৫ হাজার, রিজার্ভ- ২লক্ষ । ট্যাংক-৫২৯টি। জঙ্গী বিমান-৪২টি। এছাড়া ১০০০ বিভিন্ন সাঁজোয়া যান ও আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত দেশটি। গ্রীস সহ ন্যাটো জোটের বিভিন্ন দেশ রাশিয়া দেশটিকে আধুনিক সমরাস্ত্র সরবরাহ করছে।#

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.