--- বিজ্ঞাপন ---

ইরানের নজর এখন উত্তর কোরিয়ার ভারী অস্ত্রের দিকে

তেলের বিনিময়ে অস্ত্র সরঞ্জাম আনতে চায় ইরান

0

কাজী আবুল মনসুর ##

ইরানের নজর এখন উত্তর কোরিয়ার ভারী অস্ত্রের দিকে। অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর ইরান চাইছে উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র ও প্রযুক্তি ইরানে ঢুকাতে। বিনিময়ে ইরান তেল দেবে। ইরানের টার্গেট উত্তর কোরিয়ার ভারী অস্ত্র হাওয়াসং-১২ ব্যলেস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র এবং স্যাটেলাইট উক্ষেপন যন্ত্রের দিকে। গত ১৯ অক্টোবর অয়েল প্রাইস ডট কমে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর বিশ্বের অস্ত্র বাজারে রেশ হৈচৈ উঠে। ইরান এগুলোর জন্য চীনের সাহায্য নেবে। হাওয়াসং-১২ অস্ত্রটির ব্যাপ্তি ৪,৫০০ কিলোমিটার। এটি ইরানের হাতের নাগালে এলে ইরানের সামরিক শক্তি বহু গুনে বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য ইরান চীনের সাথে ২৫ বছরের চুক্তিটির কার্যকারিতা শুরু করতে যাচ্ছে। যেটি আসলে হয়েছিল ২০১৬ সালে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এরই মধ্যে চীনের এ সংক্রান্ত বিসয়ক কর্মকর্তা ওয়ান লির সাথে বৈঠকে করেছেন। তারা তৈরি করেছেন একটি রোড ম্যাপ।

ইরাক ও ইরানের মধ্যেকার যুদ্ধের পর ইরান নিজেদের সামলাতে বেশ পরিশ্রম করে। ইরানের ভেতরকার জাতিগত ঐক্য, কড়া শাসনের ফলে নিয়ন্ত্রন থাকে সবকিছু। আমেরিকা ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে হত্যার পর ইরানের প্রতি নজর দেয়। কিন্ত সাবেক বুশ প্রশাসন ইরানের বিরুদ্ধে তেমন সুবিধা করতে পারেন নি। ইরান আমেরিকা ও ন্যাটো জোটের কারনে নিজেদের সামরিক অবস্থান শক্ত করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। এরই মধ্যে ইরান ধ্বংস করতে না পেরে জাতিসংঘের মাধ্যমে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ইরান বসে থাকেনি। নিজেদের কর্মক্ষমতাকে কাজে রাগিয়ে সামরিক দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য সামরিক শক্তিসম্পন্ন দেশগুলোর পাশাপাশি এগিয়ে যেতে থাকে।

ইরানের হাতে আছে প্রচুর তেল। আর তেলকে ঘিরে ইরান সামরিক শক্তি বাড়ানোর চিন্তা শুরু করেছে এখন। বিশেষ করে চীনের সাথে ইরানের সম্পর্ক অনেক দিনের পুরানো। একই সাথে উত্তর কোরিয়ার সাথে ইরানের সুসম্পর্ক রয়েছে। ইরান এখন এ দু’দেশের সাহায্যে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ইরানে অস্ত্র কেনা বেচার ব্যাপারে ১৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা ১৮ অক্টোবর শেষ হয়েছে। ইরান অপেক্ষা করছিল এ দিনটির জন্য। কারন ইরানের সাথে চীনের ২৫ বছরের চুক্তির কাজ শুরু হবে নভেম্বরে। ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার আগে ভাগে চীনে ছুটে যান ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোহাম্মদ জারিফ। তিনি বৈঠক করেন চীন সরকারের প্রভাবশালী কর্মকর্তা ওয়াং ইয় এর সাথে। গত ৯ ও ১০ অক্টোবর ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী চীনে একাধিক বৈঠক করেন। বৈঠকে তেলের বিনিময়ে চীনের কাছ থেকে উত্তর কোরীয়ার নানা অস্ত্র  প্রযুক্তি চাইছে ইরান। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হাওয়াসং -১২ মোবাইল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) বা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ যানবাহন (এসএলভি)। এই ব্যালেস্টিক ক্ষেপনাস্ত্রের গতি সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার। অর্থাৎ এটি সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার দুর পর্যন্ত টার্গেট করে ছুড়তে পারবে। বর্তমানে ইরানের কাছে যে ব্যালেস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র আছে তার গতি ২ হাজার কিলোমিটারের মতো। এর আগে ইরান উত্তর কোরিয়া থেকে ৩০০টি স্কুড বি ক্ষেপনাস্ত্র কিনেছিল। ১৯৯০ সালের দিকে উত্তর কোরিয়ার শক্তিশালী নোডং সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নে ইরান সহায়তা করেছিল বলে সুত্র জানায়।

তবে তেলের বিনিময়ে অস্ত্র এটি একটি নতুন বাণিজ্য মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। যা আমেরিকা চিন্তাও করে নি। এমন কি ন্যাটো দেশগুলোও কল্পনা করেনি ইরান এমন একটি বাণিজ্য নিয়ে নতুন কিছুর সূচনা করবে। ইরান এখন চাইছে উত্তর কোরিয়া যেভাবে সামরিক শক্তি সম্পন্ন হয়েছে তারাও সেপথে এগুবে। ইরান এরই মধ্যে বাছাই করা দেড়শ সেনাকে নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা নিতে চীন ও উত্তর কোরিয়া পাঠাচ্ছে। ইরান এও বিশ্বাস করে সামনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ট্রাম্প বা বাইডেন যিনিই আসুক না কেন সম্পর্ক তেমন খারাপ হবে না। এদিকে ইরানের এ তৎপরতা দেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নড়েচড়ে বসেছে। নির্বাচনের ডামাঢোলে মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্র ইরানের দিকে তেমন নজর দিত পারছে না। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও কে দিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে আমেরিকা।  সম্প্রতি পম্পেও বরেছেন, ‘ইরানের কাছে বা ইরান থেকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যে কোনো প্রচলিত অস্ত্র সরবরাহ, বিক্রয় বা হস্তান্তরে বাস্তবে অবদান রাখলে তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, যারা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যাদের লড়াই তাদের উচিত হবে ইরানের সঙ্গে যে কোনো ধরণের অস্ত্র লেনদেন করা থেকে বিরত থাকা।’জবাবে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির হাতামি বলেছেন,  বহিঃশক্তির আগ্রাসন এবং আক্রমন থেকে আত্মরক্ষা করতে যেসব দেশ ইচ্ছুক তাদের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রি করবে ইরান। আমেরিকার অবহেলার শিকার হওয়া দেশগুলোর পাশে দাড়াবে ইরান। সেসব দেশ চাইলে ইরান তাদের কাছে সামরিক সরঞ্জাম রফতানি করবে।

ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী টেলিভিশনে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন,  জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর অনেক  দেশ এরই মধ্যে ইরানের সাথে যোগাযোগ করেছে।  কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনাও চলছে। ইরান যেহেতু ৯০ শতাংশ অস্ত্র নিজেদের দেশে বানাই তাই এগুলোর মান ভালো। যারা ইরানের অস্ত্র চাইবে তাদের সরবরাহ করা হবে। অপরদিকে ইরান ভারী অস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য চীন ও রাশিয়ার সাথে চুক্তি করেছে বলে হাতামি উল্লেখ করেন।###২১.১০.২০

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.