--- বিজ্ঞাপন ---

রাশিয়া থেকে আনা এস-৪০০ ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা করলো তুরস্ক

আমেরিকার হুমকিতে টলেননি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

0

 

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

রাশিয়া থেকে আনা এস-৪০০ ক্ষেপনাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে তুরস্ক। আমেরিকার হুমকি আমলে নেননি প্রেসিডেন্ট এরদোগান। রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্বের সর্ম্পক নিয়ে রাশিয়ার সহযোগিতায় এ পরীক্ষা চালানো হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায়।  সাংবাদিকদের তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, রাশিয়া থেকে সংগ্রহ করা এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে দেশটি। তিনি বলেন, এর পরীক্ষা আগেও হয়েছে এবং এখন আবার আমরা শুরু করেছি। মার্কিন প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কি ভাবে, তা আমাদের ভাববার বিষয় নয়। আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরীক্ষা যদি আমরা না চালাই, তবে এগুলি সংগ্রহ করার কি প্রয়োজন থাকতে পারে ? গত (শুক্রবার) এক বিবৃতিতে পেন্টাগনের মুখপাত্র জনাথন হফম্যান সম্ভাব্য সবচেয়ে শক্ত ভাষায় নিন্দা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তুরস্কের এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষার আমরা বিরোধিতা করছি এবং তুরস্কের সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। হফম্যান বলেন, “আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলছি যে, তুরস্কের পক্ষ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরীক্ষা আমেরিকা এবং ন্যাটো জোটের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।” এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা তুরস্কের প্রেসিডেন্টের রেসিপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান নিশ্চিত করে বলেন, গত সপ্তাহে এ ব্যবস্থার পরীক্ষা চালিয়েছে আংকারা ।

তিনি বলেন, অন্য দেশের কাছ থেকে কেনা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষা করার সব ধরনের অধিকার তার দেশের রয়েছে । ভয়েস অব আমেরিকা জানায়, মার্কিন সামরিক বাহিনী তুরস্ককে রুশ নির্মিত এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরীক্ষার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, আঙ্কারাকে এজন্য মারাত্মক পরিণতি বরণ করতে হবে। গত সপ্তাহে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরীক্ষা চালানো হয়েছে বলে তুরস্কের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়ার পর পেন্টাগন এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলো । তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের মাঝেই রুশ নির্মিত সর্বাধুনিক আকাশ বিধ্বংসী মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, S -400 সংগ্রহ করা শুরু করলে, ওয়াশিংটন ও তুরস্কের সম্পর্কে নুতন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। গত ২৩ অক্টোবর  শুক্রবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, এই খবরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তুরস্ক এই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে।  সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এসব পরীক্ষা আগেও হয়েছে এবং এখন আবার আমরা শুরু করেছি। তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্র কি ভাবে, তা আমাদের ভাববার বিষয় নয়।  আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরীক্ষা যদি আমরা না চালাই, তবে এগুলি সংগ্রহ করার কি প্রয়োজন থাকতে পারে ? এর কয়েক ঘন্টা পরেই যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা দপ্তর, কড়া ভাষায় এর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, যে বিবৃতিতে তুরস্ককে জোট ভাঙার দোষারোপ করা শুধু বাকি ছিল।

তুরস্কের বক্তব্য হচ্ছে দেশটি রাশিয়া থেকে এই এস-৪০০ কিনতে বাধ্য হয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগেই তুরস্ক আমেরিকার কাছ থেকে তাদের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে চেয়েছিল। তখন মার্কিন বারাক ওবামা প্রশাসন বেশ কিছুদিন ঝুলিয়ে রেখে তুরস্ককে জানিয়ে দেয় প্যাট্রিয়ট তাদের দেয়া হবেনা। এভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ২০১৭ সালে তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য হওয়া স্বত্বেও জোটের প্রধান বৈরি শক্তি রাশিয়ার দ্বারস্থ হয়। প্রস্তাব সাথে সাথেই লুফে নেয় রাশিয়া্।যদিও এখন পর্যন্ত চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশে এখনও তারা এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করেনি। ভারতের সাথে চুক্তি করেছে তবে আমেরিকা তখন কি ব্যবস্থা নেয় সেটা এখনও দেখার অপেক্ষায়। তখন থেকেই আমেরিকা এবং ন্যাটো জোটের পক্ষ থেকে তুরস্ককে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র কেনা থেকে বিরত রাখার বহু চেষ্টা হলেও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে টলাতে পারেনি। কিন্তু তুরস্ক এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের সম্পর্কে অবিশ্বাস এতদূর গড়ালো কীভাবে?এব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি সামরিক বিশ্লেষকের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, কুয়ালালামপুরে মালয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমর-বিদ্যা বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বিবিসিকে বলেন, এই দূরত্ব একদিনে তৈরি হয়নি। অনেক বছর ধরে ধীরে ধীরে এটি বেড়েছে। কেন তুরস্ক এই সম্পর্ককে আর আগের মতে গুরুত্ব দিচ্ছেনা-তার কিছু কারণ উল্লেখ করেন ড. আলী। কারণগুলোর অন্যতম হলো..

মুসলিম তুরস্ককে ইইউ’র সদস্য করা হয়নি

বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢোকার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি এবং পারবে বলেও তারা এখন আর বিশ্বাস করেনা । অথচ একই সময়ে তুরস্ক দেখছে যে তাদের পাশ কাটিয়ে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোকে এক এক করে ইইউ জোটে নেয়া হয়েছে। ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, “কেন তাদের নেওয়া হয়নি তার কারণ স্পষ্ট করে বলা না হলেও তুরস্ক বিশ্বাস করে মুসলিম প্রধান দেশ বলেই তাদেরকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।”

গুলেন ফ্যাক্টর-ড. আলীর মতে, এরদোয়ান সরকারের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক এবং স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তুর্কি ইসলামি রাজনীতিক ফেতুল্লা গুলেন। দু বছর আগে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য তাকেই নাটের গুরু হিসাবে দায়ী করেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। তাকে বিচারের জন্য তুরস্কে পাঠানোর দাবি বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে আমেরিকা। বরঞ্চ আমেরিকার সরকারের সহযোগিতায় মি. গুলেন আমেরিকাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিশাল ইসলাম শিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। একটি রাজনৈতিক সংগঠনও তৈরি করেছেন।

কুর্দি ভীতি-কুর্দিরা বহুদিন ধরে তুরস্কে যে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদি আন্দোলন করছে তাকে তুরস্কের সরকার দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বিরাট একটি হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে। ইরাক এবং সিরিয়ায় কুর্দিদের সাথে আমেরিকার যেভাবে সখ্যতা দিনে দিনে বেড়েছে তাতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে তুরস্ক। তুরস্কের বক্তব্য হচ্ছে, কুর্দীদের কাগজে কলমে সন্ত্রাসবাদী বললেও তাদের তুরস্কের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অস্ত্ররসদ দিচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশ ফ্রান্স, জার্মানীসহ বিভিন্ন দেশ।

ড. আলী বলেন, “এরদোয়ান বারবার আমেরিকাকে বলেছেন কুর্দিরা আমাদের শত্রু। তোমরা তাদের সমর্থন দিয়ে তাদেরকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখাচ্ছো, সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে তাদের সাহায্য করছো। এটা আমাদের জাতীয় স্বার্থ বিরোধী, এটা আমরা হতে দেবনা।”

বিবিসির প্রতিরক্ষা বিষয়ক ভাষ্যকার জনাথন মার্কাস বলছেন, ন্যাটোর দাবি- হুমকি-অনুরোধ উপেক্ষা করে রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয় তুরস্কের ‘সামরিক-রাজনৈতিক কৌশলে’ মৌলিক একটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত। তিনি মনে করেন এর পেছনে তুরস্কের যে তাড়না তার মূলে রয়েছে কুর্দিদের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান। “এক কথায় সেটিই মূল কারণ।” ইরাক এবং সিরিয়ায় আমেরিকার ভূমিকা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছে তুরস্ক। কীভাবে কুর্দিরা শক্তিশালী হচ্ছে তা দেখছে। জনাথন মার্কাস বলছেন, “এটিই এখন তুরস্কের এক নম্বর নিরাপত্তা উদ্বেগ।”

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে

তুরস্ক কি ন্যাটো ছাড়ছে ? পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রশ্ন উঠছে তুরস্ক কি পাশ্চাত্যের সামরিক বলয় থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে? এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে তুরস্ককে ন্যাটো থেকে বের করে দেয়ার জন্য বিল উত্থাপন হয়েছে। ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী বলছেন, “তুরস্ক বেরিয়ে যেতে চায়না, কিন্তু গত ৬/৭ বছরে তাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে তুরস্কের ভেতর সংশয় দেখা দিয়েছে যে পাশ্চাত্য তাদের সত্যিকারের মিত্র হিসাবে দেখেনা এবং কোনো দিন হয়তো দেখবেও না।” শুধু এরদোয়ান সরকার নয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশ্চাত্য বিশ্বকে নিয়ে তুরস্কের সাধারণ মানুষের ভেতরেও বৈরি মনোভাব তীব্রতর হচ্ছে।

তুরস্কের কাদির হাস ইউনিভার্সিটি ব্যাপক একটি জনমত জরিপ করেছে। জরিপে প্রশ্ন করা হয় – আমেরিকা এবং ন্যাটোর তীব্র আপত্তি এবং নিষেধাজ্ঞার হুমকি উপেক্ষা করে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনা কি উচিত হচ্ছে? ৪৪% উত্তরদাতা বলেছেন, কেনা উচিত। অন্যদিকে ২৫ শতাংশের মত বলেছেন উচিত নয়। আমেরিকা এবং রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তুরস্কের সাধারণ মানুষের মনোভাবও যে বদলে যাচ্ছে সেটাও বেরিয়ে এসেছে এই জরিপে। প্রায় ৮১% উত্তরদাতা বলেছেন আমেরিকা তুরস্কের জন্য হুমকি। অন্যদিকে ৫৫% উত্তরদাতা রাশিয়ার সাথে সম্পর্ককে ইতিবাচক বিষয় বলে মতামত দিয়েছেন।

আমেরিকার দ্বিমুখী নীতি

কোনো ন্যাটো জোটের সদস্য দেশের পক্ষ থেকে রাশিয়ার কাছ থেকে অত্যাধুনিক কৌশলগত অস্ত্র কেনা নজিরবিহীন। শুধু গ্রীসের কাছে রুশ এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে । তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গত শুক্রবার বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রীসকে কিছু বলছেনা ।কেবল তুরস্কের বেলায় যত চাপ। ঐ চালানটি সাইপ্রাস কিনেছিল এবং তুরস্কের তীব্র আপত্তির মুখে সেগুলো তারা গ্রীসকে দিয়ে দেয়। তুরস্ক বলছে সেগুলি গ্রীস তুরস্কের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য চালু করেছে। অথচ আমেরিকা দেখেও না দেখার ভান করছে।

আমেরিকা যুক্তি দেখাচ্ছে তার প্রধান উদ্বেগ-নিরাপত্তা। তারা ভয় পাচ্ছে, এস-৪০০ স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রশিক্ষণের জন্য প্রচুর রুশ সামরিক প্রশিক্ষক এবং প্রকৌশলী তুরস্কে যাতায়াত করবে। ফলে তুরস্কের আকাশে যদি এফ-৩৫ উড়ে তখন কাছে বসে সহজে ঐ বিমান সম্পর্কে গোয়েন্দাগিরির সুযোগ পেয়ে যাবে রাশিয়া। ফলে কৌশলগত-ভাবে সেই সম্ভাবনাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে আমেরিকা । তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যদিও গ্রীসের কাছে এর আগের সংস্করণ এস-৩০০ রয়েছে এনিয়ে আপত্তি করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

একশর মতো আমেরিকার অত্যাধুনিক রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম জঙ্গী বোমারু এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে বহুদিন ধরেই তুরস্কের সাথে আমেরিকার বোঝাপড়া হয়েছিল। এই বিমানের অনেক যন্ত্রাংশ তুরস্কে তৈরি হচ্ছে। এফ-৩৫ চালানোর প্রস্তুতি হিসাবে তুরস্কের বিমানবাহিনীর বৈমানিকরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণও নিচ্ছিলেন। কিন্তু ক্ষুব্ধ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়ে দেন, এফ-৩৫ বিমান তুরস্কের কাছে বিক্রি করা হবেনা। তবে তিনি এই পরিস্থিতির জন্য তার পূর্বসূরি বারাক ওবামাকে দায়ী করেছেন। তার কথা, প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে না পেরে তুরস্ক বাধ্য হয়ে রাশিয়ার দ্বারস্থ হয়েছে। এফ-৩৫ চালানোর যে প্রশিক্ষণ তুর্কি বৈমানিকদের দেওয়া হচ্ছিল, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, এফ-৩৫ বিমানের যেসব যন্ত্রাংশ তুরস্কে তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর উতপাদন অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে তুরস্ক এসব হুমকি ধামকিতে কান দিচ্ছেনা। তারা বলছে, ২০১৭ সালে করা চুক্তির শর্ত হিসাবে এরই মধ্যে ২০০ কোটি ডলার রাশিয়াকে দেওয়া হয়ে গেছে, সুতরাং এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার প্রশ্ন নেই।

লাভ-ক্ষতির হিসেব-নিকেশ

তুরস্ক এবং পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কে এই সঙ্কটের পরিণতি কী? ন্যাটোতে তুরস্কের অবস্থান কি আল্গা হয়ে পড়বে? নাকি আমেরিকা তুরস্কের গুরুত্ব বুঝে আপোষ করবে? প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী মনে করেন, যদি আমেরিকা নমনীয় না হয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তুরস্কের অর্থনীতির বর্তমান সঙ্কট আরো বাড়বে। তবে তিনি বলেন, ন্যাটোর জন্য তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তুরস্ক নিষ্ক্রিয় হলে ইউরোপের পূর্ব সীমান্তে ন্যাটোর প্রতিরক্ষা বলয় হুমকিতে পড়বে। তার মতে, এ কথা এখনই বলা যাবেনা যে তুরস্ক পাশ্চাত্য বলয় থেকে নিশ্চিতভাবে সরে যাচ্ছে। যদিও এটা ঠিক যে তুরস্ক পাশ্চাত্যের কাছ থেকে অনেক কিছু প্রত্যাশা করেছিল, কিন্তু তাদের সেই প্রত্যাশা মিটছে না। সে কারণেই রাশিয়ার দিকে ধীরে ধীরে তারা মুখ ঘুরিয়েছে। বিবিসির জনথান মার্কাসও মনে করছেন, তুরস্কের সাথে দিন দিন রাশিয়ার সখ্যতা বাড়বে, আর ন্যাটোর সাথে সম্পর্ক আলগা হতে থাকবে। “যদিও তুরস্ক মনে করছে যদিও তাদের স্বার্থ এবং রাশিয়ার স্বার্থ এক নয়, তবু এটাই তাদের মন্দের ভালো। তারা বুঝতে পারছে এ অঞ্চলে রাশিয়া ধীরে ধীরে বড় মাপের ক্রীড়নক হয়ে উঠছে, ফলে রাশিয়ার সাথে তাদের একটা সম্পর্ক এখন প্রয়োজন।”### ২৪.১০.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.