--- বিজ্ঞাপন ---

পাকিস্তানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির তুর্কী যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ শুরু

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

তুরস্কের কারিগরী সহায়তায় পাকিস্তানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাবমেরিন বিধ্বংসী ‘মিলজেম’ শ্রেণীর ৪টি  যুদ্ধজাহাজের ৩য়টির  নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমান আধুনিক যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তির সব সিস্টেমই  থাকছে এই মিলজেম শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজটিতে। তুরস্ক হচ্ছে বিশ্বের হাতে গোণা ১০টি দেশের মধ্যে একটি যারা সম্পূর্ন নিজ ডিজাইনে পশ্চিমা প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এধরণের স্টেট অব দি আর্ট যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করছে।

রোববার ২৫ অক্টোবর দিনটিকে পাকিস্তানের নৌ বাহিনীর জন্য সেদেশের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির জাহাজ নির্মাণের  ইতিহাসের মাইলফলক বলে মন্তব্য করেছেন নৌ বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে পশ্চিমা স্টেট অব আর্ট প্রযুক্তির যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ যেমন ব্যয়বহুল তেমনি এর সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সিস্টেমের জন্য বহু নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিতে হয়। উন্নত দেশগুলি সর্বাধুনিক মডেলের প্রযুক্তি সব দেশকে হস্তান্তর করতে চায়না। এক্ষেত্রে বর্তমানে মডার্ণ প্রযুক্তির অস্ত্র নির্মাতায় মুসলিম দেশগুলির মধ্যে এক নম্বর দেশ হচ্ছে তুরস্ক। পাকিস্তানের সাথে দেশটির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে এই আধুনিক জাহাজ করাচীতে নির্মাণের জন্য যা যা দরকার সব কারিগরী সহায়তা দিতে এগিয়ে এল এরদোয়ানের দেশ তুরস্ক। মুসলিম বন্ধুভাবাপন্ন পাকিস্তানকে সাবমেরিণ বিধ্বংসী বহুমুখী প্রযুক্তির ৪টি যুদ্ধজাহাজের শেষ দুটির নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করতে রোববার করাচী ডকইয়ার্ডে ছুটে আসেন তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সাবেক সেনা প্রধান হুলুসি আকার। অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের পক্ষে দেশের সামরিক সরঞ্জাম উতপাদন বিষয়ক মন্ত্রী  জোবায়দা জালাল, নৌ বাহিনী প্রধান এডমিরাল মো: আমজাদ খান নিয়াজিসহ উদ্ধর্তন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

পাকিস্তান ও তুরস্কের প্রচার মাধ্যমসমূহ রোববার  যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ সংক্রান্ত  এ সহযোগিতার সংবাদটিকে দ’দেশের মধ্যেকার গভীর সম্পর্কের ফল উল্লেখ করতে ভুলেনি। এই সাবমেরিণ বিধ্বংসী  ৪টি মিলজেম শ্রেণীর অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের চুক্তিটি হয় ২০১৮ সালের জুলাইতে। চুক্তি মোতাবেক প্রথম দুটি তুরস্কে এবং ৩য় ও ৪র্থটি পাকিস্তানের করাচী শিপইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে নির্মাণ করা হচ্ছে। পাকিস্তানের জন্য এই প্রথম শ্রেণীর পশ্চিমা প্রযুক্তির যুদ্ধজাহাজ অতি প্রয়োজনীয় কেননা দেশটি নানা কারণে অধিকাংশ  প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরীতে চীনা প্রযুক্তি নির্ভর। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশ হওয়ার সুবাদে তুরস্ক পশ্চিমা প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দেশ। সামরিক প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে তুরস্কও পাকিস্তানের সাথে সেদেশের সম্পর্ককে বেশ গভীরতায় মূল্যায়ন করছে। দুদেশের সম্পর্ক কতটা গভীর এর একটা পরিস্কার উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।পশ্চিমা দেশগুলি সাধারণত: আধুনিক প্রযুক্তি সব দেশকে হস্তান্তর করতে বরাবরই অনীহা দেখায়।

তুরস্ক  মুসলিম ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ পাকিস্তানকে এই সাবমেরিণ ধ্বংসসহ রাডার ফাঁকিসহ নানা প্রযুক্তির যুুদ্ধজাহাজ নির্মাণে সব সহায়তায় রাজী  হয়। শুধু কি তাই, স্বয়ং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট লৌহমানব রেসিপ তাইয়েপ এরদোয়ান ২০১৯ সালের অক্টোবরে  এই শ্রেণীর চারটি যুদ্ধজাহাজের প্রথমটির নির্মাণ কাজ নিজে ইস্পাতের টুকরা কেটে উদ্বোধন করেন। ঐ  প্রথম যুদ্ধজাহাজটি ২০২৩ সালের দিকে চুক্তির সিডিউল মোতাবেক পৌঁছুবে বলে জানানো হয়েছে। তুরস্ক এরও আগে পাকিস্তানের এফ-১৬ জঙ্গী  বিমানের আধুনিকায়নের কাজ সম্পন্ন করেছে। সেদেশের ফ্রান্স থেকে কেনা অগাস্টা-৯০ শ্রেণীর সাবমেরিণের থেমে থাকা কাজও চলছে তুরস্কের ডকইয়ার্ডে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে নানা অজুহাতে সামরিক সহায়তা বন্ধ রাখে। এমনকি সন্ত্রাস দমনে আফগানিস্তানের অভিযানে পাকিস্তান আধুনিক প্রযুক্তির এএইচ-৬৪ ‌অ‌্যাপাচে শ্রেণীর এ্যাসল্ট হেলিকপ্টার তাকে দেয়ার জন্য বার বার তাগিদ দিলেও আমেরিকা দিতে রাজী হয়নি। ঠিক তখনই দেশটির দু:সময়ে তুরস্ক পাকিস্তানকে সেদেশে তৈরী  ৩০টি-১২৯ এ্যাসল্ট হেলিকপ্টার দিতে রাজী  হয়  এবং এব্যাপারে চুক্তি সম্পন্ন করে। সেসময়কার  ওবামা প্রশাসন ভারতকে চাওয়া মাত্রই ঐ এএইচ-৬৪ এ্যাসল্ট হেলিকপ্টার দিতে সম্মত হয়। যার ২২টির মধ‌্যে ২০টি ভারতে ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে । আমেরিকা সহ সমমনা পশ্চিমা জোট দেশ বিবেচনায় বিশেষ বিশেষ সামরিক সরঞ্জাম ও স্পর্শকাতর প্রযুক্তির সমরাস্ত্র হস্তান্তর করে থাকে এটি এরই একটি উদাহরণ মাত্র।###২৫.১০.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.