--- বিজ্ঞাপন ---

ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরনের প্রেমকাহিনী

৪২ বছরের টগবগে ইমানুয়েলের সঙ্গিনী ব্রিজিত থনিও, বয়স যার ৬৭

0

ওমর ফারুক হিমেল ##

একটু চমকে যান অনেকেই। কারণ ৩৯ বছরের টগবগে ইমানুয়েলের সঙ্গিনী ব্রিজিত থনিও। বয়স যার ৬৪। বয়সের ফারাক ২৫ বছর। অসম প্রেম তো নতুন কিছু নয়। গ্রামবাংলার রহিম-রূপবানের প্রেমগাথা কে না জানে? সে গল্পটা একটু শানিয়ে নিলে বেশ রোমাঞ্চ জাগে। সে রোমাঞ্চ রয়েছে ইমানুয়েল-ব্রিজিতের প্রেমেও।

বিশ্ব বাসীর আলোচনায় আবার ইমানুয়েল, কিশোর বয়সী ইমানুয়েল ম্যাকরন তখন স্কুলে পড়েন। বয়স ১৫। তার স্কুলের শিক্ষিকা ব্রিজিত থনিও তখনই ভালো লেগে যায় তার। সে প্রেম তো কেবল বুকেই ঝড় তোলে। কারণ ব্রিজিতের বয়স ৪০ বছর। তার ওপর স্কুল শিক্ষিকা। ইমানুয়েল প্রেমিক হিসেবে মন্দ নন। রয়ে সয়ে দুবছর চুপচাপ থাকলেন। কিন্তু ১৭ বছর বয়সে আর টিকতে পারলেন না। সেই শিক্ষিকাকেই বলে বসলেন, আমি আপনাকে ভালোবাসি! ব্রিজিত চমকে উঠলেন। ছেলের সাহস আছে, মানতে হয়। তখন ব্রিজিত তিন সন্তান নিয়ে দিব্যি সংসার করছেন। কিশোর বয়সী ছাত্রের প্রেম তাই ‘পাগলামি’ ঠেকল তার কাছে। ইমানুয়েলকে বললেন, ‘ইমানুয়েল, এ প্রেম নয়। পুরোটাই ঘোর। বয়স বাড়লেই কেটে যাবে।’ কিন্তু দিন যত গড়াল ইমানুয়েলের হাবভাবে মন জুড়াল ব্রিজিতের। পরের বছর দৃশ্যটা বেশ পাল্টে গেল।

ইমানুয়েলের প্রেমে কখন ব্রিজিতও হাবুডুবু খেতে লাগলেন টেরই পেলেন না! তারা ঘুরছেন, আড্ডা মারছেন, ফোনেও চলছে প্রেমালাপ। ঘটনা এটুকুই নয়— একে তো অসম বয়সী প্রেম, তার ওপর ব্রিজিত থনিওর মেজো মেয়েও লরেন্স আবার ইমানুয়েলের সহপাঠী। ইমানুয়েল-ব্রিজিতের গোপন প্রেম-অভিসার দাবানল হয়ে জ্বলে উঠল তাদের জীবনে। ব্রিজিতের সংসার ভাঙল বলে! ওদিকে কিশোর বয়সী ইমানুয়েলের কাণ্ড শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল তারা বাবা-মায়ের। তারা ভেবেছিলেন, ইমানুয়েল হয়তো স্কুল শিক্ষিকা ব্রিজিতের মেয়ে লরেন্সের সঙ্গে প্রেম করছে। কিন্তু ছেলে তো ব্রিজিতের প্রেমেই পাগল হলো! অ্যান ফোলদার লেখা ‘ইমানুয়েল ম্যাকরন : আ পারফেক্ট ইয়ং ম্যান’ বইতে বলা হয়েছে, ছেলের এ সম্পর্ক মেনে নেননি ইমানুয়েলের মা-বাবা। কারণ, ব্রিজিত তখন বিবাহিত আর তিন সন্তানের জননী। ছেলের বয়স ১৮ না হওয়া পর্যন্ত তার কাছ থেকে দূরে থাকতে বলেছিলেন বাবা। ব্রিজিত কান্নাজড়ানো কণ্ঠে তাকে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি আপনাকে কোনো কথা দিতে পারছি না।’ লোকে কি বলবে— সে না হয় বাদই দিলাম, ছেলে তো উচ্ছেন্নে গেল। লোক মুখেও ছিঃ ছিঃ পড়ে গেল। ইমানুয়েলের বাবা-মা আর দেরি করলেন না। ছেলেকে এলাকা ছাড়া করলেন। পাঠিয়ে দিলেন প্যারিসে।ওদিকে ব্রিজিতের পরিবারেও অস্থিরতা বেশ। কারণ তার প্রেমের কথা জানার বাকি নেই কারও। নিজের মেজো মেয়ে তো এ প্রেমের কথা ভালোভাবেই জানে। সন্তান-সংসার ছেড়ে ইমানুয়েলের কাছে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। ঘর ছাড়ার আগে, মেয়েদের সঙ্গে আলাপ করলেন এ নিয়ে। সবদিক মানানো আর হয়নি। সন্তানরা বিমূঢ়। কিন্তু এ বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আর ব্রিজিতও অন্যায় পথে হাঁটলেন না। তিনি বললেন, ইমানুয়েলকে বিয়েই করতে যাচ্ছি।
সে ঘটনা ব্রিজিতের বড় মেয়ে অজি বলেছেন মিডিয়াতে— ‘বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ইমানুয়েল ম্যাকরন আমাদের বাড়ি আসেন। বলেন, তোমাদের মাকে আমি বিয়ে করতে চাই। এটা বলা খুবই কঠিন ব্যাপার ছিল। আমরা মেনে নেব কিনা সে ঝুঁকি তো ছিলই। তবে তিনি আমাদের না জানিয়ে কিছু করতে চাননি, বরং আমাদের সমর্থন চেয়েছিলেন।’
ব্রিজিতের বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে ২০০৭ সালে। ইমানুয়েলের প্রেমে আস্থা ছিল ব্রিজিতের। তাই তার সঙ্গেই জীবনটা জড়ালেন। ২৫ বছরের ব্যবধান থাকলেও তারা বিয়েটা সেরেই ফেলেন। তার তিন মেয়েকেও মুগ্ধ করেন ইমানুয়েল। ২০০৭ সালে যখন ইমানুয়েল-ব্রিজিতে বিয়ে হয় তখন ইমানুয়েলের বয়স তখন ২৯, আর ব্রিজিতের ৫৪।

কৈশোরে একটা প্রশ্ন খুব শোনা যায়— তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও? ইমানুয়েলের কাছেও এ প্রশ্নটা আসত। তিনি স্কুল জীবনে দুটি ইচ্ছের কথা বলতেন। একটি হলো নাটকের শিক্ষিকা ব্রিজিতকে বিয়ে করা, অন্যটি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হওয়া। তার এ দুটি ইচ্ছের কথা শুনে লোকে হাসে। কেউ কেউ তাকে বলত, তুমি একটা পাগল। ইমানুয়েলের প্রেম পাগলামি কিন্তু বেশ রোমাঞ্চ জাগিয়ে সবার বাহবা কুড়িয়েছে। সেই স্কুল শিক্ষিকাকেই বিয়ে করে তার জীবনের প্রথম ইচ্ছেটা পূরণ করেছেন। এবার তার দ্বিতীয় ইচ্ছা সত্যি সত্যি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হয়ে পূরণ করেছেন। এখন তার বয়স ৪২ আর ব্রিজিতের বয়স ৬৭।

প্রেমের আরো রসায়ন: ব্রিজিত বলেন
ইমানুয়েল আমাকে বলেছিল, তুমি যাই বল, তোমাকে আমি বিয়ে করবই! আমি বললাম, তোমার মাথা খারাপ?
অ্যামিন্সের লা সুতেশ প্রভিডেন্স স্কুল। সেখানেই পড়েন ইমানুয়েল ম্যাকরন। সেই স্কুলের লাতিন, ফরাসি ও নাটকের শিক্ষিকা ছিলেন ব্রিজিত থনিও। চুল বাঁধতেন বিখ্যাত ফরাসি অভিনেত্রী ব্রিজেত বার্দোর মতো। এই শিক্ষিকার বিয়ে হয়েছিল ২০ বছর বয়সে স্থানীয় এক ব্যাংকারের সঙ্গে। সংসারে তিন সন্তান। তার এক মেয়ে পড়ে ওই স্কুলেই। ইমানুয়েলের সহপাঠী ছিল তার মেয়ে। নাম লরেন্স। একদিন লরেন্স স্কুল থেকে ফিরে মাকে বলল, মা, আমার সহপাঠী ইমানুয়েলের কথা শুনেছ। ছেলেটার মাথা খারাপ, সব কিছু নিয়েই অসাধারণ জ্ঞান তার।’ মেয়ের মুখে প্রশংসার ফুলঝুরি। শিক্ষিকা ব্রিজিত কৌতূহলী হয়ে নিজেই দেখা করলেন ১৫ বছরের সেই প্রতিভাধর ছাত্রের সঙ্গে। ইমানুয়েল সেদিন চেক লেখক মিলান কুন্দেরার জ্যাক অ্যান্ড হিজ মাস্টার নাটকের মূল ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন।
খানিকটা লজ্জা লুকিয়েই ১৫ বছরের ছেলেটি সেদিন লরেন্সের মাকে বলে বসলেন, তারা একসঙ্গে এদুয়ার্দো দো ফিলিপ্পোর আর্ট অব দ্য কমেডি নাটকের কয়েকটি অংশ নতুন করে লিখতে পারে কি না।
সে থেকেই শুরু। এরপর থেকে প্রতি শুক্রবার তারা দেখা করতে লাগলেন। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের সীমা পেরোচ্ছে— এমনটা কেউই ভাবেনি। কিন্তু ইমানুয়েলের মনের খবর টের পেলেন ব্রিজিত। ব্রিজিতের কথায়, ‘একটু একটু করে ইমানুয়েলের বুদ্ধিমত্তার প্রতি আমি দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম। সে হয়তো প্রেমই। সে প্রেমের গভীরতা এখন বলতে পারব না। লেকপাড়ে আমরা দীর্ঘ সময় হাঁটতাম। আমি নিজে প্রেমে পড়ে যাচ্ছিলাম, তারও একই অবস্থা।’ ওদিকে ১৭ বছর বয়সী ইমানুয়েলও নাছোড়বান্দা। সে বলল, তুমি যাই বল, তোমাকে আমি বিয়ে করবই! ইমানুয়েলের বাবা-মা যখন তাদের প্রেম ঠেকাতে তাকে প্যারিসে পাঠিয়ে দিলেন তখন ব্রিজিত বলল, ‘ইমানুয়েল, তুমি প্যারিসে গিয়ে স্কুলজীবন শেষ করো। তারপর একদিন অ্যামিন্স ছেড়ে যাব।’ সত্যি একদিন প্রেমেরই জয় হলো! ব্রিজিতের ডিভোর্স হলো। প্যারিস গিয়ে বিয়ে করলেন, ঘর সাজালেন ইমানুয়েলের সঙ্গেই।তরুণ ইমানুয়েল আর স্বর্ণকেশী ব্রিজিত এখন নতুন করে আলোচনায়।### ২৮.১০.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.