--- বিজ্ঞাপন ---

পরমানু শক্তির মজুদ করছে ইরান

পাহাড়ে মাটির নিচে স্থাপনা নির্মান শুরু, ইউরেনিয়াম জমানো প্রধান লক্ষ্য

0

কাজী আবুল মনসুর ##

ইরান কি পরমানু শক্তি সম্পন্ন দেশে পরিনত হচ্ছে, তারা আবারো পাহাড়ে মাটির নিচে পরমানু স্থাপনা তৈরি করছে? এসব প্রশ্ন গত দুদিন ধরে আলোচিত হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। একটি স্যাটেলাইট ইমেজে ইরানের পরমানু স্থাপনা তৈরির বিষয়টি ধরা পড়ে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা। জাতিসংঘ নিউক্লিয়ার এজেন্সি এরই মধ্যে এটি নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। ইরানের ইসাহান প্রদেশের নাতনজ পরমানু কেন্দ্র পুনরায় নির্মানের কাজ শুরু হয়েছে। ইরান এখানে ইউরেনিয়ামও মজুদ করছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি কমিশনের পরিচালক র‌্যাফেল গ্রসি।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দয়েৎসেভেলে জানায়,মাটির তলায় ফের পরমাণু প্লান্ট তৈরি করছে ইরান। সম্প্রতি এ কথা জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের পরমাণু পরীক্ষা সংক্রান্ত সংস্থার প্রধান। গত জুলাই মাসে ইরানের বর্তমান পরমাণু কেন্দ্রটিতে আগুন লেগে গিয়েছিল। ইরান দাবি করেছিল, চক্রান্ত করে ওই কেন্দ্রটিতে আগুন লাগানো হয়েছিল। ফের নতুন একটি পরমাণু কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের ওই প্রতিনিধি।

জাতিসঙ্ঘে পরমাণু সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি। সংস্থাটির ডিরেক্টর জেনারেল রাফায়েল গ্রসি। বার্লিনে অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে একটি সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ইরানের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি।জানান, নতুন করে মাটির গভীরে পরমাণু প্লান্ট তৈরির কাজ শুরু করেছে ইরান। জমাতে শুরু করেছে ইউরেনিয়ামও। তবে পরমাণু অস্ত্র তৈরির মতো ইউরেনিয়াম এখনো তাদের কাছে নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। পরমাণু চুক্তি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই খবরের শিরোনামে ইরান। ২০০২ সালে প্রথম স্যাটেলাইট ইমেজে ইরানের পরমাণু শক্তিকেন্দ্র নাতানজের ছবি ধরা পড়ে। পশ্চিম বিশ্ব বিষয়টি উদ্বেগ প্রকাশ করে। ২০০৩ সালে জাতিসঙ্ঘের প্রতিনিধিরা ইরানের পরমাণু চুল্লি দেখতে যান।

তারা জানান, মাটি থেকে সাত দশমিক ছয় মিটার নীচে তৈরি করা হয়েছে ওই পরমাণু কেন্দ্র। বিমান হামলাতেও যাতে কেন্দ্রটির কোনো ক্ষতি না হয়, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গোটা এলাকা জুড়ে রাখা হয়েছে অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইল।পরবর্তীকালে অবশ্য কম্পিউটার ভাইরাসের সাহায্যে ইরানের ওই কেন্দ্র অকেজো করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সফল হয়নি। অভিযোগ, আমেরিকা ও ইসরাইল ওই কাজ করার চেষ্টা করেছিল।

ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সে কারণে ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তির প্রস্তাব দেয় পশ্চিমা বিশ্ব। চুক্তিতে ছিল আমেরিকা, জার্মানি, যুক্তরাজ্য সহ একাধিক রাষ্ট্র। বলা হয়েছিল, পরমাণু গবেষণা করতে পারলেও ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারবে না। নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউরেনিয়ামের বেশি জমা করা যাবে না বলেও চুক্তিতে স্থির হয়।

কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরে ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং ইরানের উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বহু জলঘোলা হয়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স সহ বহু দেশ এখনো ওই চুক্তিতে থাকলেও বাস্তবে চুক্তিটির আর কোনো বাস্তবতা নেই। এরই মধ্যে গত জুলাই মাসে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে আগুন লাগে। কারো নাম না করলেও ইরান দাবি করে, চক্রান্ত করে আগুন লাগানো হয়েছিল। এরপর ফের তারা পরমাণু কেন্দ্র তৈরি করছে বলে তথ্য প্রকাশ করল জাতিসঙ্ঘ। যা নিয়ে ফের আন্তর্জাতিক কূটনীতি উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমেরিকা দীর্ঘ দিন ধরেই দাবি করছে, গোপনে নিউক্লিয়ার অস্ত্রও তৈরি করছে ইরান। যদিও তার কোনো প্রমাণ এখনো সামনে আসেনি।

ইরানের সিনিয়র সাংবাদিক সোহেল আহমদ পার্স টুডে কে জানান,ইরানের দু’টি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনার একটি হচ্ছে ‘ফোরদু’। এখানেই শুরু হয়েছে এই সমৃদ্ধকরণ। এর ফলে ‘ফোরদু’ আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ২০১৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি সইয়ের পর এই কেন্দ্রটি অনেকটা নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছিল। কারণ ইরান চুক্তি অনুযায়ী ‘ফোরদু’ স্থাপনায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধ রেখেছিল। এর আগে সেখানে ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ হচ্ছিল।

‘ফোরদু’ কারো কারো কাছে ইংরেজি শব্দ মনে হতে পারে। কিন্তু এটি ইরানের কোম প্রদেশের একটি গ্রাম। নামটির উৎপত্তি হয়েছে ফেরদৌস শব্দ থেকে। সবুজে ঘেরা ছোট্ট গ্রামটির প্রশান্তিময় পরিবেশের কারণে বেহেশতের নামের সঙ্গে মিল রেখেই এই নামকরণ। প্রথমে ছিল ফেরদৌস, পরে ফেরদো। এরপর আরেকটু পরিবর্তিত হয়ে ফোরদু-তে এসে দাঁড়িয়েছে। ১৯৮০’র দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধে এই গ্রামেই শহীদ হয়েছিলেন সবচেয়ে বেশি মানুষ। ফোরদু স্থাপনা প্রতিষ্ঠার কথা ২০০৯ সালে সবাইকে জানায় ইরান।

ইরানের অপর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রটি ইস্ফাহান প্রদেশের নাতাঞ্জে অবস্থিত। পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী সেখানে সীমিত পরিমাণে ৩ দশমিক ৬৭ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ চলছিল। এখনও চলছে। নাতাঞ্জ ও ফোরদু-দু’টি স্থাপনাই নির্মিত হয়েছে ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক গভীরে। শক্তিশালী বোমা মেরেও এ দু’টি স্থাপনা ধ্বংস করা কঠিন হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের হুমকির কারণে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা নির্মাণেও ইরানকে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।

ইরান ৬২ বছর ধরে পরমাণু তৎপরতা চালাচ্ছে। ১৯৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় পরমাণু প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করে তেহরান। এ পর্যন্ত ইরান এ খাতে বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় করেছে। এর একটি উদ্দেশ্য হলো পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন। আগামী আট বছরের মধ্যে ইরান পরমাণু প্রযুক্তির সাহায্যে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ইরানের আগ্রহের একটি কারণ হলো এই প্রযুক্তির বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি কম। প্রতি এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে গ্রিন হাউস গ্যাস নিগর্মন কম হয় ৭০ লাখ টন। এছাড়া ইরানের রয়েছে নিজস্ব ইউরেনিয়াম খনি। নিজস্ব ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি বিক্রিও করতে চায় তেহরান। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ সমৃদ্ধকৃত ইউরেনিয়াম বিক্রি করে বিপুল অর্থ আয় করছে।

নিজে সমৃদ্ধ করার আগে ইরানও চড়া দামে উচ্চ মাত্রার ইউরেনিয়াম কিনেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত পারমাণবিক গবেষণা চুল্লিতে কিছু সংস্কার এবং ২০ মাত্রার প্রায় ১১৬ কেজি ইউরেনিয়াম কিনতে ১৯৮৭ সালে ইরানের ব্যয় হয়েছিল ৫৫ লাখ ডলার। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই চুল্লিতে পারমাণবিক ওষুধ তৈরি করা হয় এবং এই চুল্লির জ্বালানি হচ্ছে ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম। ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লব সফল হওয়ার পর মার্কিন চাপের কারণে এই গবেষণা চুল্লির জন্য ইউরেনিয়াম পেতেও ইরানকে বেগ পেতে হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নিজেই ২০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করে ইরান।

ইসলামি বিপ্লবের আগে তেহরান রিঅ্যাক্টর বা পরমাণু চুল্লিটি বিপুল অর্থের বিনিময়ে নির্মাণ করে দিয়েছিল খোদ আমেরিকা। ১৯৬৭ সালে চুল্লি নির্মাণের পর ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব সফল হয় এবং আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের দেশগুলো এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। অসহযোগিতার জবাবে ইরান নিজেই পরমাণু সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জনে কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ইরান পরমাণু প্রযুক্তি সংক্রান্ত সার্বিক জ্ঞান আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়।এখন ইরান বলছে ৬০ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করাও তাদের কাছে কোনো বিষয়ই নয়। আর বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব দেশ ইউরেনিয়ামকে ২০ মাত্রায় সমৃদ্ধ করতে পারে তাদের পক্ষে স্বল্প সময়ের মধ্যেই তা ৯০ মাত্রায় উন্নীত করাও সম্ভব। ইরান ৬০ মাত্রার কথা কেন বলে? এর কারণ হলো, পারমাণবিক সাবমেরিন ও জাহাজ চালাতে ৬০ মাত্রার ইউরেনিয়াম লাগে। এটাও শান্তিপূর্ণ তৎপরতার মধ্যেই পড়ে এবং ইরান সে পর্যায়েও যেতে চায়।

বার বার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও চাপ ও উদ্বেগ অব্যাহত থাকায় ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তি সই করে ইরান। এই চুক্তিতে ১৫ বছরের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ৩ দশমিক ৬৭ মাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেয় তেহরান। কিন্তু ২০১৮ সালে অন্যায়ভাবে এই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায় আমেরিকা। এখন ইউরোপও সে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে গড়িমসি করছে। ইরান এখন এই চুক্তিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো থেকে ধাপে ধাপে সরে আসছে। কারণ তেহরান প্রতিশ্রুতি মেনে নিজের বিপুল বাজেটের কর্মসূচির একটা অংশ স্থগিত রাখলেও তাতে কোনো লাভ হয় নি।  ট্রাম্প চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার সময়ই ইরানের ওপর আগের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহালের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। ২০১৫ সালে চুক্তি সইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা বা অবরোধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও কার্যত সেগুলো অব্যাহতই ছিল। ব্যাংকিং খাতে তারা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পরও পরোক্ষভাবে বিশ্বের প্রধান ব্যাংকগুলোকে চাপের মধ্যে রেখেছিল যাতে ইরানি আর্থিক লেনদেন স্বাভাবিক না হয়। ট্রাম্প এখন বলছে, ইরানকে তার পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। সীমিত পর্যায়েও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে দেওয়া হবে না।

ইরান এখন পর্যন্ত আইএইএ’র কোনো নীতিমালা লঙ্ঘন করেনি। তাহলে দেশটিকে কেন শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত করা হবে? বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে এই প্রযুক্তির সাহায্যে। প্রযুক্তিতো কারো একক সম্পত্তি নয়। কিন্তু আমেরিকা বলছে, ইরানের ওপর আস্থা রাখা যায় না, ইরানকে শান্তিপূর্ণ কাজেও পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। এটা আমেরিকার প্রকাশ্য গুণ্ডামি।

ইরান এনপিটিতে সই করেছে এবং তাদের সব পারমাণবিক কার্যক্রম আইএইএ’র পুরোপুরি পর্যবেক্ষণে রয়েছে। এছাড়া বর্তমান ইরান কখনোই আগ্রাসী তৎপরতা চালায়নি। দখলদারিরও কোনো ইতিহাস নেই। অন্যদিকে ইসরাইল অন্যের জমি দখল করে অবৈধভাবে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এনপিটিতে সই করেনি। এরিমধ্যে পরমাণু অস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে দুইশ’র বেশি। কোনো পর্যবেক্ষককে এখন পর্যন্ত পরমাণু স্থাপনায় ঢুকতে দেয়নি তারা। এ অবস্থায় ইসরাইলের ওপর আস্থা রাখতে আমেরিকার সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু আইএইএ’র তত্ত্বাবধানে ইরানের শান্তিপূর্ণ কার্যক্রমেও তাদের আস্থা নেই। এটা আস্থার সংকট নয়, প্রকাশ্য গুণ্ডামি; গায়ের জোরে ন্যায্য অধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করা।

দুঃখজনকভাবে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও গোটা বিশ্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই দাদাগীরি নীরবে দেখছে, কোনো কোনো রাষ্ট্র এতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। আমেরিকা নিজেকে গোটা বিশ্বের একক নিয়ন্ত্রক ভাবছে দীর্ঘ বহু বছর ধরে। তবে ইরান আমেরিকার অহংবোধে মাঝে মাঝেই কালি লেপে দিচ্ছে যা সত্যিই প্রশংসনীয়। গত জুনে ইরানের আকাশে গুণ্ডামি করতে এসে এক হাজার একশ’ কোটি ডলার মুল্যের অত্যাধুনিক ড্রোন ‘গ্লোবাল হক’ হারিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

সম্প্রতি ফোরদু স্থাপনায় আবারও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার মাধ্যমেও যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী দেশগুলোকে ইরান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। ৫ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে তেহরান বুঝিয়ে দিয়েছে, পরমাণু তৎপরতা সীমিত রাখলেও পরমাণু জ্ঞান মোটেও হ্রাস পায় নি, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়ানো কেবল সিদ্ধান্তের ব্যাপার। সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞার পরও ইরান পরমাণু কর্মসূচিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার সাহস দেখাবে তা ট্রাম্পের মতো দাম্ভিক ব্যক্তির জন্য সত্যিই অবিশ্বাস্য।

যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও তার সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইরান যে সাহস ও শক্তি দেখাচ্ছে তাতে দেশটির প্রতি বিশ্বের ন্যায়কামী মানুষের সমর্থন ও আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে। ইরানের এই শক্তি ও সাহস ক্রমেই অন্যদের মধ্যেও সঞ্চালিত হচ্ছে। ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনের চলমান প্রতিরোধই এর প্রমাণ।’

যাই হোক ইরান যে নিউক্লিয়ার শক্তি সম্পন্ন দেশে পরিনত এটা এখন বিশ্বব্যাপি স্বীকৃত। পরমানু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ইরানের সামরিক শক্তির উন্নয়ন এখন সময়ের ব্যাপার। যে পরিমান ইউরেনিয়াম ইরানের প্রয়োজন তা মজুদ করতে ইরান এখন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকান আর্মস কন্ট্রোল এ্যাসোসিয়েশনের মতে, পরমানু অস্ত্র তৈরি করতে ইরানের ১ দশমিক ১৬ মেট্রিক টন ইউরেনিয়াম প্রয়োজন হবে। যার মধ্যে ৫ শতাংশ খাচিঁ হতে হবে। ইরান মনে হয় এ লক্ষে এগুচ্ছে।### ২৯.১০.২০

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.