--- বিজ্ঞাপন ---

তুরস্কের নতুন আবিষ্কার মনুষ্যবিহীন যুদ্ধ জাহাজ

সমুদ্র যুদ্ধে বহুবিধ কাজে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

ইয়োরোপের সামরিক জোট ন্যাটোর তথাকথিত পশ্চিমা মিত্রদেশগুলির বৈরী ও অসহযোগিতার জোটের মুসলিম দেশ তুরস্ক সামরিক ড্রোনের সাফল্যের পর এবার মনুষ্যবিহীন এ্যাসল্ট সমুদ্র যান তৈরীর চমকপ্রদ খবর দিয়েছে। পূর্ব ভুমধ্যসাগর ও এজিয়ান সাগরে খনিজ অনুসন্ধান নিয়ে গ্রীস, ফ্রান্স জোটের সাথে বর্তমানে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখে এ নতুন সশস্ত্র মেরিটাইম সমুদ্রযান তৈরীর খবর এল।  তুরস্কের সর্বশেষ আবিষ্কার  এ মনুষ্যবিহীন যুদ্ধ যান যুদ্ধের মোড় যে ঘুরিয়ে দেবে এতে কোন সন্দেহ নেই। গত ২৮ অক্টোবর  ‘উলাক’ নামের এই যুদ্ধ যানটিকে এরেস শীপইয়ার্ডে পরীক্ষামূলক ভাসানো হয়। তুরস্কের দৈনিক সাবাহ পত্রিকায় এ খবর দেয়।

‘উলাক’ (আর্মড আনমেনড সারফেস ভেহিকল) মনুষ্যবিহীন মেরিন যুদ্ধ যান সমুদ্র যুদ্ধে বহুবিধ কাজে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে মনে করেন সেদেশের সামরিক বিজ্ঞানীরা। যুদ্ধযানটি এতই অত্যাধুনিক যে এতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইলেকট্রনিক জ্যামিং সিসেস্টমস, যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত হয়ে ৪০০ কিলোমিটার এলাকায় নিশানায় ঘন্টায় ৬৫ কিলোমিটার বেগে চলতে সক্ষম। তুরস্কের আংকারার মেকেটসান ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি এই যুদ্ধযানটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের পথে তুরস্কের বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ‘আন্দালু’র সাপোর্ট যান হিসেবে এই উলাক বিশেষ ভুমিকা পালন করবে বলে জানা গেছে।  ন্যাটো জোটের অন্যতম সদস্য হলেও তুরস্ককে কৌশলগত সামরিক প্রযু্িক্ত হস্তান্তর থেকে বঞ্চিত করে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো জোটের সদস্য দেশগুলি। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রেজিপ তাইয়েপ এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার পর থেকে তুরস্ককে অন্যদের চাপিয়ে দেয়া তল্পিবাহকের পথ থেকে নিজ দেশের স্বাধীন সার্বভৌম নীতিতে পুন: ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হন। পুরোপুরি  পশ্চিমা নির্ভর না থেকে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তিনিই গ্রহণ করেন। এরই ফলশ্রুতিতে তুরস্ক বর্তমানে দেশের সামরিক বাহিনীর প্রায় ৭০ থেকে ৮০ ভাগ চাহিদা নিজ দেশের অস্ত্র নির্মাতারাই পূরণ করছে। দেশটি নিত্য নতুন হাইটেক অস্ত্রশস্ত্র রফতানিতেও ইসরাইল, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের সাথে সমানে পাল্লা দিচ্ছে। তুরস্কের বৃহৎ অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানী সমূহ বিশ্বের সেরা ১০০টি বড় অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানীর মধ্যে বর্তমানে আসেলসান ৫৪ তম এবং  টিএআই (টার্কি এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি) ৮৪ তম স্থানে উন্নীত হয়েছ্। এছাড়া অন্যান্য অস্ত্র নির্মাতার মধ্যে, জাহাজ নির্মাণে  এসটিএম, সাঁজোয়া যান নির্মাণে এফএনএসএস, ড্রোনে বেয়ারআকতার আরও অন্যান্য রকেটসান, হাভেলসান, বিএমসি প্রভৃতি অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। গত ১৮ বছর ধরে তিনি তুরস্ক পরিচালনায় রয়েছেন এরদোয়ান। এককালের সেদেশের কাসিমপাশা দেশের ফুটবল খেলোয়াড় দৃঢ়চেতা এই রাজনীতিবিদ ২০০৩ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী ও ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে তুরস্কের পরিচালনা কাঠামো, সেনাবাহিনীকে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত রাখা, বিচার ব্যবস্থাসহ  নানা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সংস্কার আনেন। অভিযোগ রয়েছে, তার এসকল সংস্কার দেখে আমেরিকাসহ ইউরোপীয় দেশগুলি ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে মদদ দিয়েছিল। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ঐ ব্যর্থ প্রচেষ্টার অন্যতম নায়ক তুরস্কের গুলেন নামক সুফিবাদের নেতা ফতেউল্লা গুলেনকে আমেরিকা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি  জানানোর পর এই অভিযোগ আরও দৃঢ় বলে প্রমাণিত হয়। ন্যাটো জোটের অপরাপর দেশ গ্রীস, জার্মানী তুরস্কের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে জড়িত সেনা অফিসারদের আশ্রয় দেয়। যারা তুরস্কের পার্লামেন্ট ভবনে এফ-১৬ বিমান নিয়ে বোমা বর্ষন করেছে তাদেরকে তথাকথিত এই ন‌্যাটো মিত্ররা আশ্রয় দেয়। রাস্তায় ট্যাংক নামে। এরদোয়ানকে হত‌্যার জন‌্য প্রচেষ্টা চালিয়ে সফল হয়নি ষড়যন্ত্রকারীরা। সাধারণ মানুষ এরদোয়ানের সমর্থনে ট্যাংকের সামনে শুয়ে প্রাণ বিসর্জন দিতে দেখা যায়।  রক্তার্ত এই অভ্যুত্থানে ৩০০ নাগরিক নিহত হন আহত ২ হাজারেরও বেশী। তুরস্কের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা চালিয়ে বেসামরিক মানুষ হত‌্যাকারি কুর্দি সন্ত্রাসবাদীদেরও আশ্র্রয় ইন্দন দিচ্ছে এসকল ন‌্যাটো মিত্র।

এরদোয়ানের দৃঢ়চেতা নীতি

প্রবল জনসমর্থন নিয়ে লৌহমানব প্রেসিডেন্ট রেজিব তাইয়েপ এরদোয়ান ব্যর্থ ক্যু’র ঘটনার পর সেনাবাহিনী, বিচার বিভাগসহ গুরুত্বপদে ব্যাপক সংস্কার করে তুরস্কে তথা গোটা বিশ্বে আলোচনায় এসেছেন। শতকরা ৯৮ ভাগেরও বেশী মুসলিম প্রধান দেশ হয়েও পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেয়া নীতির কারণে তুরস্কের মানুষ তথাকথিত সেক্যুলার বা ধর্মহীন নীতির কারণে সেখানে ইসলামী রীতিনীতি একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। দাঁড়ি রাখা, মহিলাদের হিজাব পরা, মসজিদে যাওয়া ধর্মকর্ম করা নিষেধ ছিল। বিচার ব্যবস্থা ও সামরিক বাহিনীতে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে এরদোয়ান এসকল ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৯৯৮ সালে ইসলামি কবিতা পাঠ করায় এরদোয়ানকে চারমাস কারাবাস করতে হয়  এবং আজীবনের জন্য রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করে তৎকালীন সামরিক বাহিনীর মদদপুষ্ট বিচার ব্যবস্থা।  সেক্যুলার তুরস্কের নামে জাতিকে ধর্মহীন করতে অতীতে এই মসজিদকে যাদুঘর বানানো হয়। তিনি ঐতিহাসিক হাগিয়া সোফিয়া মসজিদটি চালু করেন। প্রেসিডেন্ট এরদোগান যাদুঘরের  পরিবর্তে মসজিদটি পুন: চালু করেন। নিজে মোনাজাত করে উদ্বোধন করে মুসল্লীদের নামাজের বিধান চালু করেছেন। তুরস্কে ইস্তাম্বুলে  বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্যামলিকা নামের মসজিদটি নির্মাণ শেষে ২০১৯ সালের ৭ মার্চ নামাজ পড়ে তিনি উদ্বোধন করেন। এই ক্যামলিকা মসজিদে একসঙ্গে ৬৩ হাজার মুসুল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন। মহিলাদের জন্যও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে এ মসজিদে। তুরস্কের রাজনীতিতে ও বিচার কাঠামোতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ পুরোপুরি  বিলোপ করেছেন। পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত করেন। তথাকথিত ন্যাটোর সহযোগী দেশগুলির বিরুদ্ধে তিনি অসহযোগিতার অভিযোগ আনেন। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের পশ্চিমা তথাকথিত মিত্রদের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে কড়া মন্তব্য করতে ছাড় দেননা এরদোয়ান।  তুরস্ককে তিনি কোন দেশের তল্পীবাহক হতে দিতে নারাজ। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নী মুসলিম ঐতিহ্য তুলে ধরে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। বিশ্বে মুসলিম দেশগুলির সংকটেও সর্বাগ্রে পাশে এসে দাঁড়াতে  দেখা যায় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে। সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ন করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।  বর্তমানে তুরস্ক একের পর এক নিত্য নতুন অস্ত্র আবিষ্কারের পাশাপাশি সমরাস্ত্র উৎপাদনে দেশের সত্তর ভাগ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করছে। একসময় অস্ত্র আমদানিকারকের দেশ থেকে এরদোগানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে তুরস্ক এখন বছরে ২.৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমরাস্ত্র বিভিন্ন দেশে রফতানি করছে। বর্তমানে রাশিয়া থেকে আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এস-৪০০ পরীক্ষা করায় আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন দেশটি। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান আমেরিকার এ হুমকিকে পাত্তাই দিচ্ছেননা। তুরস্ক আমেরিকার এই নিষেধাজ্ঞাকে সেদেশকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত করার একটা উছিলা হিসেবে দেখছে। দেশটি বলছে রাশিয়ার একই ধাঁচের আগের সংস্করণ এস-৩০০ গ্রীসের নিকট রয়েছে মার্কিনীরা সে দেশকে কিছুই বলছেনা। বিশ্লেষকরা এমনকি ভারতের নিকট রাশিয়া একই সংস্করণের এস-৪০০ এর ক্ষেত্রেও হয়ত বিশেষ সম্পর্ক দেখিয়ে আমেরিকা  হয়ত নীরব থাকবে এমনটিই মনে করেন।###৩০.১০.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.