মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##
পশ্চিমা দেশগুলির নিষেধাজ্ঞার মুখে একের পর এক সমরাস্ত্র তৈরী করে তথাকথিত ন্যাটো মিত্রদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছে তুরস্ক। আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধে তুর্কি ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে অভিযোগ এনে কানাডা তুরস্কে গত সপ্তাহে বিমান ইঞ্জিন রফতানি বন্ধ ঘোষণা করার পর নিজ দেশে ইঞ্জিন তৈরী করে দেখালো অদম্য তুর্কী সামরিক ইঞ্জিনিয়াররা। তুর্কি দৈনিক সাবাহ পত্রিকা ৩০ অক্টোবর শুক্রবার এ খবর দেয়।
পত্রিকাটি জানায়, তুরস্কের বৃহৎ ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেকার এর “বেয়ারআকতার টিভি-৩’ ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন ‘আকিঞ্চি’ অচিরেই দেশে তৈরী ইঞ্জিন ব্যবহার শুরু করবে। তুরস্কের ড্রোন নির্মাতা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বেকার এর চীফ টেকনোলজি অফিসার (সিটিও) সেলচুক বেয়ারআকতার টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, তুরস্কের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টিএআই (টার্কি এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি) এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তুসাস ইঞ্জিন ইন্ডাস্ট্রিজ (টিএআই) এই ইঞ্জিন উৎপাদন শুরু করেছে। টুইটারে নতুন ইঞ্জিনের একটি ভিডিও প্রদর্শন করা হয়েছে। এতে দাবী করা হয়েছে, তুরস্কে তৈরী ইঞ্জিনটি বিশ্বের একই শ্রেণীর ইঞ্জিনগুলির চাইতেও উন্নতমানের। এর আগে কানাডার ড্রোন যন্ত্রাংশ নির্মাতা কোম্পানী এলথ্রি হ্যারিস ওয়েসক্যাম তুরস্কের বেয়ারআকতার ড্রোনে ব্যবহৃত অপটিক্যাল টার্গেটিং সেন্সর রফতানি বন্ধ করে দেয়। আর্মেনিয়ার খ্রীস্টান চার্চ ও রাজনৈতিক নেতারা কানাডার প্রতি আহ্বান জানালে দেশটি ঐ সিদ্ধান্ত নেয়। অবশ্য তুরস্ক নিজ দেশে একই যন্ত্রাংশ উৎপাদন করে আসছে। তবে এ ঘোষণার পরপরই তুরস্ক অকস্মাৎ কানাডার এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং শূণ্যতা পূরণে দ্রুত সেদেশের অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানী আসেলসানকে ঐ যন্ত্রাংশ উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়ার ঘোষণা দেয়।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন খ্রীস্টান ধর্মীয় সংগঠন কানাডাকে তুরস্কে ড্রোন যন্ত্রাংশ, ইঞ্জিন রফতানি বন্ধের দাবী জানিয়েছিল। ন্যাটো জোটের সদস্য হওয়া সত্বেও তুরস্কে আচমকা ড্রোন যন্ত্রাংশ ও ইঞ্জিন রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পরপরই তুরস্ক নিজ দেশের অস্ত্র কোম্পানিগুলিকে দ্রুত ব্যাপক উৎপাদন বৃদ্ধির নির্দেশ দেয়। দেশটির সমরাস্ত্র শিল্প উৎপাদন দেখাশুনার দায়িত্বে নিয়োজিত তুর্কি প্রেসিডেন্সি ইন্ডাস্ট্রিজ এ তাগিদ দেয়। তুরস্কের সামরিক ড্রোন অতি সম্প্রতি সিরিয়া, লিবিয়া ও সর্বশেষ আর্মেনিয়ায় যুদ্ধে বেশ সাফল্য দেখিয়ে শত্রু পক্ষের বিমান প্রতিরক্ষা, ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংকসহ বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে । এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, তুরস্কের সর্বশেষ আনমেনড কমবাট এরিয়াল ভেহিকল ভারী ড্রোন ‘আকিঞ্চি’ দেশে তৈরী আকাশ যুদ্ধের স্টেট অব দি আর্ট হাতিয়ার একটিভ ইলেকট্রোনিক্যালি স্ক্যানড এ্যারে রাডার (এইএসএ) সজ্জিত থাকছে। অত্যাধুৃনিক এই ড্রোনটিতে আধুনিক এই রাডারের পাশাপাশি তুরস্কে তৈরী ‘গোকোদোগান’ ও ‘বোজদোগান’ নামক আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত থাকবে। এছাড়া স্ট্যান্ড অব মিসাইল (এসওএম ) ও থাকছে এই আধুনিক ড্রোনটিতে। তুরস্ক বলছে, ন্যাটো সদস্য হওয়া সত্বেও তার প্রতি নানা অজুহাত দেখিয়ে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট রেজিপ তাইয়েপ এরদোয়ান দেশটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে ১২টি দেশ নিয়ে গঠিত হয় পশ্চিমা সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রেটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো)। প্রারম্ভকালীন ১২ দেশ হচ্ছে, বেলজিয়াম, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, আইসল্যান্ড, ইটালি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। তুরস্ক ও গ্রীস যোগ দেয় ১৯৫২ সনে। জার্মানী (১৯৫৫) ও স্পেন ১৯৮২তে।বর্তমান সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৩০-এ দাঁড়িয়েছে। ন্যাটো জোটে থাকা প্রথম মুসলিম দেশ তুরস্ক বলছে সামরিক প্রযুক্তি হস্তান্তর, অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। এই জোটের অপর মুসলিম দেশ আলবেনিয়া সদস্য পদ লাভ করে ২০০৯ সালে। যদিও শাসক আনবার হোজ্জার সময় দেশটি সম্পূর্ণ ধর্মহীন রাষ্ট্র ছিল। বর্তমানে আলবেনিয়ার ২৮ লক্ষ ৪৫ হাজার জনসংখ্যার বেশীর ভাগই সুন্নী মতাবলম্বী মুসলিম। আয়তন ২৮ হাজার ৭৪৮ বর্গকিলোমিটার। তুরস্কের সাথে আলবেনিয়ার অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক এখন মজবুত। দেশটির প্রধানমন্ত্রী এদি রামা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ব্যক্তিগত বন্ধু। ন্যাটোর পাশাপাশি পশ্চিমা জগতের অর্থনৈতিক জোট ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) গঠিত হয় ১৯৫১ সনে। ২৭টি দেশ এর সদস্য। এখানেও নিত্য নতুন দেশকে সদস্যভুক্ত করা হলেও তুরস্ককে নানা ছুতো দেখিয়ে সদস্য করা হচ্ছেনা। আংকারা এখানেও অর্থনেতিক সহযোগিতার চরম বৈষম্যের শিকার। তবে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে ইইউ দেশগুলোর সাথে কিছু বাণিজ্যক লেনদেন রয়েছে দেশটির। সর্বশেষ পরিসংখ্যানে তুরস্কের বর্তমান জনসংখ্যা ৮ কোটি ৪০ লক্ষের শতকার ৯৯ ভাগেরও বেশী মুসলমান সুন্নী। আয়তন ৭ লক্ষ ৮৩ হাজার ৫৬২ বর্গকিলোমিটার। ###৩০.১০.২০