--- বিজ্ঞাপন ---

মারা গেলেন জেমস বন্ড ০০৭ খ্যাত সিন কোনারী

তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর,

0

কাজী আবুল মনসুর ###

মারা গেলেন জেমস বন্ড ০০৭ খ্যাত বিখ্যাত অভিনেতা সিন কোনারি। স্কটল্যোন্ডের এ অভিনেতা কোনারি ১৯৮৮ সালে অস্কার পুরস্কার পান। বাহামাতে ৯০ বছর বয়সে শনিবার মৃত্যুবরণ করেন। তার জেমস বন্ড চরিত্র এখনও প্রাঞ্জল। এ চরিত্রে অভিনয় করার জন্য এখনও বিশ্বের নামকরা অভিনেতারা পাগল। সিন কোনারীর সন্তান জেসন কোনারি গণমাধ্যমকে বলেন, মৃত্যুর আগে তার বাবা কিছুটা সময় অসুস্থ ছিলেন। মৃত্যুর সময় পরিবারের সবাই তার কাছে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাবার চরিত্রটি এখনও আনটাচেবল। বাবা একজন বড় অভিনেতা ছিলেন।’

সারা বিশ্বে শিহরন জাগানো নাম সিন কোনারি। যে নামের সাথে জড়িয়ে আছে নানা কাহিনী। বিশেষ করে ৭০ থেকে ৯০ দশক জুড়ে জেমস বন্ড ০০৭ সারা বিশ্বে সাড়া জাগানো একটি চরিত্র ছিল। যিনি এ নামটি ধারন করে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি তার নাম সিন কনোরী। গোয়েন্দা কাহিনী নির্ভর তাঁর সিনেমাগুলো সব ধরনের মানুষকে এমনভাবে আকৃষ্ট করতো যা বলা বাহুল্য। তাই সিন কোনারী সারা বিশ্বের তরুনী মহলে নিজের অবস্থান এমন পাকাপোক্ত করে নিয়েছে যা কখনও ভুলবার নয়। ১৬ থেকে ৪৬ বছরের যে কোন তরুনীই ০০৭ জেমস বন্ড খ্যাত সিন কোনারী বলতে পাগল।

সারা বিশ্বে সাড়াজাগানো গোয়েন্দা মুভি সিরিজে ‘জেমস বন্ড’ এ অভিনয় করেছেন অনেক নামী-দামী অভিনেতা। অনেকে জেমস বন্ড হবার জন্য পাগলের মতো ঘুরছেন। যদি চরিত্রটি একবার ধরা দেয়। অনেকে সিনেমা জগতে জেমস বন্ড হয়ে অভিনয় করেছেন। সম্প্রতি বৃটেনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো সর্বকালের সেরা জেমস বন্ডেএর নির্বাচন। পাঠক ও দর্শকরা তাদের মতামত জানান। আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে স্কটিশ অভিনেতা সিন কোনারিকেই শ্রেষ্ঠ ‘বন্ড’ হিসাবে নির্বাচন করেছেন।

দয়েৎসেবেলে সূত্র জানায়, ‘এ জরিপে টুর্নামেন্টের মতো বেশ কয়েকটি রাউন্ডে মোট ১৪ হাজার পাঠক অংশ নেন, যার ফল প্রকাশ হয় গত সোমবার। প্রথম রাউন্ডে বর্তমান জিরো জিরো সেভেন ড্যানিয়েল ক্রেইগ (স্কাইফল) এর বিরুদ্ধে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন শন কনারি (গোল্ডফিঙ্গার)। অন্যদিকে আইরিশ অভিনেতা পিয়ার্স ব্রসনান (গোল্ডেন আই) দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ান জর্জ ল্যাজেনবি (অন হার ম্যাজেস্টিস সিক্রেট সার্ভিস) বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন। অক্টোপুসি খ্যাত ও সাতবারের বন্ড তারকা রজার মুর আশ্চর্যজনকভাবে ওয়েলসে জন্ম নেয়া টিমোথি ড্যালটনের (দ্য লিভিং ডেলাইটস) এর বিরুদ্ধে হেরে যান। ফাইনালে ড্যালটন ৩২ আর ব্রসন্যান ২৩ শতাংশ ভোট পেলেও শেষ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে আবেদনময় পুরুষ হিসেবে পরিচিত ৮৯ বছর বয়সি সীন কনোরি ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। কল্পনাতীত সাফল্য পাওয়া বন্ড -এর তৃতীয় ছবি ‘গোল্ডফিঙ্গার’ থেকে থিম সং- এর একটি লাইন উল্লেখ করে রেডিও টাইমস এর প্রধান সম্পাদক বলেন, ‘সিন কনোরি আবারো এটাই প্রমাণ করলেন যে তিনিই হলেন কিংবদন্তি কিং জেমস বন্ড, যার স্পর্শে সবকিছু সোনায় পরিণত হয়েছে।’সিন কনোরী আসলে কে ছিল। সারা বিশ্বের রাফ এন্ড টাফ্র নায়করা তাকে অনুসরন করেন। এ পর্যন্ত জেমস বন্ড হিসেবে যারাই রূপালী পর্দায় এসেছেন তারা সবাই চেষ্টা করেছেন সিন কোনারী হতে। ০০৭ জেমস বন্ড ছবির নায় সিন কনোরী ছিলেন জাতিতে আইরিস। তার জাতীয়তা নিয়ে বেশ কিছু মতবিরোধ আছে। এ নিয়ে কম জল ঘোলা হয় নি। শেষপর্যন্ত সংবাদ মাধ্যমে সিন কনোরী নিজেই তার অবস্থান পরিস্কার করেছিলেন। এগুলো এখন ইতিহাস। পিতা-মাতার দিক দিয়ে কনোরী আইরিস। তবে তার জম্ম হয়েছিল স্কটল্যান্ডে। সিন কোনারী বেশ রসিক ছিলেন। তার এ চরিত্রও অনেকে ফলো করতেন। জেমস বন্ডের ছবি মানেই মদ আর নারী। বিখ্যাত হার্পার পত্রিকায় একবার তার সাক্ষাতকার ছাপিয়েছিল। সে কনোরী বলেছিলেন, তিনি ড্রিন্ক করতেন না! এক সাংবাদিক একবার তাকে প্রশ্ন করেছিলেন,‘কোনারী তুমি নাকি ড্রিন্ক করোনা’? কোনারী দরাজ হাসি হেসে বললেন, ‘ইন্টারভিউতে অনেক মিথ্যা কথা বরতে হয়। বোঝই তো মানুষ একটা ইমেজ চায়। ইন্টারভিউতে নানা বাজে কথা বলে ঐ রকম ইমেজ বজায় রাখতে হয়। নইলে হলিউডের সব নামিদামী তারকারা যদি তাদের ব্যক্তিগত জীবনের কেলেংকারীর কথা প্রকাশ করে প্রকাশ্যে প্রচার করতো তাহলে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি লাটে উঠতো।’

প্রথম দিককার ছবির প্রশ্নে কনোরী বলেন, প্রথম দিককার ছবি মানে ব্যর্থতার ছবি। তখন কেই বা  আমাকে চেনে । কেউ আমাকে পাত্তা দেয় না। মনে আছে আমার প্রথম ছবি ‘অ্যানেদার টাইম অ্যানেদার প্লেইস’ লালা চারনারের বিপরীতে। একই সাখে ওয়াল্ট ডিজনীর একটা ছবিতে কাজ করছিলাম। ঐ ছবির নাম ছিল ‘দ্যা টাইটেল পিউপল’। মজার কথা কি জানেন , আমার দৈহিক ওজন ছিল বেশ কম। শরীরটা ছিল হাল্কা। চোয়ালের হাড়গুলো বের করা। আলফ্রেড হিচকক আমার চোয়ালের হাড় দেখে বলল, ক্যামেরায় এটা বিশ্রী আসবে। তুমি লম্বা আর মোটা জুলফি রাখো হে।’ আমি কৃত্রিম জুলফি রাখলাম। তা যা দেখাচ্ছিল আমার চেহারাখানা।’

০০৭ সিরিজের  ছবি ছাড়া অন্য কোন ছবিতে ভিন্ন কান চরিত্রে অভিনয় করা পছন্দ করো তুমি? এ প্রশ্নে বন্ড বলেন, সিউর। বলল সীন কোনারী। এই জেমস বন্ডের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছি আমি। সারা জীবন সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত হতে চাইনা আমি। তাছাড়া ঝামেলাও আছে। গোল্ডকিফার ছবিতে মারপিটের দৃশ্যে দারুন মার খেতে হয়েছে আমাকে। ফ্রম লাভ উইথ রাশিয়া ছবিতেও মার খেতে হয়েছে। এত মারামারি আর ভালো লাগেনা। তাই হিচককের ডাকে সাড়া দিলাম। গ্রহণযোগ্যতাও পেয়েছি। কিন্ত একটা জিনিষ উপলদ্ধি করলাম, দর্শকরা আমাকে সিক্রেট এজেন্ট হিসেবেই দেখতে চায়।

তুমি কি স্বাধীনচেতা? এ প্রশ্নে কোনারী বলেন, ১৯৫৮ সালে আমি যখন হলিউডে আসি তখন এখানকার কলাকুশলীরা আমাকে একটি টিভি সিরিজে অভিনয় করতে বলেন। কিন্ত আমি রাজী হয়নি। আমার মনে হয়েছিল আমার আরও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। আমি লন্ডনে ফিরে যাই। সেখানে দুটো নাটক আর দুটো টিভি সিরিজ করি। বছরে মাত্র একটি ছবি করি। এগুলো উদ্দেশ্য ছিল দক্ষতা অর্জন করা। কারন পূর্ণ দক্ষতা থাকলে তখন আমি যে কোন চরিত্রে অভিনয় করতে পারবো।

জেমস বন্ড সিরিজ কোনারীকে কি দিয়েছে? এ প্রশ্নে কোনারী বেশ নাড়াচাড়া দিয়ে বলেন, বলল কি দিয়েছে? আগে আমার একটি একটা স্কুটার ছিল। যা দিয়ে পই পই করে ঘুরে বেড়াতাম। এখন স্কুটারের পরিবর্তে গাড়ী হয়েছে। আর আগে আমার কোন অর্থ ছিল না। সে জন্য বিশেষ গার্ল ফ্রেন্ড ছিল না। এখন আমার প্রচুর মেয়ে বন্ধু। আমি ওদের জ্বালা সইতে পারি না। মেয়েদের থেকে আমি পালাতে চাই।’

ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার জানায়, বৃটিশ সাংবাদিক এবং ঔপন্যাসিক ইয়ান ফ্লেমিংয়ের গড়া চরিত্র জেমস বন্ডের ভূমিকায় সবচেয়ে প্রথম দেখা গিয়েছিল সিন কোনারিকে। ‘ডক্টর নো’, ‘ইউ অনলি লিভ টোয়াইস’, ‘ডায়মন্ডস আর ফরেভার’, ‘নেভার সে নেভার এগেইন’— একের পর এক ফিল্মে বন্ডকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন স্যর শন। গত শতকের ছয়ের দশকে রুপোলি পর্দার বন্ডের চরিত্র এক সময় তাঁর কেরিয়ারে তুমুল সাফল্য এনে দিয়েছিল। ১৯৬২ থেকে ’৮৩ পর্যন্ত একের পর এক ৭টি বন্ড-ফিল্মে দেখা গিয়েছিল সিন কোনারিকে। সে সময়কার ফ্যানেদের বিচারে সেরা ‘০০৭’ তিনিই। এর পর মোড়ঘোরানো চরিত্র এল ’৮৭-এ। বন্ডের নায়কোচিত ইমেজ ছেড়ে সে সময় পর্দায় নিজেকে ভাঙতে শুরু করে দিয়েছে সিন কোনারি। ব্রায়ান ডি পালমার পরিচালনায় আইরিশ পুলিশ হিসেবে তাঁকে দেখা গিয়েছিল রবার্ট ডি নিরো, কেভিন কস্টনার, অ্যান্ডি গার্সিয়ার সঙ্গে। অস্কারের মঞ্চে সেই ক্রাইম ফিল্ম ‘দ্য আনটাচেবলস’-এর জন্য পেয়েছিলেন সেরা সহ-অভিনেতার শিরোপা। এর পর একের পর সম্মান পেয়েছেন। ‘মার্নি’, ‘মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’, ‘দ্য ম্যান হু উড বি কিং’, ‘আ ব্রিজ টু ফার’, ‘ফাইন্ডিং ফরেস্টার’— নিজের আদল ভেঙে করে জীবন্ত করেছেন একের পর এক চরিত্রকে। এরই ফাঁকে ইন্ডিয়ানা জোন্স সিরিজের ফিল্মেও মুখ দেখিয়েছেন।

কিংবদন্তী এ অভিনেতা ১৯৩০ সালে জম্মগ্রহন করেন। ৯০বছর বয়সে তিনি অনেক জেমস বন্ড দেখেছেন। তবে তার মতোন কেউ সৃষ্টি হবে কিনা এ নিয়ে নির্মাতাদের মধ্যেও নানা সংশয় রয়েছে। তার মৃত্যুতে হলিউডে শোকের ছায়া নেমে আসে।##৩১.১০.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.