--- বিজ্ঞাপন ---

বাইডেনের রানিং মেট কে এই কমলা হ্যারিস

0

 

ওমর ফারুক হিমেল##

শ্যামলা গোপালন, একজন ভারতীয়,জন্ম মাদ্রাজে এই তামিল নারী ১৯৫০এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে যান ভাগ্যের সন্ধানে। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন জ্যামাইকান ডোনাল্ড জে. হ্যারিসের সাথে । তাদের ঘরে জন্ম নেয়া কন্যা কমলা। তাদেরই কন্যা কমলা হ্যারিস আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট । কোনো কৃষ্ণাঙ্গ, কোনো দক্ষিণ এশীয়, এমনকি কোনো নারী অতীতে প্রেসিডেন্ট তো হইনি কখনো ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। সেই দেয়াল ভাঙলেন জ্যামাইকান বাবা আর ভারতীয় মায়ের সন্তান কমলা হ্যারিস। জো বাইডেনের রানিং মেট কমলা হ্যারিস।

উপমমহাদেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে সৌভাগ্য, সৌন্দর্য ও শক্তির দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক আর সংস্কৃত শব্দ ‘কমল’ বা পদ্মফুলের সমার্থক শব্দে মেয়ের নাম ‘কমলা’ রাখেন তার মা শ্যামলা গোপালান। সেই কমলা হ্যারিসই বাগ্মিতা, যুক্তি আর ক্ষুরধার বুদ্ধির জোরে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও তাদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারে আনেন দারুণ গতি। ৫৫ বছর বয়সী ক্যালিফোর্নিয়ার এ সিনেটর শুরুতে অবশ্য বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। দুজনেই লড়েছিলেন দলীয় মনোনয়ন পেতে। ওই দৌড়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল কমলা হ্যারিসের; তবে এরপর অবশ্য বেশি দিন অপেক্ষাও করতে হয়নি ভারতীয়-জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত এ নারীকে।

এ বছর অগাস্টেই তিনি পেয়ে যান প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও বড় দলের হয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার টিকেট। দীর্ঘ কর্মজীবনে অনেকগুলো ‘প্রথমের’ জন্ম দেওয়া এ নারীই এখন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে গড়েছেন নতুন এক ইতিহাস। কমলা হ্যারিসের বাবা ডনাল্ড হ্যারিস জ্যামাইকান। মার্কসীয় ঘরানার অর্থনীতিতে দখল থাকা এ অধ্যাপক এক সময় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন। হ্যারিসের মা ক্যান্সার গবেষক শ্যামলা গোপালান, ভারতীয় এক কূটনীতিকের মেয়ে।

“বার্কলেতে নাগরিক অধিকার আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়ে যান তারা,” হ্যারিস তার আত্মজীবনী ‘দ্য ট্রুথস উই হোল্ড: অ্যান আমেরিকান জার্নি’তে বাবা-মায়ের পরিচয়, ঘনিষ্ঠতার কথা জানাতে গিয়ে এমনটাই বলেছেন । জ্যামাইকার এক জোতদার পরিবারে বাবার দিককার এক দাদীর কাছে বেড়ে ওঠা ডনাল্ড হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রে বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন ১৯৬১ সালে। এখানেই তার পরিচয় হয় শ্যামলার সঙ্গে। এরপর প্রেম, সংসার।

কমলা দেবী হ্যারিস এই দম্পতির প্রথম সন্তান। তার জন্ম ওকল্যান্ডে, ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর। কমলার নামের শেষাংশ বাবার কাছ থেকে নেওয়া; প্রথমটুকু মায়ের দেওয়া। ওই সময় ডনাল্ড হ্যারিস আর শ্যামলা নাগরিক অধিকার আন্দোলনে এতটাই নিবেদিত ছিলেন যে, এলাকার প্রায় সব প্রতিবাদ কর্মসূচিতেই তাদের দেখা মিলত। মাঝে মাঝে স্ট্রলারে করে মেয়েকেও নিয়ে যেতেন তারা। হ্যারিসের ৭ বছর বয়সে তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়। এরপর দুই মেয়েকে নিয়ে শ্যামলার সংগ্রামী জীবন শুরু হয় বার্কলের একটি হলুদ ডুপ্লেক্স ভবনের উপরের তলায়।

মেয়েরা যেন নিজেদের শেকড় ভুলে না যায় সেদিকে ছিল ভারতীয় এ নারীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। মায়ের কারণেই শৈশবে কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য বানানো ব্যাপটিস্ট চার্চ এবং হিন্দু মন্দির দুই জায়গাতেই তার দুই মেয়ের যাতায়াত ছিল নিয়মিত। “মা ভালো করেই বুঝেছিলেন যে, তিনি দুটি কৃষ্ণাঙ্গ কন্যাকে বড় করছেন। তিনি জানতেন, তার বেছে নেওয়া দেশ (যুক্তরাষ্ট্র) মায়া ও আমাকে কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবেই দেখবে। আমরা যেন আত্মবিশ্বাসী, গর্বিত কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে বেড়ে উঠি তা নিশ্চিত করতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন,” আত্মজীবনীতে লিখেছেন হ্যারিস।

বাল্যকালে ভারতে বেড়াতে যাওয়া হ্যারিসের ওপর যে তার স্বাধীনতা সংগ্রামী নানারও যথেষ্ট প্রভাব ছিল, ‘দ্য ট্রুথস উই হোল্ড: অ্যান আমেরিকান জার্নি’ থেকে তারও আঁচ পাওয়া যায়। হ্যারিসের জয় কামনা করে ভারতের তামিলনাড়ুতে তার নানার গ্রামে ভোটের সময় পূজা হয়েছে। শ্যামলা গোপালান কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি নিলে কমলা-মায়াকে মায়ের সঙ্গে বেশ কিছু কাল মন্ট্রিয়লেও থাকতে হয়েছিল। কমলার মা অনেক ত‍্যাগ স্বীকার করেছেন। তবে পিতা মাতা ভিন্ন ভিন্ন দেশের হওয়ায় সবকিছুতেই শৈশব থেকেএক বৈচিত্র‍্যময় পরিবেশ পেয়েছেন।

আমেরিকার সমাজে বিদ‍্যমান জাতিগত ঘৃণা, বিভেদ, ধর্মীয় বৈষম‍্য, বর্ণবাদ ইত‍্যাদি দূর করে বৈচিত্র‍্যতার মূল‍্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধার জায়গাটুকু এখন আমেরিকা সহ পুরো বিশ্ব জুড়ে প্রয়োজন। একজন নারীর বৈচিত্র‍্যময় এই বিজয় নিসন্দেহে প্রশংসিত এবং আমেরিকা একটি প্রাণখোলা অভিবাসীর দেশ সেটি প্রমাণিত।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.