--- বিজ্ঞাপন ---

পাকিস্তান-রাশিয়ার সামরিক বন্ধুত্ব বাড়ছে, মহড়ায় রুশ স্পেশাল ফোর্স

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

পাকিস্তান সৈন‌্যদের সাথে রাশিয়ার স্পেশাল ফোর্সের যৌথ সামরিক মহড়া চলছে। এর নাম দেয়া হয়েছে রুশ ভাষায় ‘ধ্রুজবা’ এর মানে হলো ‘বন্ধুত্ব’। রোববার ( ৮ নভেম্বর) থেকে শুরু হল প্রায় পনের দিনব‌্যাপী এই ‘বন্ধুত্ব’ নামের মহড়াটি।  পাকিস্তানের সুউচ্চ পর্বতে রুশ স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডোরা ইসলামাবাদের কমান্ডোদের সাথে বিভিন্ন মহড়ায় অংশ নেবে।  তবে মহড়াটি এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যা নিয়ে সামরিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এই বন্ধুত্ব নামের সামরিক মহড়ার আয়োজনস্থল ও এর বেছে নেয়া সময়টিকে  সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটু ভিন্নভাবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন শেষে ক্ষমতা গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়ে পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আড়ালে গোপণ কোন পরিকল্পনা লুকিয়ে আছে কি? এছাড়া ভারতের সাথে চীনের সীমান্ত উত্তেজনার চলমান সময়ে রুশ স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডোদের বন্ধু বন্ধু বলে একেবারে পাকিস্তানের দুর্গম পাহাড়ী পর্বতে মহড়ার মূল উদ্দেশ‌্য নিয়ে সামরিক মহলে রয়েছে নানা গুঞ্জণ। ভারতের সাথে আমেরিকার সহযোগিতা অবি‌শ্বাস‌্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় রাশিয়া চীর প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে না তো! এসব নানা জল্পনা ঘুরপাক খাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর ভারত-পাকিস্তানকে নিয়ে।

পাকিস্তানের সাথে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির অন্তরালে!

অতীতে ভারতের এককালের প্রধান অস্ত্রের যোগানদাতা ছিল রাশিয়া। হালে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এখন নয়াদিল্লীর প্রধান আধুনিক সব অস্ত্রশস্ত্রের উৎস। ভয়ংকর এ এইচ-৬৪ এপাচি এ‌্যাটাক হেলিকপ্টার, দুর্গম পাহাড়ে স্বল্প স্থানে ল‌্যান্ড করতে সক্ষম সি-১৭ গ্লোবমাস্টার সামরিক পরিবহণ বিমান থেকে শুরু করে পি-৮ পোসাইডন সাবমেরিণ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত টহল ও গোয়েন্দা বিমান  এবং সর্বশেষ ভারত-আমেরিকার মধ্যে স্বাক্ষরিত হল ‘বেকা’ বেসিক এক্সচেঞ্জ কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট (BECA)  বা ‘দ্বিপাক্ষিক মত বিনিময় ও সহযোগিতা চুক্তি’। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ রিপ্লেনিশমেন্ট চুক্তি।

আমেরিকার সাথে ভারতের ‘বেকা’ চুক্তি আসলে কি?

আমেরিকার ট্রাম্প ক্ষমতার শেষ দিনগুলিতে  ভারতের নরেন্দ্র মোদিকে দেয়া সব ধরনের সামরিক সহযোগিতার শেষ গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটিও সম্পন্ন করে। গত মাসের ২৬ অক্টোবর  মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার ভারত সফর করেন এবং দুদেশের সমপর্যায়ের মন্ত্রীদের সাথে নিয়ে দুই যোগ দুই বৈঠকে ওই চুক্তি সই হয়। চুক্তিটির গুরুত্ব সামরিক দিক থেকে বেশ গভীর।এ ই চুক্তি যে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সামরিক সম্পর্কে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে তা নিয়ে সামরিক বিশেষজ্ঞরা প্রায় সবাই একমত। মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপগ্রহ থেকে ভারত টেপোগ্রাফিক্যাল, নটিক্যাল ও অ্যারোনটিক্যাল তথ্য পাবে যা শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র ও সশস্ত্র ড্রোন ভূপাতিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সবকিছুই নরেন্দ্র মোদি সরকার আমেরিকা থেকে আদায় করে দেশটির সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছে।‍ এছাড়া চুক্তির আওতায় ভারতের কাছে আরো জঙ্গিবিমান ও ড্রোন বিক্রি করবে আমেরিকা। অপরদিকে, সামরিক গোপণ উপগ্রহ মারফত প্রাপ্ত ‌তথ‌্য আদান প্রদান চুক্তির  বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছে পাকিস্তান। দেশটি বলছে, চীনের বিরুদ্ধে নয় ভারত এসকল সর্বাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই ব‌্যবহার করবে সন্দেহ নেই। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই চুক্তির ফলে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

গুরুত্বপূর্ন  ‘রিপ্লেনিশমেন্ট ‘ চুক্তি

বিবিসি বাংলার শুভজ্যোতি ঘোষ দিল্লি থেকে ‘রিপ্লেনিশমেন্ট ‘ চুক্তি সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে বলেছেন, ২০১৬ সালের ওই চুক্তি হল ভারত ও আমেরিকা একে অন্যের বহরকে অবকাঠামোগত সুবিধা দেবার লক্ষ্যে আরও এক নজিরবিহীন চুক্তি। ভারত ও আমেরিকা যাতে পরস্পরের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে রসদ ভরার ও মেরামতির জন্য অ্যাক্সেস পায়, তা নিশ্চিত করতে দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।এই চুক্তির ফলে দুই দেশের সামরিক বাহিনী একে অন্যের নৌ, বিমান বা সেনা-শিবিরগুলোতে গিয়ে নতুন শক্তিতে বলীয়ান হতে পারবে, সামরিক পরিভাষায় যাকে বলে ‘রিপ্লেনিশমেন্ট।ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টার ও তাঁর ভারতীয় কাউন্টারপার্ট মনোহর পারিক্কর পেন্টাগনে যে সমঝোতায় সই করেন, ভারত ও আমেরিকার মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনও চুক্তি আগে কখনও হয়নি। এই চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর মি: কার্টার জানান, এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের ফলে দুদেশের যৌথ সামরিক অভিযান চালানো এখন অনেক সহজ হয়ে যাবে। সেসময়কার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কথায়, “গত পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে এ এক অবিস্মরণীয় পালাবদল। এর ফলে আমাদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এখন একটা অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে, এবং আমেরিকার দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে আমরা শুধু আমাদের দীর্ঘকালের ও ঘনিষ্ঠতম মিত্র দেশগুলোর সঙ্গেই এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকি ‘ খোদ ভারতেও এই চুক্তির কঠোর সমালোচনা হয়েছে।  ভারতের প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “আমরা এতদিন নন-অ্যালাইনড বা নিরপেক্ষ ছিলাম। কিন্তু এখন আমরা রাষ্ট্রীয় স্বার্থে আর নিরপেক্ষ থাকতে পারছি না, বরং আমেরিকার সাথে অ্যালাইনড হয়েছি – এই চুক্তির মধ্যে দিয়ে সেটাই মেনে নিলাম।’ তিনি আরও বলেন, “এর আসল লক্ষ্য যে চীন তা তো দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। চীন বহুদিন ধরেই পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। পাকিস্তান আমাদের তাৎক্ষণিক শত্রু হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে আমাদের টক্কর দিতে হবে চীনের সঙ্গেই।### ৯.১১.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.