--- বিজ্ঞাপন ---

ইরান প্রশ্নে কি হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ভূমিকা

0

আব্দুল্লাহ আরাফাত ##

অতীতে ইরানের সাথে মার্কিনিদের সখ্যতা ছিল। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর সম্পর্কে ফাটল ধরে। মিসিসিপি-কারুন নদীতে অনেক পানি গড়িয়েছে, দুইদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধের কবলে পড়লেও ইরান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মাথা নত করেনি। ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচী সম্প্রসারণ চালিয়ে গিয়েছে। এরই মধ্যে নীরবে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করে।

২০১৫ সালে বিশ্বের ছয় পরাশক্তি দেশের সাথে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী  একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। দেশগুলোর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেই। কিন্তু ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার মাত্র এক বছরের মধ্যে পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। বারাক ওবামার শাসনামলে দুইদেশের মাঝে সম্পর্কের পালে যে হাওয়া লাগে ডোনাল্ড ট্রাম্প এসে তা মিইয়ে দেন। এরপর, ২০২০ সালের শুরতে ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার কাশেম সোলাইমানিকে হত্যায় দুই প্রতিপক্ষ দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌছায়। বর্তমানে নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান জো বাইডেন তার আমলে ইরানের প্রতি কতটা নমনীয় হবেন তাই  বিশেষজ্ঞ মহলের কাছে বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।

অর্থনৈতিকভাবে দূর্বল ইরান কৌশলগতভাবে চীনের অর্থে বন্দর ও কাস্পিয়ান সাগরের তেল-গ্যাসের পাইপলাইন বসানোর কাজে উন্নয়ন সাধন করলেও মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে আঞ্চলিক ও বৈদেশিক কারণে ইরান বড় জায়গা দখল করে রেখেছে। জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন তিনি পুনরায় পরমাণু কর্মসূচী সংক্রান্ত চুক্তিতে ফিরে যাবেন। জো বাইডেন আপাদমস্তক একজন ঠাণ্ডা মাথার রাজনীতিবিদ। অতীতে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার কারণেই তিনি এই বিষয়গুলো নিয়ে ওয়াকিবহাল। ইরান পুনরায় পরমাণু হ্রাসকরণ চূক্তি কঠোরভাবে মেনে চললে তিনি অর্থনৈতিক অবরোধ ধীরে ধীরে তুলে নিবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বাইডেনের এমন মনোভাব ইরানের জন্য আশার আলো বলে রাষ্ট্রপতি হাসান রুহানী তার বিভিন্ন বক্তব্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, ইরানের বর্তমান রাষ্ট্রপতি হাসান রুহানী মধ্যপন্থী চিন্তাধারার রাজনীতিবিদ হিসেবে খ্যাত।

যুক্তরাষ্ট্রের ইরান নীতি সহজে পরিবর্তন হবে না, তবে ট্রাম্পের চেয়েও বাইডেন ইরানের প্রতি সহনশীল হবেন বলে নীতি-নির্ধারনী মহল ধারণা করছেন। আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউটের সিনিয়র ফেলো ড্যানিয়েল প্লেটকা মনে করেন, জো বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি ইরান বান্ধব হতে চলেছে। যদিও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তারা আর কোন ধরণের আলোচনায় বসবে না। এটাও মনে রাখা উচিত, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক হাওয়া সদা পরিবর্তনশীল এবং এতে স্থায়ী বলে কিছু  নেই। ইরান তার নিজের স্বার্থেই আমেরিকার সাথে সম্পর্ক সহজ করবে তার অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরানিত করতে।

এদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের স্বাভাবিকরণে ফিরে গেলে এই অঞ্চলে তৈরি হয়েছে ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারের এক জটিল খেলা। এই ধরণের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নীরব কূটনীতির আশ্রয় নিয়েছে। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকেই বাংলাদেশের অর্ধেক রেমিট্যান্স আসে এবং প্রবাসীদের অর্ধেকেই এই অঞ্চলে বসবাস করে। অস্থিতিশীল এই বৈশ্বিক বিশ্বে বাংলাদেশের কাছে যুক্তরাষ্ট্র – ইরান সম্পর্কে অবগত থাকা নিজের স্বার্থেই গুরুত্বপূর্ণ।  ### সূত্রঃ বিবিসি, ডয়েসে ভেলে, মোজাইকম্যাগাজিন .কম/১২.১১.২০

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.