মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##
পাকিস্তান নৌ বাহিনীর জন্য ইউরোপের রোমানিয়ায় নির্মিত অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ “তাবুক” নৌবাহিনীর বহরে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । একেবারেই আধুনিক প্রযুক্তির এই তাবুক শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজটি বহুমুখী ব্যবস্থা ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার, জাহাজ ও বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত।
গত শুক্রবার ( ১৩ নভেম্বর) পাকিস্তানের ইংরেজী দৈনিক পত্রিকা এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এ খবর দেয়। পত্রিকাটি বলছে, এই স্টেট অব দি আর্ট এই ‘তাবুক’ শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ পাকিস্তানের নৌ বহরে যুক্ত হওয়ায় সেদেশের জলসীমা রক্ষা ও নৌক্ষমতাকে আরও বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। রোমানিয়ার কনস্টান্টার কৃষ্ণ সাগর বন্দরে জাহাজটির হস্তান্তর ও কমিশনিং অনুষ্ঠান হয়। পাকিস্তান নৌবাহিনীর উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাটি জানিয়েছে, পাকিস্তান নৌবাহিনীর জন্য দুটি করভেটের চুক্তি স্বাক্ষর করে পাকিস্তান সমরাস্ত্র উৎপাদন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং রোমানিয়ার মেসার্স ডামেনে শিপইয়ার্ড । এই শ্রেণীর প্রথম যুদ্ধ জাহাজ পিএনএস ‘ইয়ারমুক’ এবছরের শুরুতে নৌ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ডিফেন্স এন্ড এ্যরোস্পেস পত্রিকা জানায়, ‘তাবুক’ হচ্ছে মাঝারি আকার এবং টনেজের বহুমুখী এবং অত্যন্ত লেটেস্ট মডেলের একটি যুদ্ধ জাহাজ। এটি সর্বাধুনিক ইলেকট্রনিক ও জাহাজ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, সেল্পপ্রটেকশন ও টার্মিনাল ডিফেন্স সিস্টেম সজ্জিত। এই যুদ্ধ জাহাজটি মাল্টিরোল হেলিকপ্টার ও ড্রোন ইউএভি (আনমেন এরিয়াল ভেহিকল) বহন করবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় পিএনএস তাবুকের কমান্ডিং অফিসার ভারত মহাসাগর অঞ্চলে আঞ্চলিক সমুদ্র সীমায় টহল দেয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তান নৌ বাহিনীর প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি ডামেন শিপইয়ার্ডকে পাকিস্তানে এই আধুনিক শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে ও প্রযুক্তি হস্তান্তরে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করায় জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির পেশাদারী দক্ষতার প্রশংসা করেন।
পাকিস্তান ৫০ যুদ্ধ জাহাজের বহর গড়ছে, পরমাণু সাবমেরিণ যুক্ত হচ্ছে
পাকিস্তান নৌবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে ৫০টি জাহাজের বহর যোগ করতে সে দেশের নেভীকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এর মধ্যে থাকছে ২০টি বড় আকারের যুদ্ধজাহাজ। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই যোগ হতে যাচ্ছে চীন থেকে ৪টি ফ্রিগেট ও তুরস্ক থেকে ৪টি মাঝারি শ্রেণীর অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ। পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকার বরাত দিয়ে ভারতের দি ইকনমিক টাইমস পত্রিকা এ সংবাদ দেয়।
পত্রিকাটি আরও জানায়, পাকিস্তানের অদূর ভবিষ্যত পরিকল্পনার উল্লেখ করতে গিয়ে দেশটির বিদায়ী নৌ বাহিনী প্রধান এডমিরাল জাফর মাহমুদ আব্বাসি গত ৭ অক্টোবর তাঁর দায়িত্বভার হস্তান্তরকালে বিদায়ী বক্তৃতায় এসব কথা জানান। পাকিস্তানের নতুন নৌ বাহিনী প্রধান এডমিরাল মুহাম্মদ আমজাদ খান নিয়াজীর নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, আসছে ২০২৩-২৫ সালের মধ্যেই পাকিস্তান নৌ বাহিনীতে এই আটটি যুদ্ধজাহাজ যুক্ত হবে। এছাড়া সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ৮টি হাঙ্গর শ্রেণীর সাবমেরিনও চুক্তি মোতাবেক চীনে তৈরী হচ্ছে । প্রায় ৫০০ কোটি ডলার ব্যয়ে এসব সাবমেরিণের মধ্যে চারটি চীনে তৈরী হচ্ছে বাকী চারটি পাকিস্তানে তৈরী করা হবে। সামরিক সূত্র মতে, সাবমেরিনগুলো পানির গভীরে দীর্ঘসময় অবস্থান করার উপযোগী স্টার্লিং এআইপি সজ্জিত থাকছে। এই সাবমেরিনগুলি আগামী কয়েক বছরে পাকিস্তানে সরবরাহ করা হবে। পাকিস্তান এসকল সাবমেরিনে ৪৫০কিলোমিটার পাল্লার সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপণযোগ্য সেদেশের পরমাণু অস্ত্রবাহী ‘বাবুর’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করবে। ভারতীয় এনডিটিভি গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত এক সংবাদে জানিয়েছে চীন থেকে পাকিস্তান পরমাণু শক্তির সাবমেরিন পেতে চলেছে। তবে বিষয়টি উভয় দেশ গোপন রেখেছে। বিদায়ী নৌ প্রধান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন,আজকের পাকিস্তান নৌবাহিনী মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য পুরোপুরি সক্ষম এবং সেদেশের বিরুদ্ধে যেকোন ঘৃণ্য নকশাকে ব্যর্থ করে দেয়ার সামর্থ দেশটির রয়েছে। ###১৩.১১.২০