--- বিজ্ঞাপন ---

ইস্তাম্বুল বিশ্বজুড়ে “বিড়ালের শহর” নামে পরিচিত

বিখ্যাত বিড়াল ‘গ্লি’ ও প্রাণীর প্রতি তুর্কী ভালবাসা

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ##

ইস্তাম্বুল বিশ্বজুড়ে “বিড়ালের শহর” নামে পরিচিত। শহরের প্রতিটি আনাচে কানাচে হাজার হাজার বিড়াল হামাগুড়ি দেয়।হাগিয়া সোফিয়া মসজিদের সেই বিখ্যাত সবার আদুরে বিড়াল ‘গ্লি’। বিড়ালটির মৃত্যুতে ইস্তাম্বুল জুড়ে মানুষের ঢল ও শোকের ছায়া দেখে বুঝা গিয়েছিল তুরস্কের মানুষ বিড়ালকে কতটাই না ভালবাসে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামারও আদুরে বিড়াল ছিল হাগিয়া সোফিয়া মসজিদের বাসিন্দা ‘গ্লি’। ২০০৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন তুরস্ক সফরে যান হাগিয়া সোফিয়া মসজিদে তার গায়ে হাত বুলিয়ে ছবিতে পোজ দেন। বিশ্বের প্রায় বড় বড় সংবাদ মাধ্যম ওবামার সেই ছবিটি প্রকাশ করে। এরপর থেকেই এই ‘গ্লি’ বিড়ালটি বিশ্ব পরিচিতি পায়। হাগিয়া মসজিদে প্রার্থনা পুনরায় চালু হওয়ার পর তার ভক্ত সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। নামটি তুর্কী ভাষায় দেয়া। ‘গ্লি’র অর্থ ‘ভালবাসার মিলন’ ‘প্রেমের মিলন’। ধূসর রঙ আর সবুজ চোখের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘গ্লি’র  রয়েছে বহু অনুরাগী। গত ৮ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুতে সেখানে হাজার হাজার মানুষ শোক প্রকাশ করেন। ইস্তাম্বুলের লেভেন্ট জেলায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে একটি বেসরকারি ভেটেরিনারি ক্লিনিক এ‘গ্লি’র চিকিত্সা চলছিল। বার্ধক্যজনিত বয়সের কারণেই গ্লি মারা গেছে বলে চিকিতসকরা জানান”। গিলির অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বিড়ালটিকে চূড়ান্ত বিদায় জানানোর খবর পোস্ট করা হয়।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্বের আনাচে কানাচে থেকে হাজার হাজার ভক্ত তাদের প্রিয় এই বিড়ালটির মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেন।তুরস্কের বাইরের দেশে এই বিড়ালের প্রতি ভালবাসার অন্যতম কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা ঐতিহাসিক হাজিয়া সোফিয়া মসজিদ দেখতে এসে এই বিড়ালটিকে দেখতে পান এবং ওর প্রেমে পড়েন সবাই। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে কেঁদেছেন অনেক ভক্ত। কমপক্ষে ১৬ বছর ধরে হাগিয়া সোফিয়ায় বসবাসকারী বিড়াল গ্লি আন্তর্জাতিক সংবাদে পরিচিতি লাভ করে বিশেষত লক্ষ লক্ষ পর্যটক যারা এই ঐতিহাসিক মসজিদটিতে পরিদর্শন করেন তাদের বদৌলতে।

২০০৪ সালে গ্লি’র জন্ম হাগিয়া সোফিয়া মসজিদ প্রাঙ্গনে। সম্প্রতি হাজিয়া সোফিয়া মসজিদে পুনরায় প্রার্থনা করার জন‌্য খুলে দেয়ার পর থেকে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা গ্লি’র ভক্তের সংখ‌্য‌া আগের চাইতে বেড়ে যায়। হাজিয়া সোফিয়ার  সেলেব্রিটি গার্ড  গ্লি গত ১৬ বছর ধরে  সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন।  ইনস্টাগ্রামে তাঁর এক লক্ষেরও বেশি ফলোয়ার রয়েছে।সবুজ বর্ণের চোখের  গ্লি’র পাতি ও কাজাম নামে দুই ভাইবোন ছিল। ভাগ্যক্রমে, গ্লি’র প্রতিই ছিল সবার আকর্ষণ। দুর্ভাগ্যক্রমে, গ্লি’র এক ভাই মারা যায়। এবং অন্যজন ইস্তাম্বুলের রাস্তায় হারিয়ে যায়। অন্যদিকে, গ্লি কয়েক বছরের মধ্যে হাগিয়া সোফিয়ার অন্যতম শীর্ষ আকর্ষণ হয়ে উঠে।

তাঁর মৃত্যুর খবরে ইস্তাম্বুলের মেয়র আলী ইয়ারলিকায়া টুইটারে লিখেন, “আমি গিলিকে হারিয়ে দারুণভাবে মর্মাহত ।” তুর্কি মহানগরীর মেয়র ৮ নভেম্বর (শনিবার) তাঁর মৃত্যুর পর শোকাহতদের উদ্দেশ্যে বলেন, ইস্তাম্বুলের হাগিয়া সোফিয়ার প্রিয় বাসিন্দা ‘বৃদ্ধ বয়সে’ মারা গেছেন। মৃত্যু সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে তুরস্ক ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিশ্বের হাজার হাজার মানুষের প্রিয়’ ‘গ্লি’র বিড়ালটির মৃত্যুতে শোক বার্তা প্রেরণ করে। হাজার হাজার বাসিন্দা এবং পর্যটক যারা বিখ্যাত বিড়ালের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন তারা এই খবরটি শুনে ও টিভির পর্দায় দেখে দুঃখ পান। গোলার তাভাকোলিয়ান লিখেন, “রেস্ট ইন পিস গ্লি। আমি তার সাথে ২০০৯ সালে দেখা হয়েছিল, তখন সে খুব কম বয়সে ছিল”। তিনি সামাজিক মাধ্যমে আরও মন্তব্য করেন “ গ্লির মৃত্যুর খবর শুনে আমার হৃদয় ভেঙে গেছে। আমরা তার শূণ্যতা অনুভব করতে শুরু করেছি “।

তুরস্কে বিড়ালের প্রতি অনুরাগ

লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা তুরস্কের মানুষের বিড়ালের প্রতি ভালবাসার উপর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে গত ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে শিরোনাম দেয়। “Turkey: where pampered cats are top dog”. তুরস্কে এখনও বিড়ালকে জেব্রা ক্রসিং-এ রাস্তা পারাপারে বিড়ালকে পার হওয়ার সুযোগ করে দেন পথচারিরা।

তুরস্কের পর্যটন নগরী হিসেবে পরিচিত ইস্তাম্বুলকে “বিড়ালের শহর” বলা হয়। বিড়াল ইসলামে গৃহপালিত পোষা প্রাণীদের মধ্যে পছন্দের তালিকায়। ইসলাম ধর্মে নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর প্রশংসিত প্রাণীগুলির মধ্যে বিড়াল ছিল অন্যতম।### ১৭.১১.২০

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.