--- বিজ্ঞাপন ---

ফিলিস্তিনের শুজাইয়েহ পাড়ার নীরব কান্না

0

তারিক এস. হাজ্জাজ ##

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও নজিরবিহীনভাবে পশ্চিম তীরের একটি ইহুদী বসতি পরিদর্শন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এই ধরণের এটিই প্রথম কোন সফর। এছাড়া তারা আরেক দখলকৃত গোলান উপত্যকাও সফর করেছেন। নির্বাচনে হেরে যাওয়া ও আগামী জানুয়ারীতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার আগে এই ধরণের সফর ভিন্ন কিছুর আভাস দিচ্ছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, ফিলিস্তিনিদের অধিকার হারানো এবং দূর্দশা যেন পিছু ছাড়ছেই না। তেমনিই এক ফিলিস্তিনি এলাকা হচ্ছে গাজা উপত্যকার শুজাইয়েহ পাড়া। মাস তিনেক আগে এই এলাকা এক মানবিক সংকটে পতিত হয়েছিল।

বাকের মুসা একটি সংকীর্ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার মুদির দোকানের পণ্য বিক্রির জন্য ক্রেতার সন্ধান করছেন এবং তিনি গাজা উপত্যকার শুজাইয়েহ পাড়ার একটি বাড়িতে বসবাস করেন। বায়ান্ন বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি নিজের এবং তার নয় সন্তানের ভরণপোষণের জন্য পাঁচ বছর আগে তার শোয়ার ঘরটি দোকানে পরিণত করেছিলেন। এইদিনগুলোতে তার বেশিরভাগ ক্রেতা হলো তার প্রতিবেশি শিশুরা যারা দোকানে চকলেট কিনতে আসে। সাধারণত যে টাকা বিক্রি হয় তা খাবার খরচ হিসেবে যথেষ্ট। কিন্তু,হঠাৎ বিদ্যুৎ সংকটের কারণে গাজা উপত্যকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু দিন ধরে তার সমস্ত আয় চলে যাচ্ছে পানি কিনতে গিয়ে।

“ আমরা এই মহামারীর (কোভিড-১৯) বিপদ শুনেছি এবং দেখেছি, তবে বাড়িতে বসে মরে যাওয়া যেন আরেকটি হুমকি, আমরা অনাহারে থাকতে পারি, ” মুসা বলেন। সেদিন আমাকে সামান্য পানির জন্য আমার প্রতিবেশীর দরজায় কড়া নাড়তে হয়েছিল।

জেনারেটর চালিত বাড়িগুলি থেকে কয়েক ঝলক আলো বাদে রাতের বেলা শুজাইয়ের পাকা রাস্তা এবং বালির রাস্তা অন্ধকার হয়ে যায়। এটি গাজা শহরের পূর্বদিকে অবস্থিত, প্রায় চার বর্গমাইলে ১০০,০০০ এরও বেশি লোক বাস করে। সাধারণত, দুপুরে মৌলিক চাহিদা পূরণের সন্ধানে কিছু লোকের চলাচল থাকলেও অন্য সময় সেটা সীমিত হয়ে যায়।

মুসা হেঁটে কয়েকবার স্থানীয় মসজিদে গিয়েছেন কারণ যেখানে কল থেকে পানির কলসিগুলো পূর্ণ করতে দেয়া হয়। দশ দিন আগে তিনি দেখতে পান যে, কলগুলো পানিশূন্য এবং জায়গাটা শুকনো ছিলো। প্রথমে তিনি পৌরসভায় ফোন করেছিলেন, যারা তাকে জানিয়েছিলেন তারা অভিযোগ দায়ের করবেন। কিছু দিনের মধ্যে খবর আসে যে, সম্প্রতি ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে গোলাগুলি বিনিময়ের কারণে ইসরাইল জ্বালানি সরবরাহ স্থগিত করার লক্ষ্যে অনড়। আগস্টের ১৯ তারিখ গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর বিদ্যুৎ ছাড়া পানি সেবা বন্ধ হয়ে যায়। আগস্টের ২৬ তারিখ গাজা শহরের পৌরসভা একটি বিবৃতিতে বলেছে, বর্তমান বৈদ্যুতিক সঙ্কটের কারণে নগরীর প্রয়োজনের এক চতুর্থাংশে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, পৌরসভা গাজা শহরের অভ্যন্তরে ও বাইরে ৭৬ টি পানির কূপের মালিক, যার সবকটি বিদ্যুৎ চালিত।

অন্যদিকে, শুজাইয়ের অন্য একটি বাড়িতে, ৪৯ বছর বয়সী মাজেদা আল-জালান তার তিন কিশোর পুত্রকে নিয়ে রান্নাঘরের টেবিলে বসে দিনের শুরুর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি চারজনের খাওয়ার জন্য একটি পাউরুটি ও পনিরকে ভাগ করলেন। পরে নিত্য ব্যবহারের জন্য পানির সংস্থান করলেন এবং জনপ্রতি তিন লিটার করে পানি দিলেন। তিনি গত সপ্তাহে একবারে পরিবারের জন্য লন্ড্রি করেছিলেন।

“এই সময়ে পানি সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু এবং এটি প্রতিটি বাড়িতে থাকা আবশ্যক,কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে আমাদের কাছে এটি থাকে না” -তিনি বলেন। আমার পরিবার আমার বড় ছেলে আহমেদ এর স্বল্প আয়ের উপর নির্ভর করে, যে কিনা প্রধান সড়কে অল্প পরিমাণ সুগন্ধি বিক্রি করে। কিন্ত, সোমবারের পর আমাদের কেউ ঘরের বাহিরে যায়নি, মাজেদা আল-জালান বলতে থাকেন। বর্তমানে তার একমাত্র আয়ের উৎস বৃটিশ দাতব্য সংস্থা অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল থেকে প্রাপ্ত মাসে মাত্র ৩৫ ডলার।

“আমার কেবল আমার পরিবারই আছে এবং তাদের কাউকেই হারাতে চাই না, আমি বিশ্বাস করি যে আমরা বিশ্বের যে কোনও জায়গার সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে পৌঁছেছি এবং সামনের দিনগুলোতেও, আমি বিশ্বাস করি এটি আরও খারাপ হয়ে উঠবে”- তিনি বলেন।

সূত্রঃ মনডোউয়িস , প্রোগ্রেসিভ ইন্টারন্যাশনাল।

তারিক এস. হাজ্জাজ একজন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ও লেখক

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.