--- বিজ্ঞাপন ---

ধরপাকড় হয়রানি আতঙ্কে ফ্রান্সের মুসলমানরা

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ##

ফ্রান্সে ইসলাম ধর্মের নানা বিধান নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম’ এটাই ফ্রান্সের মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। কিন্ত তর্কের খাতিরে ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কোন আইনি বিষয়ে যেতে চাননা ফ্রান্সের বেশিরভাগ মুসলমান। ফ্রান্স প্রশাসন বলছে, ইসলাম ধর্ম নিয়ে তাদের কোন কথা নেই। কিন্ত ইসলাম ধর্মকে নিয়ে রাজনৈতিক কোন বিষয় তারা মানবে না। তাই ফ্রান্স সরকার একটি সনদ তৈরি করেছে। এ সনদটি যাতে মুসলমান নেতারা মেনে নেয় তার জন্য ফ্রান্স সরকার রীতিমতো  ভেতরে ভেতরে মুসলমান নেতাদের চাপে রেখেছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফ্রান্স প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধের সনদ মেনে নেয়ার জন্য দেশটির মুসলিম নেতাদের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ফরাসি প্রেসিডেন্ট বুধবার ফ্রান্সের মুসলিম নেতাদের শীর্ষ সংগঠন ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল অব দ্য মুসলিম ফেইথকে (সিএফসিএম) ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন এই সনদ মেনে নেয়ার জন্য। সিএফসিএম ইমামদের নিয়োগ এবং কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইমাম’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে। এটি ইমামদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার এবং তাদের অনুমতিপত্র বাতিল করতে পারবে। এক মাসের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে তিনটি হামলার ঘটনার পর এই সিদ্ধান্তের কথা জানাল ফ্রান্স।

ওই সনদটিতে এমন কথা থাকছে যে, ইসলাম একটি ধর্ম এবং কোনো রাজনৈতিক ধারা নয়। মুসলিম গোষ্ঠীগুলোতে বিদেশী হস্তক্ষেপও নিষিদ্ধ করা হয়েছে সনদে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে লা প্যারিসিয়েঁ পত্রিকা একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানায় যে, ‘[সনদে] দু’টি মূলনীতি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা থাকবে : রাজনৈতিক ইসলাম প্রত্যাখ্যান এবং যেকোনো ধরনের বিদেশী হস্তক্ষেপ।’ ওই বৈঠকে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইমাম প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়।

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ যাকে ‘ইসলামী বিচ্ছিন্নতাবাদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, সেই বিষয়টি প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে নতুন পদক্ষেপ নেয়ার কথাও ঘোষণা করেন তিনি। এসব পদক্ষেপের মধ্যে থাকছে একটি আইন প্রণয়ন, যার লক্ষ্য হবে মৌলবাদকে প্রতিহত করা।

বুধবারে প্রকাশ করা এই নতুন কৌশলের মধ্যে রয়েছে- হোম-স্কুলিং বা ঘরে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ধর্মীয় কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি দেয়া বা ভয় দেখানো হলে আরো কঠিন শাস্তির বিধান। নতুন আইনের অধীনে শিশুদের একটি পরিচিতি বা আইডেন্টিফিকেশন নম্বর প্রদান করা, যার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে যে তারা স্কুলে যাচ্ছে কি না। যেসব অভিভাবক এই আইন অমান্য করবে, তাদের বড় অঙ্কের জরিমানাসহ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের শাস্তি দেয়া হতে পারে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দারমানিন লা ফিগারো পত্রিকাকে বুধবার বলেন, ‘আমাদের শিশুদের ইসলামিস্টদের থাবা থেকে বাঁচাতে হবে।’প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি নিয়ে ৯ ডিসেম্বর ফরাসী মন্ত্রিসভায় আলোচনা হবে। এ বছরের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ইসলামকে ‘সঙ্কটাপন্ন’ ধর্ম হিসেবে বর্ণনা করেন এবং ম্যাগাজিনগুলোর মহানবী সা:কে নিয়ে কার্টুন প্রকাশের অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। ইসলাম ধর্মে মহানবীর ছবি চিত্রায়ন নিষিদ্ধ হিসেবে গণ্য করা হয়।

ওই মন্তব্যগুলো করার পর থেকেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট মুসলিম প্রধান অনেক দেশে ঘৃণার পাত্রে পরিণত হন। অনেক জায়গাতেই বিক্ষোভকারীরা ফরাসি পণ্য বয়কট করার ডাক দেন। ফ্রান্সে জাতীয় পরিচয়ের কেন্দ্রে রয়েছে রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি। স্কুল-সহ অন্যান্য জনসমাগমস্থলে বাকস্বাধীনতার বিষয়টি এরই একটি অংশ। একে ক্ষুণ্ণ করে কোনো একটি ধর্মীয় অনুভূতিকে সুরক্ষার চেষ্টা করাকে ফ্রান্সের জাতীয় ঐক্যের পরিপন্থী হিসেবে মনে করা হয়। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় মুসলমান বাস করে ফ্রান্সে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্র জানায়, ফরাসি সরকার মুসলিম সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযান চালাচ্ছে। ফ্রান্সের  মুসলমান সমাজের ভেতরে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। ধরপাকড় হয়রানির আতঙ্কে রয়েছে অনেকে। একদিকে পুলিশ প্রশাসন অন্যদিকে প্রতিক্রিয়াশীলরা সক্রিয়। ফ্রান্সের একাধিক মসজিদে প্রতিক্রিয়াশীলরা হামলা চালিয়েছে। সহিংসতার হুমকি পাওয়ার পর বেজিয়ার্স ও বোর্দয়াদের মুসলিম প্রার্থনাস্থলে (অনানুষ্ঠানিক মসজিদ) পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে।

গত ২ অক্টোবর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ‘ইসলামিস্ট সেপারাটিজম’ কর্মসূচি গ্রহণের পর থেকেই ফ্রান্সের মুসলিমরা উদ্বিগ্ন। তখন সারা বিশ্বে ইসলাম ‘সংকটাপন্ন’ মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ম্যাখোঁ। শিক্ষক হত্যার পর ফরাসি মুসলিমদের সে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের ভয় ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের নাম যুক্ত করে ফরাসি সরকার এরই মধ্যে যে নীতি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে স্যামুয়েল ট্র্যাজেডি তাতে নতুন অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। ফ্রান্সের মুসলিম সমাজকর্মী ইয়াসির লুয়াতি আলজাজিরাকে বলেছেন,, ‘আমি মনে করি, ফ্রান্সের মুসলিমরা রাজনীতিকদের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। তারা ইসলামভীতিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চায়।’ ফরাসি সরকার বলে, তারা সন্দেহভাজন চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করছে একাধিক অভিযান ও দুই শতাধিক মানুষের গণবহিষ্কারের মাধ্যমে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.