--- বিজ্ঞাপন ---

ভারতের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ধরনের হামলা মোকাবেলায় পাকিস্তানে সর্বোচ্চ সতর্কতা ?

0

মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম

পাকিস্তান বলছে, ভারত সেদেশের আভ্যন্তরীন কৃষকদের তীব্র অসন্তোষের মুখে দৃষ্টি অন্যত্র ফেরাতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে “সার্জিক্যাল স্ট্রাইক” ধরনের হামলার চালাতে পারে। গোয়েন্দা ও বিশ্বাসযোগ্য সূত্র মারফত এ খবর নিশ্চিত হওয়ার পর পাকিস্তান সেদেশের সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে। সীমান্তে ভারতীয় গোলাবর্ষনে বুধবার সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দুই পাকিস্তানী সেনা নিহত হওয়ার খবরও জানিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের পত্র-পত্রিকায় সীমান্তে ভারতীয় গোয়েন্দা বিমানের আনাগোণার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। অপরদিকে পাকিস্তান-চীন ভারত সীমান্তের নিকট যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সাথে লাদাখ সহ পুরো সীমান্ত জুড়ে ভারতের সাথে চলছে  উত্তেজনা। ঠিক এমন এক সময়ে চীনের ‘অকৃত্রিম বন্ধু’পাকিস্তানের সাথে সামরিক মহড়া বেশ তাৎপর্যবহ। পাকিস্তানের  ইংরেজী দৈনিক দি নিউজ অনলাইন, জিও টিভিসহ প্রায় সকল অনলাইন মিডিয়ায় বুধবার ( ৯ ডিসেম্বর ) এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় বৃহস্পতিবার ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ধরনের হামলা ও ভারতের সীমান্তের নিকটে চীনের সাথে মহড়ার সংবাদ বেশ গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছে।

এটা লক্ষ্যনীয় যে, ভারতের মিডিয়ায় পাকিস্তানে ‘সার্জিক্যাল  হামলা ’ চালানোর কোন হুমকি কিংবা এজাতীয় খবরেরই উল্লেখ নেই। তবে সেদেশের পত্র-পত্রিকা ভারতের সেনা প্রধান জেনারেল এম এম নারাভানের চলমান সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছয়দিনের সফরকে গুরুত্বের সাথে দেখছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার জন্যেই ভারত ইসরাইল-মার্কিন জোট সমর্থক দেশগুলি যেমন সৌদি আরব, আরব আমিরাত সফরে গেছেন ভারতীয় সেনা প্রধান। মাত্র কয়েকদিন আগেও পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যমসমূহে এ ভারতমর্মে খবর বেরোয় যে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য কতিপয় আরব দেশের চাপের মুখে রয়েছেন।  এরই মধ্যে অনেকটা নাটকীয়ভাবে সৌদি আরব পাকিস্তানকে ধার দেয়া ৩ বিলিয়ন ডলারের পরিশোধ করার জন্য তাগিদ দেয়। পাকিস্তান  ১ বিলিয়ন  মার্কিন ডলার পরিশোধ করে বাকী ২ বিলিয়নও পরিশোধ করতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে । এরই মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রদান বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের এ ধনাঢ্য দেশ দুটিতে পাকিস্তানের প্রায় ৫০ লক্ষ প্রবাসী কর্মরত রয়েছেন। তাদের ফেরত পাঠানোর হুমকিরও আভাস মিলছে।

বিশ্ব মুসলিম দেশগুলির  ৫৭টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন  ওআইসি ( অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন ) কাশ্মীরসহ নানা ইস্যুতে তুরস্কের সমর্থন নেওয়ায় সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বরাবরই পাকিস্তানের ইমরান খানের উপর ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ইমরান খান তুরস্কের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত। ইসলাম ধর্ম ও নবী রাসূল (সা:) কে নিয়ে কটুক্তি করায় ফ্রান্সের  পত্রিকা চার্লি হাবদো এবং প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল  ম্যাক্রোর নিন্দায় তুরস্ককে সমর্থন দেন ইমরান খান। ফ্রান্স তলে তলে পাকিস্তানের উপর ক্ষীপ্ত। পাকিস্তানের সাথে অস্ত্র চুক্তি বাতিল করে ভারতকে রাফাল জঙ্গী বিমান সরবরাহ করায় কয়েক বছর আগে থেকেই পাকিস্তানের সাথে ফ্রান্সের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছিলনা। ফ্রান্সের সাথে আধুনিক অস্ত্রের  বেশ লেনদেন রয়েছে আরব আমিরাত ও মিশরের  এবং ফ্রান্স প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজিব তাইয়েপ এরদোয়ানের সম্পর্ক এখন চরমে দুদেশ একে অপরের বিরুদ্ধে তীব্র বাকযুদ্ধে লিপ্ত। পাকিস্তানের উপর ফ্রান্স ও ম্যাক্রো সমর্থকরা তুর্কি সমর্থক হওয়ার কারণে আরও অসন্তুষ্ট।

এদিকে পাকিস্তানে ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য করোনার মধ্যেও বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন হঠাৎ তীব্র হয়ে উঠার পেছনে বাইরের হাত রয়েছে বলে বলতে শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান স্বয়ং। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের দৈনিক পত্রিকাসমূহে ইমরান খানের ‘বাইরের হাত’ থাকার ইঙ্গিত সম্পর্কিত সংবাদটিও প্রকাশিত হয়। সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের কন্যা বিরোধীদলের নেত্রী মরিয়ম নেওয়াজ ও সেদেশের জামাত নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান, দুর্নীতি মামলায় জেলে থাকা সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নিহত বেনজীর ভুট্টোর পুত্র বেলওয়ালের সমন্বয়ে গঠিত বিরোধীদের জোটের বিরুদ্ধে তিনি এ অভিযোগ আনেন। সরকারের মন্ত্রী ড. শিরিন মাজারিও তার সরকারকে সরাতে বাইরের ষড়যন্ত্রের হাত থাকার প্রমাণ সরকারের নিকট রয়েছে বলে জানান।

পাকিস্তানর জিও নিউজের খবরে বুধবার ( ৯ ডিসেম্বর ) জানানো হয় যে , ভারতীয় আকস্মিক হামলা কিংবা যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। পত্রিকাটি জানায়, ২০১৬ সালে ভারত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর একটি ব্যর্থ সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছিল দাবি করে। একইভাবে, ২০১৯  সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি দেশটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযান চালানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হয়েছিল।

পাকিস্তানের ইংরেজী দি এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকা সেদেশের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগের  বার্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, বুধবার পাকিস্তানের সেনা প্রধান চীফ অফ আর্মি স্টাফ (সিওএএস) জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া সিন্ধ প্রদেশ সফরকালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি অপারেশনাল বিমান ঘাঁটিতে চলমান পাক-চীন আন্তর্জাতিক বিমান অনুশীলন শাহীন-২০ প্রত্যক্ষ করেছেন। সামরিক বাহিনীর মিডিয়া শাখা জানিয়েছে, তার আগমনে সেনা প্রধানকে পাকিস্তান বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মুজাহিদ আনোয়ার খান স্বাগত জানান। সেনাবাহিনীর সাথে কথা বলার সময় জেনারেল বাজওয়া অনুশীলনের অংশগ্রহণকারীদের পেশাদারিত্বের প্রশংসা করেন এবং পিএএফ এবং চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স (পিএলএএফ) এর আন্তর্জাতিক বিমান মহড়াকে যথাযথ উপায়ে পরিচালনার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তিনি পাকিস্তান-চীন মধ্যে অনুকরণীয় সম্পর্ককেও তুলে ধরে বলেছেন যে, মহড়া দু’দেশের  সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বন্ধুত্ব, মতবিনিময় ও সহযোগিতা আরও জোরদার ও প্রসারিত করবে। চীন তার যুদ্ধবিমান, বোমারু বিমান এবং আগাম সতর্কতা এডাব্লিউএসএস বিমানগুলি অনুশীলনে পাঠিয়েছে  যা ২৩ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এ সামরিক মহড়া এমন সময় হচ্ছে যখন চীনের সাথে ভারতের সম্পর্ক বর্তমানে অত‌্যন্ত নাজুক।

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.