--- বিজ্ঞাপন ---

দৃশ্যমান হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু

ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার ২০০ কোটি টাকা

0

বিশেষ প্রতিনিধি

এত বড় পদ্মা নদীর উপর একটি সেতু হবে কেউ কল্পনা করেনি। বাংলাদেশের কোন প্রকল্পে নিজের ৩০ হাজার কোটি টাকা যোগান দেয়া কি সম্ভব? এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক কম হয় নি। কিন্ত শেষপর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব ব্যাংককে আঙ্গুল দেখিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেন। দৃশ্যমান হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু। দু’পাড়ের মানুষের সাথে বাংলাদেশের মানুষ উৎসব আনন্দ করতেই পারে। আমরা পারি, বাংলাদেশ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। যে বিশ্ব ব্যাংক দূর্নীতির অভিযোগ তুলে টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল সে বিশ্বব্যাংক এখন বাংলাদেশের অগ্রগতির সুনাম করছে। অথচ এক সময় বাংলাদেশকে ছোট করে দেখতে বিশ্বব্যাংকের এতটুকু বাধে নি।

বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল সেতু নির্মাণের পেছনের কারিগর চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে , ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার । ১৮ মে জাপান ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ প্রদানের চুক্তি করে।  ২৪ মে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে ১৪ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি হয়। ৬ জুন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে ৬১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়। সেতুর উভয় প্রান্তে জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়। ভূমি উন্নয়নের কিছু কাজও হয়েছিল। কিন্তু ঋন ছাড় দেয়ার আগে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে ঋনের কিস্তি প্রদানে বহু শর্ত সংযোজন করে বিশ্ব ব্যাংক। শেষঅবধি বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং বিশ্বব্যাংকের নিতে অস্বীকার করে । এরপর থেকে শেখ হাসিনা সরকার অসম্ভব কাজটি সম্ভব করার কাজে লেগে যান। প্রথমদিকে অনেকে হাসাহাসি করলেও এখন তাদের মূখে চুনকালি পড়েছে। বিশ্বব্যাংক যখন কল্পিত দূর্নীতির অভিযোগ তোলে তখন দেশের কথিত বুদ্ধিজীবীরা না জেনে না বুঝে সরকারকে তুলোধুনা করতে ছাড়ে নি। পরে অবশ্য প্রমানিত হলো এখানে কোন দূর্নীতি হয়নি। কানাডার আদালত এ ব্যাপারে তাদের স্পষ্ট মতামত দেয়। পরে টাকা দিতে বিশ্বব্যাংক রাজি হলেও বাংলাদেশ আর তাদের দিকে ফিরে চাই নি।

প্রায় ৬ হাজার ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুতে বিজয়ের মাসে শেষ স্প্যানটি বসানো হলো। ২০২০ সাল তাই স্মরনীয়।  স্বপ্ন পূরণের খুব কাছাকাছি নদীর প্রবহমান জলরাশির ওপর পুরো পদ্মা সেতু। বৃহস্পতিবার ৪১তম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে শেষ হলো পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানোর কাজ। ঠিক দুপুর ১২টায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের ১২-১৩ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়েছে ‘টু-এফ’ স্প্যানটিকে। দূর থেকেই দেখা যায় সেতুর মাঝের শূন্যস্থানটুকু এখন পূর্ণতা পেয়েছে। এ বিশাল কর্মযজ্ঞে দেশি-বিদেশি ২০ হাজার প্রকৌশলী, শ্রমিকদের মেধা ও অক্লান্ত পরিশ্রম জড়িত।

কাজ শুরুর দিকে নানা অনিশ্চিয়তা থাকা সত্ত্বেও সেতুর কাজ এগিয়ে যাওয়ায় জেলাবাসীসহ দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, শ্রমিকদের মধ্যে বইছে উৎসবমুখর একটি পরিবেশ। পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণের ৫ বছর পূর্ণ হবে দুদিন পর। আর আজ খুঁটির ওপর বসল সেতুটির সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান। ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ স্প্যানটি স্থাপিত হওয়ার মধ্য দিয়ে মিলিত হলো প্রমত্ত পদ্মার দুই তীর। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৯ জেলার সঙ্গে সারা দেশের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হওয়ার পথও উন্মুক্ত হওয়ার পথে। এর মধ্য দিয়ে সেতুর মূল অবকাঠামো শতভাগ দৃশ্যমান হলো। অন্যদিন ৫ ঘণ্টা সময় লাগলেও আজ শেষ স্প্যানটি বসাতে সময় লাগে মাত্র আড়াই ঘণ্টা। শেষ স্প্যানের দু’পাশে রয়েছে বাংলাদেশ ও চীনের পতাকা। সঙ্গে দুদেশের সম্পর্ক অটুট রাখার বার্তাও।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.