--- বিজ্ঞাপন ---

যেভাবে অবরোধ মোকাবেলা করবে তুরস্ক

0

:: আন্তর্জাতিক ডেস্ক::

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন তুরস্কের বিরুদ্ধে সীমিত আকারের কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে । যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের টার্গেট তুরস্কের দ্রুত বর্ধমান প্রতিরক্ষা শিল্প। দেশটি চাইছে তুরস্ক যেন তার অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমরাস্ত্রগুলো কারো কাছে বিক্রি করতে না পারে।
প্রথমত তুরস্ক নিন্দা জানিয়েছে , অবৈধ ও অনায্য অবরোধ আরোপের। ইতিমধ্যে তুরস্কের সংসদে সরকার ও বিরোধীদল যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে কড়া নিন্দা জানিয়েছে অবরোধের। বিদেশী চাপ মোকাবেলার তুর্কিদের এই জাতীয় ঐক্য বিরল নয়। তুরস্কের সাথে সহমর্মিতা জানিয়েছে রাশিয়া, কাতার, পাকিস্তান, ইরানসহ বন্ধু প্রতীক আরো কিছু দেশ।
তুরস্ক জানিয়েছে, তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিক্রিয়া হলো সামরিক গবেষণা ও উৎপাদন অব্যাহত রাখা। ২০০২ সালে এরদোয়ান যখন ক্ষমতা হাতে নেয়, তখন মাত্র ২০ ভাগ সমরাস্ত্র তুরস্ক নিজেরা উৎপাদন করতো। আর ৮০ ভাগ আমদানি করতো কথিত পশ্চিমা মিত্রদের থেকে। এরদোয়ান সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা শিল্পে ৩৬০ ডিগ্রি বিপরীত চিত্র তৈরী করেছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত তুরস্ক ৮০ ভাগ সমরাস্ত্র নিজেরা উৎপাদন করছে। আমদানি করছে মাত্র ২০ ভাগ । ২০২৩ সালের মধ্যে ১০০ ভাগ সমরাস্ত্র নিজেরা উৎপাদনের লক্ষে দ্রুত গতিতে কাজ করে চলছে তুর্কি বিজ্ঞানীরা।
ইতিমধ্যে নিজস্ব হেলিকপ্টার, ড্রোণ, ট্যাংক, মিসাইল, সাবমেরিন, কভার্টি, রাইফেল, কমিউনিকেশন সিস্টেম, গোয়েন্দা স্যাটেলাইটসহ অত্যন্ত স্পর্শকাতর ইলেকট্রনিক্স সিস্টেম ও সফটওয়ার তৈরীতে সাফল্য অর্জন করেছে তুরস্কে। সফল পরীক্ষা চালিয়েছে নিজস্ব হেলিকপ্টার ইঞ্জিনের। পাইপলাইনে আছে নিজস্ব জেট ইঞ্জিন।
স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তুরস্কের ৩ টি কোম্পানি বিশ্বের সেরা ১০০ অস্ত্র রপ্তানির তালিকায় ওঠে এসেছে। প্রতিযোগীতায় রয়েছে আরো ডজন খানেক কোম্পানি। নিজস্ব অস্ত্রে পরাশক্তি হবার চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেছে তুরস্ক। তুরস্কে থেকে সমরাস্ত্র ক্রয় করার আগ্রহ দেখিয়েছে সার্বিয়া, পোলেন্ড, ইউক্রেনসহ ১২ টি দেশ।
৬০ বিলিয়ন ডলারের এই রপ্তানিমুখী প্রতিরক্ষা শিল্প কয়েক বছরের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। এমন সময় যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ প্রতিহিংসার বহি:প্রকাশ।
একটি উদাহরন দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এক ইউনিট ড্রোন নির্মানের খরচ যেখানে ২০ মিলিয়ন ডলার, তুরস্কের বাইরাকতার কোম্পানি মাত্র ৫ মিলিয়ন ডলারে উৎপাদন করছে তারচেয়ে ভালো ড্রোন যা আরো প্রিসাইজ এটাকে সক্ষম। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন ব্যবসায়ের সত্যিকারের থ্রেট হয়ে ওঠছে তুরস্ক। তাই অবৈধ অবরোধ দিয়ে তুরস্ককে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
অবোরোধ মোকাবেলার সব পথ নিয়ে ভাবছে তুরস্ক। অবরোধের পর দিন পাকিস্তান, তুরস্ক ও ইরানের আঞ্চনিক সংস্থা ইকোর পরিবহন মন্ত্রীদের এক বৈঠকে ২০২১ সালের মধ্যেই নিজেদের মধ্যে আন্তরেল কার্গো চালু করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তাহলে আন্তর্জাতিক সিস্টেমকে পাশ কাটিয়ে স্থল পথে নিজেদের পন্য পরিবহনের চিন্তা করছে দেশগুলো।
অন্যদিকে ইস্তান্বুল থেকে মধ্য এশিয়া হয়ে বেইজিংয়ের পথে ২০ দিনের সফরে রওয়া হয়েছে তুরস্কের আরেকটি কার্গো ট্রেন। চালু হচ্ছে মুসলিম স্বর্ণযুগের পুরোনো সিল্ক রুট।
এরদোয়ান জানিয়েছে কোন চাপ দিয়ে তুরস্ককে নিজস্ব প্রতিরক্ষা উৎপাদন থেকে হটানো যাবে না। উৎপাদন অব্যাহত রাখাই আমাদের প্রতিবাদ। তুরস্ক জানিয়েছে, অবরোধ ওঠিয়ে না নিলে, বন্ধ করে দেয়া হবে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানঘাটি, তুরস্কের এয়ারস্পেস।
পারবে কি তুরস্ক অবরোধ মোকাবেলা করে সাবলম্বী হতে ?

##লেখক,জাহিদুল ইসলাম, পি এইচডি স্কলার, খোজায়েলী ইউনিভার্সিটি, তুরস্ক।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.