--- বিজ্ঞাপন ---

করোনা আতঙ্কে বৃটেন, ভরসা অক্সফোর্ডের টিকা

0

::আন্তর্জাতিক ডেস্ক::

ইংল্যান্ডে দ্রুত গতিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমন বাড়তে থাকায় রোগী সংখ্যা মোকাবেলা করতে গিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। গত সোমবারও ব্রিটেনে ৪১,৩৮৫ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন আরো ৩৫৭ জন। এনএইচএস ইংল্যান্ড জানিয়েছে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ২০,৪২৬ জন করোনা রোগী। এর আগে করোনার প্রথম ধাপে গত এপ্রিলে ছিলো প্রায় ১৯,০০০ জন।

ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন। সেখানেও বাড়ছে করোনা রোগী সংখ্যা। এদিকে সোমবার যুক্তরাজ্যে মহামারি শুরুর পর প্রথমবারের মত ৪১ হাজারের উপরে একদিনে মানুষ আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে এত বেশি আক্রান্ত হলেও কিছুটা স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন সরকারের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রথম ধাপের সময় এত বেশি পরিক্ষা কেন্দ্র ছিলো না। থাকলে তখনও এত সংখ্যক লোকের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যেত। পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের কর্মকর্তা ডা: যোভান ডয়েল বিবিসিকে বলেছেন, হাসপাতালে নতুন রোগীর সংখ্যা বাড়ায় উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। তবে ফাইজার/বায়েএনটেক এর ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালু থাকায় কিছুটা আশান্তিত তারা।

এদিকে লন্ডন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসে সর্বোচ্চ কল: ৬ ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে রোগীদের

করোনার প্রথম ধাপের মত আবারো লন্ডন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সর্বোচ্চ কল রিসিভ করেছে। গত ২৬ ডিসেম্বর প্রায় ৮০০০ কল রিসিভ করে সংস্থাটি। যা যেকোন ব্যস্থ সময়ের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি। করোনার প্রথম ধাপের মতই এখন রোগীদের চাহিদা বেশি থাকায় কল পাচ্ছে লন্ডন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, এমনটাই বিবিসিকে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় রোগীদের ৬ ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এলএএস জানিয়েছে বিলম্ব কমাতে তারা কাজ করে যাচ্ছে। তবে তারা অনুরোধ জানিয়েছে, যাদের জীবনের হুমকি রয়েছে এমন প্রয়োজনে যেন ৯৯৯ এ ডায়াল করা হয়। একই সাথে সম্ভব হলে ১১১ ব্যবহার করতেও জনগনকে অনুরোধ করা হয়েছে। নতুন করোনারভাইরাসের সংক্রমন বৃদ্ধি পাওয়ায় এই কল বেড়েছে বলে মনে করে লন্ডন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস।

স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় ইংল্যান্ডের অধিকাংশ প্রাইমারী ও সেকেন্ডারী স্কুল আরো দুই সপ্তাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিশেষ করে টায়ার ৪ এর অন্তভুক্ত এলাকা সমূহের স্কুলগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন এডুকেশন সেক্রেটারী গিভেন উইলিয়ামস।

বর্তমানে ৪ তারিখ পর্যন্ত ক্রিসমাস হলিডে রয়েছে ইংল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা। টায়ার ৪ ভুক্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের এই ছুটি ১৮ জানুয়ারী পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর এই ছুটি পূর্ণমূল্যায়ন করা হবে। তবে হাউজ অব কমন্সে এডুকেশন সেক্রেটারী জানিয়েছেন সেকেন্ডারী স্কুলে যাদের পরিক্ষা রয়েছে (জিসিএসই ও এ লেভেল) তাদেরকে ১১ জানুয়ারী ক্লাসে ফিরতে হবে। এর ভেতরে স্কুল গুলো করোনা টেস্টের জন্য আরো প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

যেসকল শহরের স্কুলগুলো বন্ধ থাকবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, লন্ডন, এসেক্সের অধিকাংশ এলাকা, কেন্ট, হেচটিং এন্ড রথার, ইস্ট সাসেক্স, মিল্টন কিংন্স এবং হেয়ারফোর্ডশায়ারের কিছু এলাকা। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ইংল্যান্ডের ৪৯টি অঞ্চলের কয়েক মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে আরো দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ঘরে থাকতে হবে। এই সিদ্ধান্ত স্বাগত জানিয়েছে টিচার্স ইউনিয়নের নেতারা। অন্যদিকে ইউনিভার্সিটি ছাত্র-ছাত্রীদের ঘর থেকেই ক্লাসে অংশ নিতে বলা হয়েছে। যাদের প্রেকটিক্যাল ক্লাস আছে তাদেরকে ক্লাসে যেতে বলা হয়েছে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কাজ শুরু

এদিকে অক্সফোর্ড কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদান করতে বৃটেনে এনএইচএস কর্তৃক দশ হাজার মেডিক ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। সরকার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সবুজ সংকেতের জন্য অপেক্ষা করছে, যাতে টিকাদান কার্যক্রমকে আগামী সোমবার থেকে বাস্তবায়ন করা যায়। আর এজন্য ইতিমধ্যে ভ্যাকসিনের ১০০ মিলিয়ন ডোজ কিনে নেয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে।

অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকা জাবের জন্য গণটিকা কেন্দ্র হিসেবে ক্রীড়া স্টাডিয়াম এবং সম্মেলন ভেন্যুগুলি ব্যবহারের মাধ্যমে ৪ জানুয়ারি থেকে ভ্যাকসিনটি রোলআউট তথা টিকাদান কার্যক্রম চালু করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। এছাড়াও শত শত পপ-আপ জিপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রগুলির মাধ্যমেও বিশাল টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে। যাতে করে নতুন বছরে দ্রুততম সময়ে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

নতুন ভ্যাকসিনটি অগ্রাধিকার ভিত্তিক তালিকার মাধ্যমে প্রদান করা হবে বলে মনে হচ্ছে। তবে শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সংযুক্ত করা হতে পারে। বর্তমানে কেবল মাত্র বয়স্ক, ক্লিনিকেলি দুর্বল এবং স্বাস্থ্য ও সেবা কর্মীদের টিকাদান করা হচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন রূপটির ধরা পড়ছে। কোভিডের এই স্ট্রেইন ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক হওয়ায় এর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। করোনা ভাইরাসের ভর্তি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এনএইচএস কর্মীরা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন। প্রতি ১০ জনের একজন অসুস্থ একজন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

কোভিডের নতুন স্ট্রাইনের মুখে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি উন্মুক্ত রাখতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমস্ত দেশকে তাৎক্ষণিকভাবে টিয়ার-৪ স্তরের লকডাউনে যেতে হবে।

তবে ভ্যাকসিনটি দিয়ে টানেলের শেষ প্রান্তে আলো দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বৃটেনের চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক। তিনি বলেছেন, নতুন ভ্যাকসিন কোভিড দুর্দশা থেকে মুক্ত হবার একটি রাস্তা দেবে তা নিশ্চিত করার জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ব্যয় করা হচ্ছে। আমি আত্মবিশ্বাসী, যদি আমরা সবাই মিলে এগিয়ে যাই তবে এই বছরের মধ্যে আমরা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা করতে পারি।

বাংলাদেশের সাথে  বিমান চলাচল বন্ধের সুপারিশ

যুক্তরাজ্যে করোনার নতুন ধরন দ্রুত ছড়ানোয় দেশটির সঙ্গে বিমান যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ করতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছে কমিটি।

বুধবার সংসদ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, কমিটির সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, মো. আবদুল আজিজ, সৈয়দা জাকিয়া নুর, রাহগির আল মাহি এরশাদ (শাদ এরশাদ) এবং মো. আমিরুল আলম মিলন অংশ নেন।

বৈঠক শেষে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, যুক্তরাজ্যে করোনার যে নতুন ধরন পাওয়া গেছে, তা বাংলাদেশে আছে কিনা এখনও নিশ্চিত নয়। কিন্তু ফ্লাইট যেহেতু চলছে, আসার আশঙ্কাও থেকে যায়। এ কারণে আমরা বিমান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধ করতে বলেছি। সূত্র: ওয়ানবাংলা নিউজ, লন্ডন

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.