--- বিজ্ঞাপন ---

আমেরিকার ক্যাপিটল ভবনে হামলা ছিল ‘টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’

0

আমেরিকার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ট্রাম্প সমর্থকদের ক্যাপিটল ভবনে হামলা ছিল পুরো বিশ্বে ‘টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’।এ ঘটনায় লজ্জিত পুরো আমেরিকার মানুষ। শেষখবর পর্যন্ত মারা গেল এক পুলিশও। ক্যাপিটল ভবন দখলের ঘটনায় মারা গেলো ৫ জন। যারা সারা পৃথিবীকে গণতন্ত্র শেখায় তাদের কাছে এ ধরনের আচরন বিশ্বের মানুষের পক্ষে মেনে নেয়া ছিল কঠিন। গোটা বিশ্বের মিডিয়ায় এটাই ছিল লীড নিউজ। ট্রাম্প এমনিতে নানা কারনে নিন্দিত, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার কার্যক্রমে অনেক পাশে থাকলেও এ ঘটনার পর অনেকেই তাকে ছেড়ে গেছে। শেষপর্যন্ত চাপের মুখে পড়েছে ট্রাম্প।  বিশ্বব্যাপী নেতাদের কড়া সমালোচনায় সুশৃঙ্খলভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপাত বিপদ সামলে নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে ১২ ঘণ্টা পর অ্যাকাউন্ট ব্লক খুললে ট্রাম্প নতুন এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, এখন কংগ্রেস ঐ ফলাফল অনুমোদন করেছে। ২০শে জানুয়ারি একটা নতুন প্রশাসনের উদ্বোধন হবে। তিনি আরো বলেছেন, এখন আমার লক্ষ্য হবে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও নির্বিঘ্নভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।এই মুহূর্তে দরকার হল নিরাময় ও মিটমাট করে ফেলা।একই সঙ্গে তিনি তার ‘দুর্দান্ত সমর্থকদেরও’ প্রশংসা করে বলেছেন, ‘আমাদের অসাধারণ যাত্রা মাত্র শুরু হল।

কি এই ক্যাপিটল ভবন

ওয়াশিংটনে ১০০ কনস্টিটিউশন অ্যাভিনিউ ঠিকানায় ক্যাপিটল বিল্ডিং হল আমেরিকান কংগ্রেসের বৈঠকের জায়গা। এর দুধসাদা গম্বুজ আমেরিকার গণতন্ত্রের প্রতীক। ক্যাপিটল পাহাড় থেকেই এই স্থাপত্যের নামকরণ। তবে অষ্টাদশ শতকের প্রথমে এই পাহাড়ের নাম ছিল ‘জেনকিন্স’। পরে নাম পরিবর্তিত হয়। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে এর মাথায় তৈরি হতে শুরু করে আজকের ক্যাপিটল বিল্ডিং।ফরাসি স্থপতি পিয়্যের চার্লস লেফঁ দায়িত্ব পেয়েছিলেন আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটনকে সাজিয়ে তোলার। তিনিই ছিলেন ‘ক্যাপিটল বিল্ডিং’ নির্মাণের দায়িত্বে। তিনিই জেনকিন্স হিল-কে বেছে নেন ‘ইউ এস কংগ্রেস হাউস’ তৈরি করার জন্য। হোয়াইট হাউস এবং পোটোম্যাক নদীর কাছেই এই স্থাপত্যের নাম ‘ক্যাপিটল’ রাখার প্রস্তাব দেন আমেরিকার রাজনীতিক, কূটনীতিক, স্থপতি তথা দার্শনিক থমাস জেফারসন।‘ক্যাপিটল’ শব্দের মূল উৎস প্রাচীন ল্যাটিন ভাষা। ৭ পাহাড়ের শহর বলে বিখ্যাত রোমের একটি পাহাড় হল ‘কাপিতোলিন’। তার উপরেই খ্রিস্টের জন্মের ৫০৯ বছর আগে তৈরি হয়েছিল প্রাচীন রোমান দেবতা জুপিটারের মন্দির। রোমের সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই উপাসনালয়ের চারপাশের এলাকাকে বলা হত ‘এরিয়া কাপিতোলিনা’। সেখান থেকেই ইংরেজি শব্দভাণ্ডারে ঢুকে পড়েছে ‘ক্যাপিটল’।ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের কাজ কিন্তু শেষ অবধি পিয়্যের লেফঁ-র নকশায় তৈরি হয়নি। ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে জর্জ ওয়াশিংটনের সঙ্গে মতানৈক্যের জেরে লেফঁ অপসারিত হন। এর পর ক্যাপিটল বিল্ডিং নির্মাণের জন্য স্থপতিদের জন্য একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সেখানে বাকিদের টেক্কা দিয়ে জয়ী হয় নবীন স্থপতি উইলিয়াম থর্নটনের নকশা। তাঁর নকশাও ছিল ফরাসি স্থাপত্য ঘরানায় অনুপ্রাণিত।থর্নটনই ছিলেন ক্যাপিটলের মূল স্থপতি। এছাড়া আরও অনেক স্থপতির পরামর্শ এপং নকশা গ্রহণ করা হয়েছে। আমেরিকার স্থপতি এডওয়ার্ড ক্লার্ক ছিলেন পুরো নির্মাণের দেখভাল করার দায়িত্বে। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে মূল ভবনের নির্মাণ শেষ হয়েছিল। প্রথমে কয়েক দশক প্রতি রবিবার এই ভবনে সাপ্তাহিক উপাসনাও হত।১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে একটি আইন পাশ হয়েছিল। যেখানে বলা হয়েছিল ওয়াশিংটন ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় কোনও নির্মাণের উচ্চতা ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের থেকে বেশি হতে পারবে না। পরে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে এই আইন খারিজ হয়ে যায়। এখন ২৮৯ ফুট উচ্চতার এই স্থাপত্য হল ওয়াশিংটন ডিসি-র পঞ্চম উচ্চতম ভবন। এর থেকে বেশি উচ্চতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওয়াশিংটন মনুমেন্ট, দ্য ব্যাসিলিকা, দ্য ওল্ড পোস্ট অফিস এবং ওয়াশিংটন ন্যাশনাল ক্যাথিড্রাল।আমেরিকার গর্বের এই স্থাপত্যের উপরেও পড়েছে যুদ্ধের প্রভাব। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ব্রিটেন এবং আমেরিকার মধ্যে। যুদ্ধের জেরে ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে অগ্নিদগ্ধ হয় ক্যাপিটলের বেশ কিছুটা অংশ। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ত, যদি না অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ঝড় শুরু হত। ঝড়ের ফলে আগুন বশে আনতে সুবিধে হয়েছিল। ১৮১৫ থেকে শুরু করে ৪ বছরের মধ্যে আবার নতুন করে তৈরি করা হয় ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপত্য।ক্যাপিটল-এর একতলায় একটি অংশকে বলা হল ‘ক্রিপ্ট’। নির্মাণের গোড়ায় ঠিক হয়েছিল এখানে সমাধিস্থ করা হবে আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনকে। কিন্তু পরে জর্জ ওয়াশিংটনের শেষ ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় মাউন্ট ভার্ননে। এখন ক্রিপ্ট মূলত প্রদর্শনী কক্ষ।আমেরিকা-ব্রিটেন যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরে ৫ বছর ধরে নতুন করে তৈরি করা হয় ক্যাপিটল-কে। সে সময় ইউ এস কংগ্রেসের বৈঠক বসত ‘ওল্ড ব্রিক ক্যাপিটল’ ভবনে। মূল ক্যাপিটল ভবন সারাইয়ের পরে ‘ওল্ড ব্রিক ক্যাপিটল’ ব্যবহৃত হত নানা কাজে। সে সময় এর কিছু অংশ ব্যবহৃত হত বন্দিশালা হিসেবেও। যুদ্ধবন্দি, গুপ্তচর, শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত সেনা মতো স্পর্শকাতর অভিযুক্ত এবং দোষীদের জায়গা হত এই কারাগারে। পরে ১৯৩২ সালে সুপ্রিম কোর্ট তৈরির সময় বিলুপ্ত হয়ে যায় ‘ওল্ড ব্রিক ক্যাপিটল’-এর অস্তিত্ব।অতিমারি কাটিয়ে নতুন বছরের শুরুতেই আমেরিকার ঐতিহাসিক ক্যাপিটল বিল্ডিং রণক্ষেত্রের চেহারা নিল। বুধবার, কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক স্লোগান তুলে ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে জোর করে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে।বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় পুলিশের। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে জোর করে ঢোকার চেষ্টা করতেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গোটা চত্বর।পুলিশ সূত্রের খবর, ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং সেনেটের বৈঠক চলছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের চূড়ান্ত সিলমোহরের বিষয়টি নিয়ে। তখনই কয়েক হাজার ট্রাম্প-সমর্থক ক্যাপিটল বিল্ডিং ঘিরে ফেলে। জোর করে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনার পরই পোটোম্যাক নদীর কাছে গোটা ক্যাপিটল বিল্ডিং চত্বর নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে।নজিরবিহীন এই ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন। গ্রেফতার অন্তত ৫০। ট্রাম্পভক্তদের এই আচরণে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এই ঘটনার পরে আমেরিকার গণতন্ত্রে কালো দিনগুলির তালিকায় আরও একটি দিন বাড়ল। এমনই দাবি এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

শেষপর্যন্ত কি ট্রাম্প ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারবেন

জো বাইডেনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় পর্যন্ত আদৌ প্রেসিডেন্ট থাকবেন তো ডোনাল্ড ট্রাম্প? শুধু আমেরিকা নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও এখন ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্নই। তবে শেষমেশ যে সিদ্ধান্তই হোক না কেন, হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্পের বিদায় যে খুব একটা সুখকর হবে না, চার বছর আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন বারাক ওবামা। ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, হোয়াইট হাউস ছাড়ার সময় ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে না-ও থাকতে পারেন।

২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তখনও একমাস বাকি। নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ট্রাম্প। সেই সময় টুইটারে ওবামাকে কটাক্ষ করে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমেরিকার ইতিহাসে ওমাবাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রেসিডেন্ট হয়ে থেকে যাবেন’। ট্রাম্পের ওই টুইট নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে, একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ওবামা বলেন, ‘‘অন্তত প্রেসিডেন্ট হিসেবেই হোয়াইট হাউস ছাড়ব আমি।’’ বৃহস্পতিবার আমেরিকার ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে এই মুহূর্তে হোয়াইট হাউসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতেগোনা কয়েকদিনের মেয়াদও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলেও তাঁকে ইমপিচ করার প্রস্তাব নিয়ে‌ আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে সংবিধানে ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে প্রোসিডেন্টের দায়িত্ব সামলাতে ট্রাম্প অপারগ, এমন যুক্তি দেখিয়েও তাঁকে সরানোর প্রস্তাব উঠতে শুরু করেছে। তাতেই ওবামার ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। ##সূত্রঃ আনন্দবাজার

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.