--- বিজ্ঞাপন ---

বেড়ানোর জন্য বিশ্ব সেরা কক্সবাজার

পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত

0

শুভ দাস, কক্সবাজার থেকে

বাংলাদেশের কক্সবাজার হচ্ছে বিশ্ব সেরা অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। বঙ্গোপসাগর ঘিরে এক দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর আর কোন দেশে নেই। তাই কক্সবাজার সৈকতকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম সৈকত। এ সৈকতে বেড়ানোর মজাই আলাদা। কক্সবাজার বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর, মৎস্য বন্দর এবং পর্যটন কেন্দ্র। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার সদর দপ্তর। কক্সবাজার তার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। এখানে রয়েছে বাংলাদেশের বৃহত্তম সামুদ্রিক মৎস্য বন্দর এবং সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন।
১২০ কি.মি দৈর্ঘ্য এই সমুদ্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পুরো সৈকতটি বালুকাময়।
বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হতে প্রায় ১৫৫ কি.মি দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত কক্সবাজার। এটি একটি জেলা শহর। আর এই শহরেই অবস্থিত পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। যা কক্সবাজার শহর থেকে বদর মোকাম পর্যন্ত একটানা ১২০ কি.মি পর্যন্ত বিস্তৃত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ২৫ কি.মি দূরে ইনানী সমুদ্র সৈকত।

ক্যাপ্টেন কক্স এর নামেই কক্সবাজার

প্রতিটি স্থানেরই নামের পেছনে একটি ইতিহাস থাকে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় যে, ১৭৯৭ সালে বার্মার (মায়ানমার) আরাকান অঞ্চলে গোলযোগ দেখা দেয়। ফলে সেখান থেকে বাঙালিদের তাড়িয়ে দেয়া হয়। এই বিতাড়িত ছিন্নমূল বাঙালিরা বর্তমান কক্সবাজার, উখিয়া, গুনডুম প্রভৃতি অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। ঐ সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর একজন দূত ক্যাপ্টেন কক্স বার্মার রাজ দরবারে কাজ করতেন। তিনি কোম্পানীর নির্দেশে এখানকার শরণার্থীদের তদারকি এবং ত্রাণসামগ্রী বিতরণের জন্য কক্সবাজার ছুটে আসেন। তখন এখানকার সমগ্র এলাকা মশা ও জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষের বসবাসের অযোগ্য ছিল। ক্যাপ্টেন কক্স এমন পরিবেশে অস্বস্তিবোধ করলেও শরণার্থীদের ফেলে চলে যায়নি। বরং তিনি তাদের জন্য কাজ করতে থাকেন। তখন এই সাগর তীরের নাম ছিল ‘ফালকিং’। অবশেষে ১৮০২ সালে ক্যাপ্টেন কক্স এখানে মারা যান এবং তার নাম অনুসারেই স্থানটির কক্সবাজার নামকরণ করা হয়।

যেভাবে যাবেন

স্থল পথে ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও বিমান সকল পথেই কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪৪০ কি.মি.। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে কক্সবাজার রুটের বাসগুলো ছেড়ে যায়। তবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, কমলাপুর, মতিঝিল ও আরামবাগ থেকে অধিকাংশ বাস ছেড়ে যায়। এই রুটে এসি ও নন-এসি উভয় ধরনের বাস রয়েছে। এই রুটে চলাচলকারী উল্লেখযোগ্য পরিবহনগুলোর মধ্যে রয়েছে – গ্রীন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী এন্টারপ্রাইজ, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া, এস.আলম. পরিবহন, মডার্ন লাইন, শাহ বাহাদুর, সেন্টমার্টিন প্রভৃতি।

ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের সাথে এখনো কোনো রেল যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি। রেলে করে কক্সবাজার যেতে চাইলে আপনাকে প্রথমে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে হবে। চট্টগ্রামের চকরিয়া থেকে বিভিন্ন পরিবহনের অসংখ্য বাস রয়েছে সরাসরি কক্সবাজারে যাওয়ার। চকরিয়া থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৫৭ কি.মি.।

তবে আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারের সাথে বিমান যোগাযোগ রয়েছে। ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট প্রতিদিন ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচল করে।

কি আছে কক্সবাজারে

পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত হলো কক্সবাজার। বিধাতা যেন বাংলার সব রূপ ঢেলে দিয়েছেন বালুর আঁচলে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রবেশ করতেই কানে ভেসে আসে সাগরের উত্তাল গর্জন। এই সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যায় সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য। বালুচড়ে অনেক সময় দেখা যায় লাল রঙের রাজ কাকড়া। গভীর জলে মাছ ধরে জেলেদের ফিরে আসার দৃশ্য সত্যিই অপরূপ। বালিয়াড়ি সৈকত সংলগ্ন শামুক-ঝিনুক এবং নানা প্রজাতির প্রবাল সমৃদ্ধ বিপণি বিতান অত্যাধুনিক হোটেল, মোটেল, কটেজ, নিত্য সাজে সজ্জিত বার্মিজ মার্কেটসমূহ আর পর্যটকদের বিচরণে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত প্রাণ-চাঞ্চল্যকর হয়ে উঠে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অনেকগুলো পয়েন্ট রয়েছে। সেগুলো হলো- লাবনী পয়েন্ট, সী ইন পয়েন্ট, কলাবতী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্ট এবং ডায়বেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট প্রভৃতি। এদের মধ্যে লাবনী পয়েন্ট কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখান থেকে বিস্তীর্ণ বেলাভূমি, সারি সারি ঝাউবন এবং সাগরের আছড়ে পড়া বিশাল ঢেউ দেখা যায়। লাবনী বিচ থেকে হেঁটে হেঁটে পূর্বদিকে সোজা চলে যাওয়া যায় হিমছড়ির দিকে। এ ছাড়াও কক্সবাজারের আশেপাশে বৌদ্ধ যুগের অনেক প্রাচীন কীর্তি রয়েছে। এখানকার প্যাগোডাগুলো খুবই দর্শনীয়। এখানে একটি আবহাওয়া অফিস, একটি বাতিঘর রয়েছে এবং মারমা, রাখাইনসহ অনেক উপজাতির বসবাস রয়েছে।
কক্সবাজার এই সকল দর্শনীয় স্থান গুলো দেশের পর্যটন শিল্পে এক অভাবনীয় ভূমিকা পালন করে। যার কারণে কক্সবাজারকে পর্যটন রাজধানী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.