--- বিজ্ঞাপন ---

সাগরের ডাকে কক্সবাজারে

0

::মোস্তফা নেওয়াজ::

দেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজার। বাংলাদেশের মানুষ “সাগর” কিংবা “ভ্রমণ” মানে বুঝে অনেকটা “পাহাড়-সমুদ্রের” মিলনস্থল কক্সবাজার। পাহাড়ের সৌন্দর্য্য ও সাগর পাড়ের বিশুদ্ধ- নির্মল বাতাস ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে কক্সবাজারকে করেছে অনন্য। আজ আমি, আমার কক্সবাজার ভ্রমণের অভিজ্ঞতার গল্পটি আপনাদের কাছে শেয়ার করছি…

চায়ের আড্ডায় চুমুক দিতে দিতে একজন বলে উঠলো-চল দোস্ত! কোথাও ঘুরতে যাই? বলার সাথে সাথে বাকি বন্ধুরা ভাবতে লাগলো কোথায় যাওয়া যায়? শেষমেষ সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল সাগর দেখতে কক্সবাজার যাবে। দু’জনের সমস্যার কারণে আপত্তি জানালো, তারা যাবে না। তারা ছাড়া আমরা বাকীরা সবাই রাজি হলাম।

ওহ!আমাদের পরিচয়টি দেয়নি এখনও। আমরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আধবয়সী একঝাঁক ছেলে।নিখিলেশ,জয়নুলদের মতো হয়তো সেই কফি হাউজের আড্ডা আমাদের হয় না। তবে,এই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সময় স্কুল জীবনের বন্ধু “পংকজের” চায়ের দোকানে প্রতিদিন বিকেলে চায়ের আড্ডাটা ঠিকই হয়। পংকজের দোকান কে অবশ্যই আমরা সবাই দাদার দোকান বলে সম্বোধন করি। সেই দাদার দোকানে বসে ঠিক করা ভ্রমণের গল্পটি আপনাদের আজ বলছি…

(পরদিন সকাল)

গতকালের নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ সবাই ডলু ব্রিজের স্টেশনে উপস্থিত হতে শুরু করেছে।

আমরা চট্টগ্রামের সর্ব দক্ষিণের উপজেলা কক্সবাজার লাগোয়া সাতকানিয়ার মানুষ। কক্সবাজার যেহেতু আমাদের পাশের জেলা সেহেতু হটা করে আয়োজনে, তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। মোটামুটি গতরাতেই সব প্রস্তুতি নেয়া শেষ। সকাল সাড়ে আটটা বাজে দাদার দোকানে আজকের দিনের প্রথম চা টা হাতে নিলাম। শীতকাল চলছে! কনকনে শীতের হিমেল বাতাসে,চা টা খেতে বেশ ভালোই লাগলো।সবাই মিলে একসাথে শীতের সকালে চায়ের আনন্দ কি আর বিশ্লেষণ করতে হয়?

আজ আমরা যাচ্ছি আটজন—আসিফ,ইনান,অন্তু, রকি,সাজ্জাদ,পঙ্কজ,ঈমান ও আমি। ইমন ও পঙ্কজ (এই যাত্রা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে) তারা একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করল। ড্রাইবার মশায় আমাদের পরিচিত।আমরা যেখানে রোজ আড্ডা দেয়? তার পাশের পাড়ার লোক। সবাই তাকে “বড্ডা” বলেই ডাকে। প্রকৃত নাম “নয়ন দাশ”।

চা খাওয়া শেষ। ৮.৪৭ বাজে ঘড়িতে, আমাদের একমাত্র যাত্রার বাহনটি উপস্থিত।গাড়ি এসে পৌঁছানোর সাথে সাথেই, এক এক করে সবাই গাড়ীতে উঠলাম, সাথে মালপত্র গুলোও তুললাম।

৯টা বাজতে আর মাত্র ২ মিনিট বাকি গাড়ি ছাড়লো। সবাই বেশ উৎসাহী আজকের ভ্রমণ নিয়ে, আমার ও সাজ্জাদের উৎসাহ তো আরো বেশি, ছয় বছর পর কক্সবাজার যাচ্ছি। (চট্টগ্রাম শহরে থাকি গত বছর কয়েক, তারপর থেকে এ পথে আর যাওয়ার সুযোগ হয়নি)

করোনা মহামারীর কারণে গত এক বছর ধরে অনেকটাই ঘরবন্দি ছিলাম।এখন সবকিছু আস্তে আস্তে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এখনো খুলেনি।সেই সুবাদে এত বছর পর, আমার ও সাজ্জাদের কক্সবাজার ভ্রমণ। সাজ্জাদ আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। যেখানেই যায়, একসাথে যায়…

যাত্রাপথে জানালার পাশে বসে ছিলাম।প্রকৃতির সৌন্দর্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন বেশ স্পষ্ট। সেই সাথে বন্ধুদের সম্মিলিত গলায় পুরনো ও আধুনিক বাংলা গানের সুর যাত্রা পথের ক্লান্তি, আনন্দে রূপ দিয়েছে। আমি ভালো গাইতে পারিনা। তবে, যে কটা গান আমি পারি।তাই গাইলাম! ঘন্টাখানেক পর আমরা লোহাগাড়া হয়ে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাঙ্গ হয়ে কক্সবাজার ঢুকলাম।

কক্সবাজারের আদি নাম “পালংকি”। একসময় এটি “প্যানোয়া” নামেও পরিচিতি পাই। আধুনিক কক্সবাজারের নামকরণ হয়েছে এক ইংরেজ নৌ অফিসার “ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স “এর নামে। তিনি এখানে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই থেকে এটি কক্সবাজার। এতো বললাম কক্সবাজারের ইতিহাস, এবার গল্পে ফেরা যাক — দেড় ঘন্টা পর আমরা “মাতামুহুরী” নদীর পাড়ের কাছে গাড়ি থামালাম।

মাতামুহুরীর সৌন্দর্য ও নদীর পাড়ের সেই সিক্ত বাতাসের অনুভূতি আমি আজীবনও ভুলব না!নদীর পাড়ের একটি টঙ দোকানে হালকা নাস্তা করে আবার রওনা দিলাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে…….

ঘন্টাখানেক পর রামু উপজেলা ফেলে আমরা কক্সবাজার পৌঁছালাম। আমরা কক্সবাজারের হিমছড়ির খানেক আগের একটি হোটেলে উঠি।হোটেলে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা ছিল।হোটেল রুমে দু’ঘণ্টার ভ্রমণ বিরতি নিয়ে বিকেল চারটায় বন্ধুরা সবাই মিলে “লাবনী” বিচে গেলাম।সেখানে হাজারো পর্যটকের ভিড়। বছরের এই সময়টা পর্যটকে ভরপুর থাকে কক্সবাজার। সারাদেশ থেকে তো বটে , সারাদুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ পৃথিবীর বৃহত্তম সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য দেখতে ভিড় জমায়।

এখন শীতকাল, দিনের ব্যাপ্তি রাত্রি রাত্রি অপেক্ষা ছোট।বিকেল পাঁচটা পার হতেই সূর্য অস্ত যেতে শুরু করল।সবাই মিলে সূর্যাস্ত উপভোগ করলাম।সেখানে সন্ধ্যা নামতেই বিচ ছেড়ে আমরা আশেপাশের দোকানগুলো ঘুরে দেখলাম।এখানকার দোকানগুলো আচার, ঝিনুক মালা, সাগরের তাজা ও শুটকি মাছের জন্য বিখ্যাত। ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে সাগরের তাজা মাছের, “লাইভ ফিস কাবাব” নামের একটি জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার সারলাম।তারপর রাত দশটার দিকে হোটেলে ফিরলাম। হোটেলের বাগানবাড়িতে,সাগর পাড়ের বালুর বিচে “ক্যাম্প-ফায়ারিং” এর ব্যবস্থা ছিল।সবাই গোল হয়ে আগুনের উত্তাপে গল্পের আসর জমালাম। আমাদের মধ্যে আসিফ-ইনান আসর জমাতে বেশ পটু।

শেষের দিকে রাকিব ও অন্তুর গলায় গান শুনলাম। আমাদের মধ্যে ওরাই ভালো গান গায়।একেবারে শেষে রাকিব আর অন্তু যৌথভাবে গান ধরলো। ওদের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও গাইতে লাগলাম। গানের তালে তালে হারিয়ে যাচ্ছিলাম অলুক স্বপ্নে।মনে হচ্ছিল “আরব্য রজনী” উপন্যাসের কোনো একটা রাত উদযাপন করছি।এই রাতটা আমার জীবনের বিশেষ স্মৃতি হয়ে থাকবে…

পরদিন সকালে আমরা হিমছড়ি থেকে ইনানী গেলাম।

(পরদিন সকাল)

ইনানী বিচে গিয়ে কিছুটা অবাকই হলাম।লাবনী বিচের চেয়ে এখানে জনসমাগম যেমন কম,তেমনটা সাগরের স্বচ্ছ জল দেখে মুগ্ধ হলাম।সাগরের জল স্বচ্ছ হয় টিভিতে দেখেছি,এখানে বাস্তবে দেখলাম… “সবাই মিলে একটি ফুটবল ম্যাচও খেলেছি বিচে”।সবশেষে লোনা পানিতে গোসল শেষে এই ভ্রমণের ইস্তফা…

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.