--- বিজ্ঞাপন ---

কোরিয়ার জামানত প্রথা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন রেমিট্যান্স যোদ্ধারা

0

ওমর ফারুক হিমেল

দক্ষিণ কোরিয়ায় ইপিএস কোটা চালুর কয়েকবছর পর নানা দেনদরবার ও কূটনৈতিক দক্ষতার মাধ্যমে তৎকালীন দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত মোস্তফা কামালের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সাবেক পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড.ইফতেখার আহমেদের নির্দেশনায় বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের ইপিএস সিস্টেমে অন্তর্ভূক্ত হয়। জানা যায়, বাংলাদেশ ২০০৮ সাল বাংলাদেশ ইপিএস কর্মী প্রেরণ করে, এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর হাজার হাজার বাংলাদেশি ইপিএস কর্মী কোরিয়ায় প্রবেশ করে।বলাবাহুল্য, ২০১০ সালে কোরিয়ার সরকারের আমন্ত্রণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ কোরিয়া আসেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ কোরিয়া সফরের পর থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যথেষ্ট ইপিএস কর্মী কোরিয়া প্রবেশ করে। কয়েকবছর যাবৎ নানান জটিলতায় দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজারে দেশভিত্তিক কোটা পূরণ করতে পারছেই না বরং পিছিয়ে পড়ছে।অন্যান্য দেশের কর্মী সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও দিন দিন বাংলাদেশের হ্রাস পাচ্ছে।
দুই বছর আগেও ইপিএস কর্মীর সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার, এখন তা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র গুলো জানায়, ইপিএস কর্মী হিসেবে যারা কাজ করছেন তারা এমনিতেই নানা সমস্যায় রয়েছেন।সাম্প্রতিককালে পূর্বের তুলনায় মানসিন যন্ত্রণায় প্রবাসীদের মৃত্যু জ্যামিতিক হারে বেড়েছে । কিন্তু একটি বিষয় তাদেরকে ব্যথিত করেছে, তা হলো ‘জামানত’ ইস্যু।কিছুদিন পূর্বে বোয়েসেলের জামানত নির্দেশনা প্রক্রিয়া দেখে পুরো কোরিয়া প্রবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়, ক্ষোভে ফেটে পড়ে,পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের শ্রম বাজার ধরে রাখতে হলে অবিলম্বে জামানত ইস্যু বিলুপ্ত করতে হবে বলে বার বার প্রবাসীরা উল্লেখ করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশসহ মোট ১৬টি দেশ থেকে কর্মী নেয় দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু বাংলাদেশ ছাড়া অন্যান্য দেশ জামানত ইস্যু রাখেনি। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম।  করোনার এই সময় রি -এন্ট্রি কমিটেড বন্ধ রেখেছে দেশটি। তাছাড়া ছুটিতে এবং রিলিজে থাকা অনেকেই দেশে আটকা পড়েছেন। দূতাবাস,বোয়েসেল, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে আটকে পড়া ৫৮৮ জন কর্মী ফিরেছেন।বিশ্বস্থ সূত্র থেকে জানা যায়,দেশে আটকে পড়া বাকী কর্মী ও শিক্ষার্থীদের ফেরাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আটকে পড়াদের কোরিয়ায় ফেরাতে ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে কথা হয়েছে। আটকে পড়া কর্মীদের ফেরাতে অনুরোধ জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদও। কোরিয়ার সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। এরপরেও আলোর মুখ দেখা যাচ্ছে।হতাশায় উদ্ভিগ্নতা দিন কাটছে আটকে পড়াদের, যেকোন শর্তে তারা কোরিয়ায় ফিরতে চাই।গত দুই মাস আগে সবকিছুকে ছাপিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল জামানত ইস্যুর বিষয়টি। বোয়েসেলের ছাপিয়ে দেয়া এই সিদ্ধান্তেই রেমিট্যান্সযোদ্ধারা ব্যথিত। জামানত বিষয়ে কোরিয়ায় বসবাসরত ইপিএস কর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, কেউ কেউ দুষছেন দূতাবাসের শ্রম উইংকে, কেউ কেউ দুষছেন বোয়েসেলকে । কোরিয়ায় প্রবাসীদের অধিকাংশ বিশেষকরে ইপিএস কর্মীরা জামানতের সসম্পূর্ণ বিলুপ্তি চান। এমনিতে করোনার কারণে বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। অনেকে মেয়াদ শেষে দেশে ফিরে যাচ্ছে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রেরিত হয়,সরকারী হিসেবে বারতম । বাংলাদেশী শ্রম বাজারে যেখানে ইপিএস কর্মী বাড়ানো দরকার, সেখানে জামানতের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের বাজার হারানো আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট খাতের অনেকের মত।বাংলাদেশ ওভারসিস এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) দক্ষিণ কোরিয়াগামী বাংলাদেশী ইপিএস কর্মী থেকে প্রাপ্ত জামানত বিষয়ক নির্দেশিকা যে ২০২০ জারী করেছে,তার সংশোধন কোরিয়াবাসীরা পাইনি।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কন্টেট লেখক কোরিয়া প্রবাসী মিজান জাহিদ বলেন,  কোরিয়া প্রবাসী ইপিএস কর্মীদের জামানত ফেরতের শতভাগ গ্যারান্টি থাকা সত্বেও জামানত প্রথা নিয়ে আপত্তির মূল কারণ হলো কোরিয়ান সরকারের শ্রম আইন বহির্ভূত শর্তারোপ প্রয়োগ যেমন কোম্পানি পরিবর্তন করা যাবে না যেটা কোরিয়ান আইনে কোম্পানি পরিবর্তন করার অধিকার রয়েছে দ্বিতীয়তঃ দেশে গিয়ে জামানত ফেরতের ওয়ান স্টপ সার্ভিস এর নিশ্চয়তা পেলেই কর্মীরা জামানত প্রথাকে অবশ্যই গ্রহণ করবে বলে অনেক ইপিএস কর্মী মতামত দিয়েছেন।যেমন হতে পারে কোরিয়া থেকে ফেরত বীমার টাকা পাওয়া ক্ষেত্রে কোরিয়া থেকে প্রস্থানের সময় কোরিয়ান এয়ারপোর্টে প্রত্যেকটা ইপিএস কর্মীর ফেরত বীমার টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেইরকম যদি বাংলাদেশ কোন কর্মী কোরিয়া থেকে তার পূর্ণ মেয়াদ শেষ করে দেশে গিয়ে ঢাকা এয়ারপোর্ট এর মধ্যে যে নির্দিষ্ট ব্যাংক গুলো আছে ঐ সমস্ত ব্যাংকের কোন ব্রাঞ্চ এর মাধ্যমে জামানতের টাকা প্রাপ্তির গ্যারান্টি দেওয়া হতে পারে সে ক্ষেত্রে হয়রানিমূলক এবং সন্দেহজনক প্রবণতা থেকে মুক্তি পাবে প্রত্যেকটা ইপিএস কর্মী এবং বোয়েসেল ও সরকার।এতে করে বোয়েসেল এবং ইপিএস কর্মীদের মধ্যে বিশ্বাসের বন্ধন আরো দৃঢ় হবে বলে অনেক ইপিএস কর্মী মতামত প্রকাশ করেছেন।
জানতে চাইলে ইপিএস কর্মী মিজানুর রহমান বলেন,বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীবান্ধব।তিনি অনেকদিন প্রবাসে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী প্রবাসীদের সুখ দু:খ সম্পর্কে জানেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর করা গেলেই, জামানত প্রথা বাতিল হবেই। প্রবাসীদের প্রতি এটি অবিচার বলে যোগ করেন মিজানুর রহমান। কোরিয়া প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম বলেন,করোনাকালে, রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিকে মজবুত ভিতে দাঁড় করিয়েছে।বোয়েসেল ইচ্ছে করে এই জামানত ইপিএস কর্মীদের উপর ছাপিয়ে দিচ্ছে, ইপিএস কর্মীরা শুনতে চাই, জামানত প্রথা চিরচরে বাতিল।বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের শ্রম বাজার আরো জনপ্রিয় করতে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে, কাজ করতে হবে সমন্বিতভাবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদিশিক মন্ত্রণালয়, বোয়েসেল , দূতাবাস চাইলে জামানত প্রথা এক নিমিষেই বাতিল করতে পারে। উল্লেখ্য,দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে দুই দেশের সরকার। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেছিলেন। তিনদিনের সেই সফর দুই দেশের জন্য অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশ্যে ২০১০ সালের ১৫ মে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন। সিউলে শেখ হাসিনা দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লি মিয়ং বাকের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। উভয় দেশের মধ্যে ঢাকা ও সিউলের মধ্যে অর্থনীতি, জ্বালানি ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা সংক্রান্ত চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্ব ছিলো কোরিয়ার বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্টানগুলোর সাথে মিটিং এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচলা।সূত্রে জানা যায়,সে আলোচলায় লি মিয়ং বাক বাংলাদেশি কর্মীদের উচ্চসিত প্রশংসা করেছেন বলে জানা যায়। দীর্ঘদিন পর,২০১৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক ইয়ং বাংলাদেশ সফর করেন। সাম্প্রতিককালে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা প্রসংগে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়ার সাবেক সেক্রেটারি এম এন ইসলাম জানান, নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সাবেক রাষ্ট্রদূত মোস্তফা কামাল, কোরিয়ার ইপিএস সিস্টেমে বাংলাদেশকে অন্তভূর্ক্তি করতে যে ভূমিকা রেখেছেন তা স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।একই কথা উল্লেখ করেন, দক্ষিণ কোরিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা,চট্রগ্রাম এসোসিয়েশন অব সাউথ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি আবু সুফিয়ান।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.