--- বিজ্ঞাপন ---

উজবেকিস্তান হতে পারে বাংলাদেশের বড় বাজার

বাংলাদেশে দূতাবাস খোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম

0

বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক  অনেক দিনের পুরানো। এ দু’দেশের মধ্যে প্রথম এফ ও সি মিটিং হতে যাচ্ছে এ বছরের এপ্রিলে। জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে উজবেকিস্তানের তাসখন্দে খোলা হয় বাংলাদেশের দূতাবাস। কিন্ত বাংলাদেশে অধ্যাবধি উজবেকিস্তানের দূতাবাস তো দূরে থাক একটি কনসূল্যট অফিসও খোলা হয়নি। বছরের পর বছর ধরে এখানে রাষ্ট্রদূত বদল হয়েছে কিন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অথচ উজবেকিস্তানে রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বড় একটি রফতানি বাজার। বর্তমান রাষ্ট্রদূত মোঃ জাহাঙ্গীর আলম যোগদানের পর উজবেকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের সর্ম্পকের গতি কিছুটা পাল্টাতে থাকে। তিনি উজবেক সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন এশিয়ায় বাংলাদেশ এখন নিজস্ব শক্তিতে বলিয়ান উচ্চ প্রবৃদ্ধির একটি দেশ।

এ বিষয়ে আলাপকালে উজবেকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘উজবেকিস্তানের তাসখন্দে বাংলাদেশ দূতাবাস থাকলেও বাংলাদেশে উজবেকিস্তানের কোন দূতাবাস নেই। এমনকি কোন কনস্যূলেট অফিসও নেই। বাংলাদেশের কোন বিষয় উজবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় প্রথমে দিল্লীতে তাদের দূতাবাসে পাঠায়, দিল্লী হতে এটা ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাঠানো হয়। এখান থেকে তারা ঢাকা পাঠায়।এ পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, উজবেকিস্তানে রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বড় বাজার। এখানে আম, আনারস, চা, লেদার পণ্য থেকে শুরু করে অনেক কিছুর চাহিদা আছে যেগুলো বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। আবার উজবেকিস্তানের তুলাজাত পণ্য সস্তা ও মান সম্পন্ন। তারা শুধু তুলাজাত পণ্য বিক্রি করেই অনেক টাকা আয় করে। অথচ বাংলাদেশে রয়েছে তুলার বড় বাজার। রাষ্ট্রদূত বলেন, এখানে উৎপাদিত পণ্য রাশিয়াসহ সিআইএস ভুক্ত দেশগুলোতে ডিউটি ফ্রি সুযোগ পেয়ে থাকে। এখানে সম্ভাবনা প্রচুর।  তিনি বলেন, আমি তাসখন্দে আসার পর চেষ্টা করে যাচ্ছি বাংলাদেশের সাথে উজবেকিস্তানের সরাসরি বিমান যোগাযোগ স্থাপনের জন্য। এখানে বিষয়টি নিয়ে উজবেক সরকারের সম পর্যায়ের বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক করেছি। উজবেকিস্তানের সাথে ভারত, পাকিস্তান, ইরানসহ বিভিন্ন দেশের সাথে সরাসরি যোগাযোগ আছে, বাংলাদেশের সাথে কেন থাকবে না। তারা বিষয়টি উপলদ্ধি করেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশে উজবেকিস্তানের দূতাবাস খোলার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী বলে উল্লেখ করেন।’

সূত্র জানায়, মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান হতে পারে বাংলাদেশের জন্য অন্যতম বড় রফতানি বাজার। প্রায় ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৮ বর্গকিলোমিটারের এ দেশটি আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বের ৫৬তম বড় রাষ্ট্র। জনসংখ্যা মাত্র সোয়া তিন কোটির মতো। মাথাপিছু আয় ৫৬০০ ডলার। উজবেকিস্তান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সুতা রফতানিকারক এবং পঞ্চম বৃহত্তম উত্পাদক দেশ হিসাবে পরিচিত। রফতানি আয়ের প্রধান উৎস হিসাবে দেশটির তুলা উৎপাদন। তুলাজাত পণ্য রফতানি করে প্রচুর আয় হয়। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও পণ্যটি আমদানি করতে পারে এ দেশ থেকে। যেহেতু গার্মেন্টস সেক্টরে প্রচুর তুলা প্রয়োজন, এ দেশটি হতে পারে নতুন ক্ষেত্র।  তুলা ছাড়াও রয়েছে স্বর্ণ, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেলও। চা পান করাকে তারা ঐতিহ্য মনে করে। চা প্রথমে অতিথিদের এবং তারপরে পরিবারের সদস্যদের দেওয়া হয়। গ্রিন টি উজবেকিস্তানে বেশি জনপ্রিয়। তবে তাশখন্দে কালো রঙের চা পছন্দ বেশি। বাংলাদেশে প্রচুর পরিমানে চা আছে। ইচ্ছে করলে চা রফতানি করা যায় উজবেকিস্তানে।

মধ্য এশিয়ার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উজবেকিস্তানে রয়েছে বাংলাদেশের শ্রম বাজারও। রাষ্ট্রদূত মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের একান্ত প্রচেষ্টায় উজবেকিস্তানের একটি প্রকৌশল কোম্পানিতে দক্ষ শ্রমিক নেয়া শুরু হলেও বিষয়টি থমকে যায় কিছু সংখ্যক অদক্ষ শ্রমিকের কারনে। জানা গেছে,উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসকন্দ থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দূরে কারশিতে ইন্টার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ থেকে ৮৮৮ জন শ্রমিক নেয়ার চুক্তি হলে প্রথম দফায় ২৩৯ জন শ্রমিক যায়। কথা ছিল যারা যাবেন তারা চুক্তি মতে অবশ্যই স্ব স্ব ক্ষেত্রে দক্ষ হতে হবে। কিন্ত যাবার পর দেখা যায় রিক্রুটিং এজেন্সি দক্ষ শ্রমিকদের সাথে কিছু অদক্ষ শ্রমিকও ঢুকিয়ে দেয়। অদক্ষ শ্রমিকরা সেখানে যাবার পর বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তারপরও রাষ্ট্রদূত এটি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত উজবেকস্থানের সরকারী ও বেসরকারী শীর্ষ কর্মকর্তাদের মাঝে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত, পর্যটন নগরী পার্বত্য চট্টগ্রামের সৌন্দর্য,সিলেটের চা বাগান, উজবেকিস্তানের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন পীর-আওলিয়াগনের মাজার, পবিত্র ইসলাম ধর্মের প্রতি মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধার কথাও বলেন। রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় জানার পর এ দেশ সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করেন। একই সাথে চলতি বছরে যথা শিঘ্র সম্ভব দু’দেশের মধ্যে প্রথম ফরেন অফিস কনসালটেশন সভার আয়োজন, কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসামুক্ত সুবিধা দেওয়া, তাসখন্দ-ঢাকা-তাসখন্দ ও ইউরোপমুখী সরাসরি যাত্রীবাহী ফ্লাইট চালু, দু’দেশের মধ্যে তৃতীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিশনের সভা আয়োজন, পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে চুক্তি সই, দ্বৈত কর প্রত্যাহার সংক্রান্ত চুক্তি এবং ঢাকায় উজবেকিস্তানের নতুন দূতাবাস স্থাপনে রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক সহায়তা কামনা করেন।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.