--- বিজ্ঞাপন ---

প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে আরও চিন্তা করা প্রয়োজন

0

প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে শিশুর শিক্ষা জীবনের মুল ভিত্তি এবং প্রথম স্তর। আর আমাদের দেশে ২ কোটি শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারা দেশে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি প্রায় এক লক্ষ বা তার বেশি সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। তবে বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, শিশুরা একটু বেশি বয়সে শিক্ষা জীবন শুরু করলে অর্থ্যাৎ শিশুর বয়স নুন্যতম ৬+ বা তার সামান্য বেশি বয়সে স্কুলে ভর্তি হলে সেক্ষেত্রে শিশুর শিক্ষা অধিকতর দির্ঘস্থায়ী এবং বেশি ফলপ্রসু হয়। বিশেষ করে আমি বিদ্যালয় পর্যায়ে শিশুর উপর করা এক নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখেছি যে, যেসব শিশু ৬+ বয়সে বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে তাদের একাডেমিক ফলাফল বেশ সন্তোষজনক এবং বিদ্যালয়ের বার্ষিক ফলাফলে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী শিশুগুলোই মুলত এই বয়সের হয়ে থাকে। অন্যদিকে যে সমস্ত শিশুর অভিভাবক বয়স গোপন করে ৪+ শিশুকে ৬+ বানিয়ে এক রকম জোর করে বিদ্যালয়ে ভর্তি করেছিলেন, তাদের মধ্যে ৩৫% পর্যন্ত এখন ঝরে পড়ার যোগার। আবার বিদ্যালয়ের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে ২৮% বা তার বেশি সংখ্যক অতি অল্প বয়সের শিশুর শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই এক রকম শিক্ষভীতি নিয়ে বেড়ে উঠে এবং তাদের একটি বড় অংশ পরবর্তীতে বিদ্যালয়ে অনিয়মিত আসা যাওয়া শুরু করে বা বিদ্যালয়ে আর আসতে চায় না।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, বিশ্বের সর্বোচ্চ মান সম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানকারী দেশ ফিনল্যাণ্ডে শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে প্রবেশের বয়স সীমা ৬+ এবং জাপান কিম্বা যুক্তরাজ্যের শিশুরাও কিন্তু ৬+ বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু করে থাকে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশে সরকারিভাবে ৬+ বয়সে একটি শিশু প্রথম শ্রেণিতে এবং ৫+ বয়সে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হবার কথা থাকলেও বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের বড় বড় শহরগুলোতে এমনকী সফস্বল শহর এবং গ্রাম পর্যায়ে সরকারের এসব নিয়ম না মেনেই নিজেদের ইচ্ছেমতো ৩+ বা ৪+ বয়সের শিশুকে প্লে-গ্রুপ, নার্সারী বা কেজিতে ভর্তি করানো হচ্ছে। আসলে আমাদের বুঝতে হবে, শিশুর ৩+ কিম্বা ৪+ বয়স হচ্ছে বাধাহীনভাবে খেলাধুলা এবং আনন্দ করার সময়। এ সময়ে শিশুরা নতুন কিছুকে জানার জন্য অত্যন্ত কৌতুহলী হয়ে উঠবে। আর এই ৩+ কিম্বা ৪+ বয়সে শিশুকে প্লে-গ্রুপ কিম্বা নার্সারী গ্রুপ যে নামেই হোক না কেন তাকে জোড় করে বিদ্যালয়ে এনে আমরা মুলত শিশুর শিশুকাল এবং তার আনন্দঘন জীবনকে বিষাদে পরিণত করে দিচ্ছি এবং এতে করে শিশুর ব্রেন ডেভল্পমেন্ট যে মারাত্বকভাবে বাধাগ্রস্থ যে হচ্ছে না তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে না।
তাই অল্প বয়সে শিশুর উপর বইয়ের বোঝা যতই চাপানো হবে, শিশু ততই নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করবে এবং সার্বক্ষণিক শিশুর মনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকবে। আর এহেন সমস্যায় থাকা শিশুরা এক সময়ে বেশ জেদী এবং একগুয়েমী আচরণ শুরু করে দিতে পারে। বিশেষ করে বড় বড় শহর অঞ্চলে এবং বর্তমান সময়ে মফস্বল শহরেও শিশুর অভিভাবকদের অতি অল্প বয়সে প্লে-গ্রুপ এবং নার্সারী বা কেজি একাডেমিতে ভর্তির এক ভয়ানক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিছু দিন আগে শহরের এক শিশু শ্রেণির প্রশ্ন দেখে আমি নিজেই আতঙ্কিত না হয়ে পারলাম না। তারা শিশুর বয়স এবং যোগ্যতা যথাযথভাবে নিরুপণ না করেই নিজের ইচ্ছামতো প্রশ্ন করে শিশুকে এক ভয়ঙ্কর মানসিক চাপে ফেলে দেয়া হচ্ছেে। অনেক শিশু এসব অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষায় বেশ ভালো ফলাফল অর্জন করলেও মনে রাখতে হবে ৩০% পর্যন্ত এমনকী তার বেশি শিশুর জীবনেই নেমে আসতে পারে মানসিক বিপর্যয়। অনেকে শিক্ষা জীবনের পরবর্তী বিভিন্ন স্তরে বেশ ভালো ফলাফল লাভ করলেও তাদের মধ্যে চরম মাত্রায় বিষন্নতা, জেদীভাব এবং এমনকী পরিবারের সদস্যের প্রতি বিরুপ হয়ে শেষ পর্যন্ত মাদকাশক্ত কিম্বা সমাজ বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ার বড় ধরণের সম্ভবনা থেকে যায়। তাই শিশুর শিক্ষা জীবন শুরু হওয়া উচিত বা এর আদর্শ বয়স হওয়া উচিত ৬+। তাই আসুন আমরা সবাই শিশুর সুন্দর ভবিষ্যত এবং নিরাপদ শিক্ষা জীবন গড়ে তোলার স্বার্থে সঠিক সময় এবং বয়সে শিশুকে চাপমুক্ত এবং ভীতিহীন পরিবেশে বিদ্যালয়ে ভর্তি করি। আর আমি এও মনে করি সারা দেশে প্রাথনিক শিক্ষা হবে একমুখী। অর্থ্যাৎ আমাদের দেশের জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে শিশুর একটি নিদিষ্ট বয়স (৫+ থেকে ১০+) পর্যন্ত সারা দেশে একই মানের এবং একই কারিকুলামের ভিত্তিতে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.