--- বিজ্ঞাপন ---

বিশ্বের দেশগুলোর বৈদেশিক ঋণ ও দেনার সমাচার

আমেরিকার বৈদেশিক ঋনের পরিমান ৭,৮০০ বিলিয়ন ডলার!!

0

বিশ্বের প্রথম স্থানীয় সামরিক শক্তিধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় এক শতাব্দী ব্যাপী শাসন চালিয়ে গেলেও এই এক বিংশ শতাব্দীতে এসে এখন আবার বিশ্বের এক নম্বর ঋণগ্রস্ত দেশ বা বৈদেশিক ঋণ গ্রহণকারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, জুন ২০২০ এর হিসেব অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক ঋণ ও দেনার পরিমাণ ৭.০৪ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৭,০৪০ বিলিয়ন ডলার। যা ২০১৯ সালের একই সাময়ে ৬.৬৩ ট্রিলিয়ন ডলার ছিল।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির আকার ২০২০ সালে ২০ ট্রিলিয়ন ডলার বা ২০,০০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি ছিল। যদিও ইউকিপিডিয়ার তথ্যসূত্র অনুযায়ী ২০১৯ সালে আমেরিকার জিডিপির আকার ২১.৪৩ ট্রিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছে তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক অর্থনীতির আকার খুবই বিশাল আকারের এবং বিশ্বের একমাত্র চীন ব্যাতিত অন্য কোন দেশই আর ধারেকাছেও আসার সক্ষমতা রাখে না। এখানে প্রকাশ থাকে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেকে একক কোন দেশ হিসেবে জাপান কিন্তু সর্বোচ্চ ১.২৯ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বৈদেশিক ঋণ প্রদান করেছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বের আরেক উদীয়মান অর্থনৈতিক ও সামরিক পরাশক্তি চীনের বর্তমান অর্থনৈতিক আকার এবং বানিজ্য বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃহত্তম এবং ২০২০ এর হিসেব অনুযায়ী চীনের জিডিপির আকার ১৫.২০ ট্রিলিয়ন ডলার বা ১৫,২০০ বিলিয়ন ডলার। যদিও দেশটির জিডিপির আকার ২০১৯ সালে ১৪.০০ ট্রিলিয়ন ডলার দেখানো হয়। তবে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৈদেশিক ঋনগ্রস্থ দেশ হিসেবে চীনের নাম উপরে উঠে এসেছে। বর্তমানে চীনের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৫.৪৮ ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। তবে দেশটির বৈদেশিক ঋণ ও দেনার পরিমাণ তাদের বার্ষিক বানিজ্য ও রপ্তানি ২.৫৯ (২০১৯) ট্রিলিয়ন ডলার ছিল।

তাছাড়া বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ও সামরিক পরাশক্তিধর দেশ রাশিয়ার জিডিপি ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার (২০১৯) এবং বৈদেশিক দেনা ও ঋণের আকার ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। মুলত ১৯৮৯ সালে সাবেক সভিয়েত ইউনিয়ন চরম অর্থনৈতিক সংকটের ভেঙ্গে গিয়ে রাশিয়াসহ মোট ১৫টি নতুন দেশের জন্ম হয়। শুরুতে রাশিয়া চরম অর্থনৈতিক সংকটের নুখে পড়লেও পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়া পূর্বের গ্লানী ও অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠে আবারো সগৌরবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাড়াতে শুরু করেছে।

এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানের জিডিপির আকার ২৭৮ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া দ্যা এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী জুন ২০২০ এ পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণ ও দেনার পরিমাণ ১১৩ বিলিয়ন ডলার এবং তার বিপরীতে ফরেন কারেন্সির মজুতের পরিমাণ ১৫ই জানুয়ারি ২০২১ এর হিসেবে ১৩.০১৩ বিলিয়ন ডলার। তবে জিডিপির আকারের বিবেচনায় ঋণের পরিমাণ শতকরা হারের হিসেবে আনুমানিক ৪০%। আর জিডিপির আকার এবং ফরেন কারেন্সির নিম্ন মজুত ও শতকরা হারের বিবেচনায় এই পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ কিন্তু যে কোন দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য মারাত্মক বিপদজনক হয়ে দেখা দিতে পারে। যা কোন দেশের জন্য মোটেও কান্য নয়।

উইকিপিডিয়ার দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৩১৮ বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক দেনা ৪৪.০৩ বিলিয়ন ডলার। যদিও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ডিসেম্বর ২০২০ এর হিসেব অনুযায়ী ৪২.৯৭৩ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থ বছরে রপ্তানির পরিমাণ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। আর জিডিপির আকারের তুলনায় ঋণের পরিমাণ শতকরার হিসেবে আনুমানিক ১৪% এর কাছাকাছি হতে পারে। অবশ্য এই পরিমাণ বৈদেশিক ঋন ও দেনা দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেও ঝুঁকিপূর্ণ কিছু নয়।

বিশ্বের আরেক উদীয়মান অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশ ভারতের জিডিপির আকার ২০২০ সালের হিসেবে ২.৮৭ ট্রিলিয়ন ডলার বা ২৮৬৯ বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক দেনার পরিমাণ ৫৬৪ বিলিয়ন ডলার। তবে ভারতের এই বৈদেশিক ঋন ও দেনার বিপরীতে ৮ই জানুয়ারি ২০২১ এ ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ রয়েছে ৫৮৬.০৮২ বিলিয়ন ডলার এবং স্বর্ণ মজুত রয়েছে ৩৭.৫৯৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। তাছাড়া ২০২০ সালের জিডিপির আকারের তুলনায় শতকরার হিসেবে ভারতের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ২০% এর সীমার কাছাকাছি রয়েছে।

আসলে একটি দেশের বৈদেশিক ঋন তার মোট জিডিপির পরিমাণের ২২%-২৫% পর্যন্ত সহনশীল মাত্রা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে এই সীমা অতিক্রম করলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থেকেই যায়। তার পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণের বিপরীতে কমপক্ষে ছয় মাসের স্বাভাবিক আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ না থাকলে নিশ্চিতভাবেই বড় ধরণের অর্থনৈতিক বিপর্যয় কিংবা বেল আউটের মুখে পড়তে বাধ্য।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.