--- বিজ্ঞাপন ---

কোন ভিটামিনের অভাবে কি রোগ হয়

0

ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিন

ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিন হল এ, ডি, ই, কে। অর্থাৎ এই ধরনের ভিটামিন শরীরে কিছু পরিমাণে জমা হয়ে থাকতে পারে। প্রতিদিনের রেচনকার্যের সঙ্গে দেহ থেকে বেরিয়ে যায় না।
ভিটামিন এ : এই ভিটামিনের অভাব হলে মূল সমস্যা দেখা দেয় চোখে। এই ভিটামিনের ঘাটতিতে হতে পারে রাতকানা রোগ। এছাড়া জেরোপথালমিয়া বা চোখ শুকনো হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে। এমনকী হাইপারকেরাটোসিস নামে ত্বকের রোগও দেখা দিতে পারে ভিটামিন এ-এর ঘাটতিতে। এই অসুখে চামড়া আঁশের মতো দেখতে হয়ে যায়। ত্বক হয়ে যায় রুক্ষ ও মোটা। এই ভিটামিনের ঘাটতিতে কমে যেতে পারে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা।
ভিটামিন ডি: এই ভিটামিন হাড়ে ক্যালশিয়াম জমা হতে সাহায্য করে। এই ভিটামিনের অভাবে কম বয়সে রিকেট (হাড় বেঁকে যাওয়া) এবং বড় বয়সে অস্টিওম্যালেশিয়া (হাড়ের ক্ষয়) রোগ হতে পারে। দেখা গিয়েছে দেহে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না থাকলে বাচ্চাদের হাড়ে দুর্বলতা দেখা দেয়। সামান্য চোটেই হাড় বেঁকে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে, ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে ও সংক্রমণ প্রতিরোধে ভিটামিন ডি-এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
ভিটামিন ই: সেল মেমব্রেন বা কোষের প্রাচীর তৈরি করতে সাহায্য করে ভিটামিন ই। এই ভিটামিনের অভাবে বাচ্চাদের মধ্যে হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু গবেষণায় আবার দাবি করা হচ্ছে, শরীরে পর্যাপ্ত মাত্রায় ভিটামিন-ই থাকলে তা ত্বকের ঔজ্বল্য বাড়াতে সাহায্য করে। আবার কিছু গবেষণার ফলাফল থেকে মনে করা হচ্ছে পর্যাপ্ত মাত্রায় ভিটামিন ই না পেলে স্নায়ুর সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে হাতে পায়ে অবশ ভাব, হাত পা ঝিন ঝিন করার মতো উপসর্গ প্রকাশ পায়। এছাড়া ভিটামন ই-এর অভাবে রেটিনার রোগ, প্রজননগত সমস্যাও হতে পারে।
ভিটামিন কে: রক্ত তঞ্চনের জন্য বেশি কিছু উপাদানের প্রয়োজন হয়। সেই উপাদান তৈরিতে সাহায্য করে ভিটামিন কে। শরীরে ভিটামিন কে –এর ঘাটতি হলে রক্ত জমাট বাঁধতে চায় না। এই কারণে শরীরে ক্ষত তৈরি হলে রক্তপাত শুরু হয় ও রক্তপাত থামতে চায় না!

জলে দ্রবণীয় ভিটামিন
জলে দ্রবণীয় ভিটামিন হল সি, এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের অন্তর্গত ভিটামিন। প্রতিদিনের রেচনকার্যের সঙ্গে দেহ থেকে বেরিয়ে যায় ভিটামিনগুলি। এই ধরনের ভিটামিন শরীরে কিছু পরিমাণে জমা হয়ে থাকতে পারে না। তাই খাদ্যের মাধ্যমে প্রতিদিন ভিটামিনগুলি গ্রহণ করা দরকার।
ভিটামিন সি: এই ভিটামিনের অভাবে হয় স্কার্ভি রোগ। এই অসুখে মাড়ি ও দাঁতের গোড়া থেকে রক্তপাত হয়। এছাড়া ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। ক্ষতপূরণেও সাহায্য করে ভিটামিন সি। এমনকী চুলের স্বাস্থ্যরক্ষার ক্ষেত্রেও এই ভিটামিনের ভূমিকা রয়েছে।
ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স
এই ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, বি৭, বি৯, বি১২। মনে রাখতে হবে, প্রত্যেকটি ভিটামিনের আলাদা আলাদা ভূমিকা রয়েছে মানব দেহে। সবগুলি ভিটামিন জলে দ্রবণীয়। প্রতিদিনই এই ভিটামিনগুলি খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করা দরকার। তবে সামান্য মাত্রাতে হলেও ভিটামিন বি ১২ শরীরে সঞ্চিত হওয়ার ক্ষমতা রাখে।
বি১ বা থায়ামিন: এই ভিটামিনের অভাবে হয় বেরিবেরি রোগ। বেরিবেরি আবার দুই রকমের। একধরনের রোগে ওজন বাড়ে সঙ্গে হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। আবার আর এক ধরনের বেরিবেরি রোগে শরীর কৃশকায় হয়ে পড়ে ও স্নায়ুর সমস্যা দেখা যায়। রোগীর ওয়েরনিকি’স এনসেপালোপ্যাথি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রোগীর স্মৃতিভ্রমের মতো সমস্যা দেখা যায়। রোগী ভুল বকতে থাকেন। রোগীর আচরণে অস্থিরতা দেখা যায়।
ভিটামিন বি২ বা রাইবোফ্ল্যাভিন: জিভে ঘা বা গ্লসাইটিস, ঠোঁটের কোণে ঘা বা অ্যাঙ্গুলার কেলাইটিস হতে পারে। এছাড়া মুখগহ্বরেও আলসার দেখা দেয়। এই ভিটামিনের অভাবে হতে পারে সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের মতো ত্বকের সমস্যাও।
বি৩ বা নায়াসিন: পেলেগ্রা রোগ দেখা দেয় এই ভিটামিনের অভাবে। রোগের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে ত্বকের সমস্যা। এই রোগী রোদে বেরলে ত্বকের রোগের কারণে চামড়া তামাটে রং ধারণ করে। এছাড়া স্মৃতিভ্রম ও ডায়ারিয়াও হল পেলেগ্রার লক্ষণ।
কিছু কিছু গবেষণায় বলা হচ্ছে চুলের বৃদ্ধিতে ও স্বাস্থ্যরক্ষায় সাহায্য করে এই ভিটামিন।
বি৫ বা প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড: পায়ে জ্বালা ভাব দেখা যায়।
ভিটামিন বি৬ বা পাইরিডক্সিন: এই ভিটামিনের অভাবেও জিভে ঘা, অ্যানিমিয়, স্নায়ুর সমস্যা দেখা দিতে পারে। হতে পারে সেবোরিক ডার্মাটাইটিসি বা খুশকি ও চুল পড়ার সমস্যা।
ভিটামিন বি৭ বা বায়োটিন: কিছু কিছু গবেষণাও দাবি করা হয়, চুল, ত্বক, নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এই ভিটামিন সাহায্য করে।
বি৯ বা ফোলিক অ্যাসিড: লোহিত রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে এই ভিটামিন। ফলে ফোলিক অ্যাসিডের অভাবে একাধারে মায়ের রক্তাল্পতার সমস্যা তো হয়ই সঙ্গে গর্ভস্থ সন্তানেরও বিকাশ ঘটে না। এমনকী ফোলিক অ্যাসিডের অভাবে বাচ্চার স্নায়ুতন্ত্র সঠিকভাবে তৈরি হয় না। সমস্যা দেখা দেয় বাচ্চার সুষুম্না কাণ্ডের গঠনে। এছাড়া সময়ের আগে বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার আশঙ্কাও রয়ে যায়।
বাচ্চার জন্মের সময় ওজনও কম হতে পারে। ফোলিক অ্যাসিড, মায়ের স্বাস্থ্যের জন্যও বিশেষ উপযোগী, কারণ ফোলিক অ্যাসিড গর্ভাবস্থায় হৃদরোগের মতো জটিলতা দূরে রাখতে সাহায্য করে। তাই খুব ভালো হয় পরিকল্পনা করে সন্তানধারণ করতে পারলে। সেক্ষেত্রে সন্তানধারণের তিনমাস আগে থেকে ফোলিক অ্যাসিড খাওয়া শুরু করতে পারনে মহিলারা। এভাবে বিভিন্ন অসুখের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়।
বি১২ বা সায়ানোকোবালামিন : এই ভিটামিনের অভাবেও রক্তাল্পতার সমস্যা হয়। ফোলিক অ্যাসিড ও বি১২ এর অভাবে যে অ্যানিমিয়া হয় তাকে মেগলোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া বলে। কারণ আমাদের রক্তে যে লোহিত রক্তকণিকা থাকে সেগুলির আকার বড় হয়ে যায়। এছাড়া বি১২ এর অভাবে রোগীর স্নায়ুর সমস্যা ও স্মৃতিভ্রম দেখা দিতে পারে।
হতে পারে নিউরোপ্যাথি। এই রোগে হাতে ও পায়ে জ্বালা ভাব দেখা যায়। এছাড়া দেখা দিতে পারে সেনসরি অ্যাটাকশিয়া বা শারীরিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সমস্যা। এই রোগে চলাফেরার সময় রোগীর মাটিতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

নতুন ভিটামিন
কিছু কিছু গবেষণা চলছে নতুন ভিটামিন নিয়ে। এভাবেই উঠে এসেছে ‘ভিটামিন এফ’-এর নাম। মনে করা হচ্ছে এই ভিটামিন স্থূলত্ব প্রতিরোধ করে, হার্ট এবং ব্রেনের কার্যকারিতা বজায় রাখে। তবে এখনও ভিটামিন এফ নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট
সব ভিটামিনেরই সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায় ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের আকারে। তবে নিজের থেকে কোনও ভিটামিনের সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত নয়। বরং তাজা সাকসব্জি ও খাদ্যবস্তু থেকেই ভিটামিন সংগ্রহ করা উচিত আমাদের। কারণ ভিটামিনের আধিক্যেও শরীরে বিভিন্ন অসুখ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। সূত্রঃ বর্তমান

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.